Published : 15 May 2025, 12:29 PM
তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কেই রাত কাটিয়েছেন। রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করা শিক্ষকরাও রাতভর সেখানে অবস্থান করেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবারও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের এলাকায় তারা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এর মধ্যে রয়েছে- ‘ভুজুংভাজুং বুঝি না, লংমার্চ টু যমুনা’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত দে, তবু আমাদের আবাসন দে’, ‘জ্বালো রে জ্বালো. আগুন জ্বালো’, ‘আর নয় হেলাফেলা, এবার হবে আসল খেলা’, ‘বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জবিয়ান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘শিক্ষকদের অপমান, সইবে না রে জবিয়ান', ‘আমার ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’সহ নানা স্লোগান।
ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এ কে এম রাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ না হলে আর নয়। জগন্নাথ থাকলে পূর্ণাঙ্গ হিসেবেই থাকবে, না হয় এই কলেজরূপী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হোক।
“গতকাল সারাদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন করেছি- কেউ খোঁজ নেননি, আর একটা ইস্যু তৈরি হতে না হতেই ফেইসবুকে আপনাদের সরব উপস্থিতি (উপদেষ্টাকে বোতল ছোড়া নিয়ে মন্তব্য) আমাদের হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি করেছে। আমরা আমাদের তিনদফা দাবির সুস্পষ্ট লিখিত বাস্তবায়ন ছাড়া রাজপথ ছাড়ছি না।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তথাকথিত উপদেষ্টাদের মদদে আমাদের সম্মানিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে- তা একটি রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। রাতে উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্য ছিলো পুরোপুরি ব্যক্তিগত আক্রোশের প্রতিফলন। সরকারের একটি দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এরকম বক্তব্য কীভাবে দেওয়া যায়?”
ছাত্রদল নেতা সামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাতভর এখানের সড়কেই রাত কাটিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে আরও শতাধিক রাত্রি যাপন করতে পারব।
“জগন্নাথ শিক্ষার্থীদের সেই এনার্জি আছে। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট লিখিত বক্তব্য ছাড়া আমরা রাজিপথ ছাড়ছি না।”
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো-
১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে;
২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে;
৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিন দফা দাবি নিয়ে বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও দপ্তর যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিলটি শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতি বাজার, বংশাল মোড় হয়ে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে এলে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই ব্যারিকেড ভেঙে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে এলে আবারও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সেখানেও তাদের ঠেকাতে পারেনি পুলিশ। এরপর একে একে সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাই কোর্ট, মৎস্য ভবনের মোড়ের বাধা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসেন তারা।
মিছিলটি প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এলে সেখানে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশের হামলায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহতের খবর পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে আহত অন্তত পঁচিশজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এসময় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে কাকরাইল মসজিদে আশ্রয় নেন। এর কিছু সময় পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি শেষে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুনরায় যমুনা অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। এর মধ্যে পুলিশের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যমুনায় যান। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ ওঠে।
এ পরিস্থিতিতে রাত ৮টা থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কাকরাইল মসজিদ মোড় ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন।