Published : 18 May 2025, 09:56 PM
স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো দেওয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগে অধিভুক্তি বাতিল হওয়া রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসকের দায়িত্ব পাচ্ছেন অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া এ শিক্ষককে আবার আগামী দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এদিকে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় সমকক্ষ প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো দিতে রূপরেখা প্রণয়ন কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান রোববার রাতে বলেছেন, অধ্যাপক ইলিয়াস সাত কলেজের প্রশাসক হতে যাচ্ছেন। আর ঢাকা কলেজকে অন্তবর্তী প্রশাসনের কেন্দ্র নির্বাচন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
“দুই-এক দিনের মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করে আদেশ জারি করবে।”
অধ্যাপক ইলিয়াসের ভাষ্য, তাকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর ঢাকা কলেজকে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কেন্দ্র করার প্রস্তাব করেছে কমিটি। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ পদে যিনি থাকবেন তিনি অন্তর্বর্তী প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন।
রোববার অধ্যক্ষ পদে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে এসেছি। সোমবার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করব।”
এর আগে শনিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে রোববারের মধ্যে সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছিলেন তা না হলে সোমবার থেকে তারা ফের আন্দোলনে নামবেন।
তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা আসায় সোমবারের জন্য কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের ফোকাল পার্সন ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান।
তিনি রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। অধ্যাপক ইলিয়াস স্যারকে অন্তবর্তী প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়ার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে। শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষককে অন্তর্বর্তী প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়ায় আমরা খুশি। তাই সোমবার কোন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি।
“আমাদের পক্ষ থেকে আর একটা আল্টিমেটাম ছিল, ১৬ জুনের মধ্যে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে অধ্যাদেশ জারির দাবি জানানো হয়েছিল। আমার এখন অধ্যাদেশ জারির অপেক্ষায় আছি।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হঠাৎ করেই কলেজগুলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল হয়। ফলে ভেস্তে গেছে চলতি শিক্ষাবর্ষে সাত কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া।
গত ২৭ জানুয়ারি যখন ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত আসে, তখন চলছিল ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন; যা পরে বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে সাত কলেজকে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের আগে কলেজগুলোর দায়িত্ব নিতে একটি একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে ইউজিসির পক্ষ থেকে।
বর্তমান শিক্ষার্থীদের একাডেমিক দায়িত্ব আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিলেও নতুন শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ওপর বর্তাবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউজিসির পাঠানো ওই প্রস্তাবনা গত ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষার্থীরাও সেশন জটের শঙ্কা কাটাতে দ্রুত অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।