Published : 04 Jul 2025, 09:21 PM
আগের চড়া দামেই শুক্রবার চাল বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ‘বিসমিল্লাহ রাইস মিল’ এর বিক্রেতা আনিসুর রহমান। সপ্তাহের ব্যবধানে দামে খুব তফাত না থাকার কথা বললেও কয়েক ধরনের চালে কেজিতে দুই-তিন টাকা বাড়ার তথ্য দিলেন তিনি।
মিল মালিকদের ওপর দায় চাপিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ বিক্রেতা বলেন, “তারা চালের দাম বাড়ালে খুচরা পর্যায়েও বেড়ে যায়। মিল মালিকরা হঠাৎ করেই চালের দাম বাড়িয়ে দেয়।”
জুনে কোরবানির ঈদের পর থেকেই বাজারে চালের দাম চড়া। এর জন্য পাইকারি বিক্রেতারা দায় দিচ্ছেন মিল মালিকদের।
চালের পাশাপাশি শুক্রবার সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দামও দেখা গেল বেশি। এর আগের সপ্তাহে এ দুই প্রকারের মুরগির দাম কিছুটা কমে ছিল। তবে এ সপ্তাহে কমেছে ডিমের দাম। আর সবজির বাজার আগের সপ্তাহের মতই চড়া; দাম বেড়েছে কয়েকটিতে।
শুক্রবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ সংলগ্ন কাঁচাবাজার, কৃষি মার্কেট, টাউন হল খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র মিলেছে।
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খাবারের তালিকায় সাধারণত মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল রাখেন। আর এ দুই ধরনের চালের দামই বাড়তি। শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেটের প্রকার ও মানভেদে প্রতি কেজি ৭৬ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৭৬ থেকে ৮২ টাকা।
ভালো মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে, যা আগের সপ্তাহে ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহে ইশান রয়েল ব্র্যান্ডের নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি ৮২ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে দাম পড়ছে ৮৪ টাকা। টাইগার ব্রান্ডের নাজিরশাইল চাল ৭৮ টাকা ৫০ পয়সায় দরে বিক্রি হলেও শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৮০-৮২ টাকায়।
মোটা জাতের ব্রি-আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫৮ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এ দরেই বিক্রি হয়েছে। বাসমতি চাল আগের সপ্তাহের মত ৯৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতের সুগন্ধি বাসমতি চাল ৪২০ ও পাকিস্তানি বাসমতি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারিভোগ সুগন্ধি আগের সপ্তাহের মত ১১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মোটা চাল স্বর্ণা প্রতি কেজি ৫৫-৫৮ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের চাল ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগের সপ্তাহের দামের সঙ্গে এ সপ্তাহে তফাত নেই।
দাম বাড়তি সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির
এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত চাচ্ছেন বিক্রেতারা। সাদা ও লাল লেয়ার মুরগির দাম আগের মত থাকলেও দেশি মুরগির দাম কিছুইটা কমেছে।
এদিন সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়; আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি হলেও আগের সপ্তাহে ছিল ১৫০-১৬০ টাকা।
লাল লেয়ার ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। সাদা লেয়ার আগের সপ্তাহে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, শুক্রবারও একই দামে বিক্রি হয়েছে।
দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়। আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা দরে।
কমেছে ডিমের দাম
মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম কমেছে। শুক্রবার বাজারে খামারের মুরগির লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ডজন প্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়, আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। আর খামারের সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১০০ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়।
শুক্রবার প্রতি ডজন দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা দরে। হাঁসের ডিম ২০০ থেকে ২১০ টাকা ও কোয়েলের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা ডজন।
বাজারে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমেছে। এদিন গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি দরে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা। বড় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগের সপ্তাহে ছিল ৭০ টাকা। মাঝারি ও ছোট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, আগের সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা।
মোটা আদা ১৬০-১৭০ টাকা ও চিকন আদা ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বড় রসুন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ও ছোট রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কমছে না সবজির দাম
দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় শুক্রবার সবজির বাজারে দামে খুব বেশি হেরফের দেখা গেল না। সবজির বাজার চড়ে আছে কোরবানির ঈদের পর থেকেই। এর মধ্যে শুক্রবার বেড়েছে করলা, ঢেঁড়শ ও টমেটোর দাম।
এদিন মোহাম্মদপুরে করলার প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। ঢেঁড়স আগের সপ্তাহে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও দোকানভেদে ৬০ থেকে ৮০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
আগের সপ্তাহের মতই চিচিঙ্গা ও ঝিঙা ৬০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৮০ ও ধুন্দল ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে শুক্রবার।
অপরদিকে কাঁকরোল ৪০ টাকা, কচুরমুখী ৯০ থেকে ১০০, সজনে ১০০ থেকে ১২০ ও ঝিঙা আগের মতই ৬০ টাকা কেজি দরে মিলছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৫০ ও শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয় শুক্রবার।
লেবুর হালি প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগের সপ্তাহে ছিল ২৫-৪০ টাকা।
লাল শাক আগের মতই ১০ টাকা আঁটি। এছাড়া লাউ শাক ৪০ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ডাটা শাক ১০ টাকা, নাপা শাক ২০ টাকা ও ঢেঁকি শাক ২৫ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ সংলগ্ন কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে এসেছিলেন চাকরিজীবী শহেলা খাতুন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সবজির দাম তো অনেক বেশি। সপ্তাহের এ দিন (শুক্রবার) মনে হয় সবজির দাম বেড়ে যায়।
“করলা তো দুই সপ্তাহ আগে কিনেছিলাম ৮০ টাকা দিয়ে। আজকে চাচ্ছে ১২০ টাকা করে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে তো বিপদ।”
শুক্রবার মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই কেজি বা তার কাছাকাছি আকারের রুই মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৪৫০ থেকে ৪৬০ টাকা, মলা ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা, বড় টেংড়া ৫৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০-৫০০, আইড় ৬৫০-৭৫০ টাকা, শিং ৪৫০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।