Published : 20 May 2025, 10:50 PM
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আলাদা করার অধ্যাদেশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হয়নি দাবি করে নিজ নিজ দপ্তরে 'অবস্থান কর্মসূচি' ঘোষণা করেছে 'এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ'।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, এনবিআর যেভাবে দুই ভাগ করা হয়েছে, সেভাবেই রাখার ব্যাপারে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রতিনিধিরা 'অনড়' থাকায় তারা নতুন করে কর্মসূচি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলেছে, বুধবার দুপুর ১২টায় রাজস্ব ভবন প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিং হবে। সেখানে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
আর সকাল ৯টা থেকে ব্রিফিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে। ঢাকায় রাজস্ব ভবনের নিচ তলায় এবং ঢাকার বাইরে সব দপ্তরে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে এ প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়।
দাবি আদায়ে পাঁচ দিন দেশের সব কাস্টম স্টেশন, হাউজ, ভ্যাট কমিশনারেট ও কর অঞ্চলে কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করেন তারা।
তাদের এ কর্মসূচির মধ্যে মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থ উপদেষ্টা।
বৈঠকের বিষয়ে সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলেছে, সেটি ‘ফলপ্রসূ হয়নি’।
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল ছিল।
অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষের এ বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ছাড়া আরও দুজন উপদেষ্টা ছিলেন।
রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তিন প্রাক্তন সদস্য ও এনবিআর চেয়ারম্যানও ছিলেন সেখানে।
বৈঠকের পর কেউ কেউ অভিযোগ করেন, সেখানে তাদের ‘কাউকে কথাই বলতে দেওয়া হয়নি'। ‘ডেকে নিয়ে অপমান করার' অভিযোগও ওঠে।
বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, এনবিআর কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট কি না?
জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি আন্দোলন থেকে সরে আসেন৷ তারা কী বলেছে, সেটায় আমার যায় আসে না৷”
এনবিআরে যে দুটি বিভাগ করা হয়েছে, সেগুলোর কাজ কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আগে গেজেট করতে হবে৷ গেজেটের আগেও অনেক কাজ আছে৷”
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এনবিআর পৃথকের বিষয়টি বাস্তবায়নের পর্যায় রয়েছে৷ অনেক কাজ আছে এসব নিয়ে। সে সময় আমরা দেখব কতটুকু তাদের দাবি নেওয়া যায়। কিন্তু তাদের বিষয়গুলো যেভাবেই হোক, যতটুকু সম্ভব, অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করব।”
এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
অধ্যাদেশের খসড়া অনলাইনে এলে তা দেখে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই দুই ক্যাডারদের অ্যাসোসিয়েশন এটি বাতিলের দাবি তোলে।
এর মধ্যে এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুই ভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এটি কার্যকর করার তারিখ ঘোষণা করবে।
অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ৪(৪) এ বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের পদসমূহ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে “কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন” যুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞ কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদসমূহে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে।
বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাদের নির্ধারিত পদ।
অধ্যাদেশে নীতির সচিব হিসেবে 'উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে' নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এনবিআর বিলুপ্তির ফলে এর বর্তমান সাংগঠনিক জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে সংযুক্ত হবে। আর দুই বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো কেমন হবে, তার সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানাবে।
এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে প্রথম দফায় বুধবার, বৃহস্পতি ও শনিবার কলম বিরতি পালন করেন তারা। একই কর্মসূচি ছিল পরের দিনও। তারপর তৃতীয় দফায় সোমবারের কর্মসূচি বাড়ানো হয়।
তবে মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক সামনে রেখে সোমবার আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।