Published : 19 Jun 2024, 11:26 PM
কোরবানির ঈদের দুই দিনে ট্যানারি মালিকরা প্রায় পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছে, যা গতবছরের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ বেশি। গত বছর কুরবানির ঈদে তারা প্রায় তিন লাখ কাঁচা সংগ্রহ করেছিলেন।
বুধবার দুপুরে ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন, বিটিএ এর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভালো মানের কাঁচা চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে কিনছি।’’
বিটিএ চেয়ারম্যান জানান, এবার বিটিএ ৮০ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ লাখ কম।
সরকারি হিসাবে চলতি বছর সারা দেশে ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৯টি গরু, ১ লাখ ১২ হাজার ৯১৮টি মহিষ।
আরও আছে ৫০ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৯ ছাগল, ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৪৯ ভেড়া এবং ১ হাজার ২৭৩টি অন্যান্য পশু।
এই হিসাব হাটগুলোতে বিক্রি হওয়া পশুর হাসিলের তথ্য নিয়ে করা হয়। এর বাইরে খামার বা গ্রাম বা রাস্তা থেকে যে পশু কেনা হয়, সেটি হিসাবের বাইরে থাকে।
পশুর চামড়ার মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে ছাগলের চামড়া সংগ্রহে অনীহা দেখা যাচ্ছে মৌসুমি ক্রেতা ও আড়ৎদারদের মধ্যে। তারা ট্যানারির কাছে বিক্রি করেন সেই চামড়া।
কোরবানির ঈদের সময়ে সারা বছরের চাহিদার অর্ধেক পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। পশুর চামড়া তিন থেকে চার বার হাতবদল হয়ে ট্যানারিতে পৌঁছায় জানিয়ে শাহীন আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং ট্যানারি মালিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের ঈদে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। সময় মত কাঁচা চামড়ায় লবণ প্রয়োগেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এতে কাঁচা চামড়ার গুণগত মান দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।”
পশুর দেহ থেকে চামড়া পৃথক করার তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে লবণ মাখিয়ে সংরক্ষণ করলে গুণগত মান ভালো থাকে। যথাযথভাবে চামড়া না ছড়ানো, অদক্ষ হাতে চামড়া সংরক্ষণ ও যথা সময়ে লবণ না মেশানোতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ চামড়া নষ্ট হচ্ছে।
এজন্য সরকারের কাছে নীতি সহায়তার পাশাপাশি চামড়া শিল্পের উন্নয়নে বিভাগীয় শহর ও পশুর হাট এলাকায় আধুনিক কসাইখানা স্থাপনের দাবিও করেন বিটিএ চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘‘মেশিনের মাধ্যমে চামড়া ছাড়ানো হলে তার গুণগত মান অক্ষুণ্ন থাকে। এতে সময়ও বেঁচে যায়।’’
বাংলাদেশে মাত্র দুটি ট্যানারি চামড়া রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) এর পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছে জানিয়ে বিটিএ চেয়ারম্যান বলেন, “পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা ও চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সাভারের ট্যানারি শিল্পে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি), কমন ক্রোম রিকভারি ইউনিট, সিসিআরইউ এবং সলিড ওয়েস্টেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পুরোটা চালু হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ তিনটি এখনো কার্যকর হয়নি।’’
এ কারণে ২৫টি প্রতিষ্ঠান অন্যান্য শর্তে এগিয়ে থাকলেও এলডব্লিউজি ছাড়পত্র পাচ্ছে না বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এই ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত আয় করতে পারছেন না।
২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ১২২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে খাতটি থেকে রপ্তানি হয়েছে ৮৭ কোটি ২৪ লাখ ডলার।