Published : 18 May 2025, 04:41 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার এবং উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
রোববার দুপুর ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ভিসি চত্বর হয়ে কলা অনুষদের সামনে অপরাজেয় বাংলায় গিয়ে শেষ হয়।
এসময় ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘খুনি কেন বাইরে, প্রশাসন কী করে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, শাহবাগ থানা জবাব চাই’সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, “গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেই সাম্য হাসিনাকে ‘খুনি হাসিনা’ বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিত, সেই সাম্য আজ আমাদের মাঝে নেই।
“যেই প্রশাসন রক্তের উপর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই প্রশাসনের আন্ডারে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে দুটি খুন সংগঠিত হয়েছে। এছাড়াও আপনার সময়ে চারুকলায় ফ্যাসিস্টের মোটিভ পোড়ানো হয়েছে।”
উপাচার্যের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি সাম্য হত্যার রাতে ছাত্রদলের ভাইদের সাথে যেই বালখিল্য আচরণ করেছেন, তার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করবেন এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রক্টরের পদত্যাগ নিশ্চিত করবেন।”
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল আলম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়।
‘বিচারের নামে যেন প্রহসন না হয়’
এদিকে বেলা ১১টায় ‘বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রসমাজ’ ব্যানারে সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। তাতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ খান।
সেখানে নিহত সাম্যের বড় ভাই এস এম শরীফুল আলম বলেন, “রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে আমার ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে বিচারের নামে যেন কোনো প্রহসন বা কালক্ষেপণ না করা হয়। তাছাড়া কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই ফেঁসে না যায়।”
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ বলেন, “সাম্য হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন।
“আমরা আজ বিকাল ৩টায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসব। এখানে আমরা মামলার অগ্রগতি বিষয়ে কথা বলব এবং মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির কথা জানাব।”
পরে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থানা ঘেরাও করে। এসময় শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল শাহবাগ থানার ভেতরে প্রবেশ করলে সাম্য হত্যার অগ্রগতি নিয়ে কথা বলেন এসআই আসাদ।
তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “আমাদের কাজ চলছে। আমরা মোটামুটি সবাইকে শনাক্ত করে ফেলেছি। এখন তদন্তের খাতিরে বলতে পারছি না। আমাদেরকে একটু সময় দেন, আশা করি- আসামীদের শাস্তি নিশ্চিত করব।”
সাদা দলের মানববন্ধন
সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে বেলা ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করে বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। সেখান থেকে সাম্যের ‘প্রকৃত খুনিকে’ খুঁজে বের করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, “সাম্য মারা যায়নি, হত্যা করা হয়েছে। সাম্য হত্যার আজ পাঁচ দিন পূর্ণ হল।
“এই পাঁচ দিনে আমরা একটি আইওয়াশ অ্যারেস্ট দেখেছি- যা আমরা মানতে বাধ্য না। সাম্য হত্যার প্রকৃত হত্যাকারী কে, সেটি বের করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি।”