Published : 30 Apr 2025, 01:44 AM
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-ইউআইইউ অনির্দিষ্টকাল বন্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।
মঙ্গলবার সমিতি বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি হঠাৎ বন্ধের ফলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে দ্রুত একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে-ইউজিসি আবেদন করা হয়েছে।
অপরদিকে সার্বিক ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও এ কমিটি 'পক্ষপাতমূলক' বলে দাবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ইউআইইউ থেকে উপাচার্য, ২৪ জন ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরপর গত রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির উদ্বেগ
মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান ও মহাসচিব ইশতিয়াক আবেদীন ইউআইইউতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা ও যৌক্তিক দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে উপস্থাপনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
“কোনো কারণে যৌক্তিক সমাধান না হলে, অংশীজন প্রতিষ্ঠান এবং রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবহিত করার সুযোগ রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনায় শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট এবং শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়া কখনোই কাম্য নয়।”
দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাবোধের সুনাম সুপ্রতিষ্ঠিত মন্তব্য করে সমিতি বলছে, "যেকোনো ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ঘটনায় তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন, শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট, শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ কিংবা প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক ঘটনা এড়াতে শিক্ষার্থীদের সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে অধ্যবসায়, শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।"
অনুসন্ধান কমিটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইসবুক পেইজে সোমবার এক বিবৃতিতে সার্বিক ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ইউআইইউর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের সহযোগী অধ্যাপক মফিজুল হক মাসুমকে সদস্যসচিব এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিদ মুনিরকে সদস্য করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, "সাম্প্রতিক ঘটনা এবং অস্থিরতার একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং নিরপেক্ষ অনুসন্ধানের জন্য কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।“
চালুর দাবি শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে ইউআইইউর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তরফে এদিন ইউজিসিতে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।
সেখানে সিইসি বিভাগের শিক্ষার্থী ফায়েজ উদ্দিন খান বলেন, "আমরা চাই না আমাদের ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতির ভেতরে আমাদের এক সপ্তাহ লস যাক।
"ইউজিসি আমাদের আশ্বস্ত করেছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করে আমাদের ইউনিভার্সিটি খুলে দেবে।"
এক শিক্ষার্থীর মিডটার্ম দিতে না পারা, মিডটার্ম পরীক্ষার সময় কমানো এবং শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ইম্প্রুভমেন্ট ফি কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও আগের মত ক্রেডিট প্রতি ১৫০০ টাকা নেওয়ায় শনিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।
তারা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ নুরুল হুদার পদত্যাগও দাবি করেন।
পরে প্রশাসনের সাড়া না পাওয়ায় পদত্যাগ দাবি করে উপাচার্যসহ অন্যান্য শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রাতে উপাচার্য এবং ১১ জন বিভাগীয় প্রধান একযোগে পদত্যাগ করেন।
পরদিন রোববার উপাচার্য আবুল কাসেম মিয়া ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান নুরুল হুদা ছাড়া বাকি ১০ বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ প্রত্যাহারের দাবিতে ফের আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
ওইদিন রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইসবুক পেইজে।
এরপর রোববার মধ্যরাতে আরেক পোস্টে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৪ জন ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালক করেছেন।
আরও পড়ুন