Published : 11 Aug 2023, 05:11 PM
ডিমের দামে হঠাৎ উল্লম্ফনের মধ্যেই আমিষের আরেক উপাদান মাছের দামও খানিকটা চড়েছে। বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর ইলিশ বেশ ধরা পড়লেও ‘নদীতে পানি বাড়ায় ধরা পড়ছে কম’ এমন অজুহাতে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন বেশি। ফলে ইলিশের স্বাদ নিতে বেশ ভাবতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
সেইসঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি সোনালি মুরগি, আদা আর পেঁয়াজ-রসুনের দাম; তবে উত্তাপ বেশি জিরার দামে।
ছুটির দিন শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে পুরো মাসের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. আলিম। মায়ের সঙ্গে বছর দশেক ধরে থাকেন তেজগাঁওয়ের তেজকুনি পাড়ায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আলিম বলেন, “আগে মাছ কিনতে গেছিলাম, সব মাছের দাম বেশি। ৫৫০ টাকা দিয়ে এক কেজি বড় কাতল, ১৮০ টাকা করে দুই কেজি তেলাপিয়া নিলাম। সোনালি মুরগী নিলাম, তার দামও আগের চেয়ে বাড়ছে।
“জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা করবেই, কিন্তু সেই ওঠানামাটা একটু স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলে ধনী-গরীব সবার জন্য ভালো হয়।”
সংসারের সারা মাসের বাজার করতে মগবাজার থেকে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন ইকবাল হোসেন। তবে বাজারে জিনিসপত্রের দাম দেখে খানিকটা ‘হতাশ’ তিনি।
“কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ডিমসহ সবকিছুর দামই তো বাড়তি। প্রতি সপ্তাহে কিছু না কিছুর দাম বাড়েই। এভাবে চললে আমার মত মধ্যবিত্তরা না খেয়ে মরবে,” বললেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চাকুরে।
কারওয়ান বাজারে মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। তার চেয়ে একটু ছোট আকারের ইলিশের দাম ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে বড় ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা, ছোট ইলিশ ছিল ১ হাজার টাকা।
ইলিশের বাড়িতে দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা রবিউল বলেন, “এখন পানি বাড়ায় নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম।”
কারওয়ান বাজারে বড় সাইজের আইড় মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে। বড় কাতল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা। বড় রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি।
ঢাকার বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতিটি ডিমের দাম ১৪ টাকায় গিয়ে ঠেকে; প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছিল ৫৫ টাকায়। ডজন হিসাবে ডিমের দাম উঠে গেছে ১৬৫ টাকায়।
গত বছরের এই সময়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিল। গত মাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। এরপরই বাড়তে থাকে।
শুক্রবার লাল ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৬০ টাকায় বিক্রি করার কথা জানান কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের তরুণ ব্যবসায়ী মুহিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, মুরগির সাদা ডিম একটু কমে ডজন প্রতি ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও এই ডিমের দাম গত সপ্তাহে ছিল ১৪৫ টাকা ডজন। অপরদিকে হাঁসের ডিম ডজনপ্রতি ২১০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
মুরগি বিক্রেতা মো. সোহাগ জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম না বাড়লেও সোনালির দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
বাড়তি জিরার দাম
মসলার দোকানে আদা-রসুনের বাড়তি দামের সঙ্গে বেশি চড়েছে জিরার দাম। কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি ৯০০-৯৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫০-১১৬০ টাকায়।
কিচেন মার্কেটের দোকানি মুদি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “সপ্তাহের ব্যবধানে সবকিছুর দাম ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে। শুধু জিরার দামটা বাড়তি। কেজি প্রতি জিরা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৬০ টাকায়।
“আগে জিরার দাম ছিল ৯০০-৯৫০ টাকার মধ্যে। কিন্তু এখন আমাদের কেনা দামই বেশি পড়ে যায়।”
আরেক মুদি দোকানি জাকির হোসেন বলেন, দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। কেজি প্রতি রসুন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ২০০ টাকা। আদার দামও বেশি। এক কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়, আগে ছিল ১৮০ টাকা।
দোকানি জয়নাল আবেদিন বলেন, “বড় মসুর ডাল আমরা বেচতেছি এখন ৯০ টাকায়। দেশিটার দাম ১২৫ টাকা কেজি, ১৫ দিন আগেও দাম ছিল ১৪০ টাকা। আটার দামও কমছে। আগে দুই কেজি আটা ছিল ১৬০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।”
এদিকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের প্যাকেটজাত দামের চেয়ে খানিকটা কমে বিক্রির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।
তেলের দাম কমতির দিকে জানিয়ে দোকানি জয়নাল বলেন, “এখন পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৪০ টাকা। তবে তেলের গায়ের রেট কিন্তু ৮৭৪ টাকা।”
তার ভাষ্য, “আমরা ৮৪০ টাকায় বেচতেছি। কারণ আমরা চাইতেছি, লাভ কম করব, মাল বেশি বেচব।”
কাঁচাবাচার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বড় শশার দাম ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা। চীনা গাজর ১২০ টাকা এবং দেশি গাজর দাম ৬০ টাকা। টমেটো প্রতি কেজি ২২০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, পটল ৬০ টাকা এবং কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা জুয়েল রানা বলেন, “সবজির দাম মোটামুটি আগের মতই আছে। শুধু মরিচের দামটা হঠাৎ করে বাড়ছে।”
গত সপ্তাহে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা করে বিক্রি করেছেন বলে জানান জুয়েল।