Published : 26 Jan 2025, 09:09 AM
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই দ্রুত রান তোলার তাড়া ও প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকি। সেই অনিশ্চিতায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন তিলাক ভার্মা। ভারতের তরুণ ব্যাটসম্যানের অপরাজেয় যাত্রা চলছেই। গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজ, হায়দরাবাদের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কাটাচ্ছেন স্বপ্নের মতো সময়।
তিলাকের অসাধারণ ইনিংসেই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ২ উইকেটে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ভারত। চেন্নাইয়ে শনিবার ১৬৬ রান তাড়ায় ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত। কিন্তু তিনে নামা তিলাক এক প্রান্ত থেকে এগিয়ে নেন দলকে। শেষ স্বীকৃতি ব্যাটসম্যান আকসার প্যাটেল যখন বিদায় নেন, তখনও ৪০ রান লাগে জয়ের জন্য। দুই বোলার আর্শদিপ সিং ও রাভি বিষ্ণইয়ের সঙ্গে ২০ রানের দুটি জুটিতে দলকে জয় এনে দেন তিলাক।
চাপের মধ্যে খেই না হারিয়ে অবিচল থেকে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন তিনি ৫৫ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। চারটি চার ও পাঁচটি ছক্কার ইনিংস খেলে যখন তিলাক দলকে জেতানোর উল্লাসে মেতে উঠেছেন, ধারাভাষ্যে তখন হার্শা ভোগলে বলছেন, “ভারতের এই জয় পুরোটাই তিলাকময়… ২২ বছর বয়স, কিন্তু খেলছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের মতো পরিণত ইনিংস…।”
এই নিয়ে টানা চারটি টি-টোয়েন্টি ইনিংসে অপরাজিত রইলেন তিলাক। সবশেষ আউট হয়েছিলেন তিনি গত ১০ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ২০ রান করে এইডেন মার্করামের বলে। এরপর অপরাজেয় ছুটে চলায় ১৭৪ বল খেলে তিনি করেছেন ৩১৮ রান, স্ট্রাইক রেট ১৮২.৭৫। এই সময়ে চার মেরেছেন ২৪টি, ছক্কা ২২টি।
চেন্নাইয়ে ম্যাচ-জেতানো অসাধারণ ইনিংসটি খেলে গ্যালারিভরা দর্শকের ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে যখন ড্রেসিং রুমে ফিরছেন তিলাক, মাঠে এসে তার সামনে মাথা নুইয়ে কুর্নিশ করে তালি দিয়ে বরণ করে নিলেন ভারতীয় অধিনায়ক সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ।
নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টির আগে এই সুরিয়াকুমারের কাছে গিয়েই তিলাক বলেছিলেন, তিনি ব্যাট করতে চান তিন নম্বরে। অধিনায়ক নিজে তিন থেকে সরে গিয়ে জায়গা করে দেন তরুণ প্রতিভাকে। সেই থেকে চলছে প্রতিদান দেওয়ার পালা।
তিন নম্বরে উঠেই ৫৬ বলে ১০৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিলাক। ম্যাচের পর কৃতজ্ঞতা জানান তিনি অধিনায়কের কাছে। পরের ম্যাচে নিজেকে আরও ছাড়িয়ে যান। এবার ১০ ছক্কায় ৪৭ বলে অপরাজিত ১২০!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে তেমন কিছু প্রয়োজন পড়েনি তার কাছ থেকে। সেদিন বিধ্বংসী ফর্মে থাকা আভিশেক শার্মাকে স্রেফ সঙ্গ দেন তিনি। ১৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন। এরপর চেন্নাইয়ে এই প্রায় একার লড়াইয়ে অসাধারণ জয়।
ম্যাচ শেষে ভারতের অধিনায়ক সুরিয়াকুমার বললেন, তরুণ ও অনভিজ্ঞ হলেও তিলাকের ব্যাটিং সবার জন্য শিক্ষনীয়।
“তিলাক যেভাবে ব্যাট করছে, খুবই খুশি আমি। ওর কাছ থেকে সবারই কিছু না কিছু শেখার আছে। ওর মতো একজন যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে খেলছে, এটা দেখাটা দারুণ।”
ম্যাচ-সেরা হয়ে তিলাক জানালেন, কোচ গৌতাম গাম্ভিরের পরামর্শ মাথায় রেখে খেলার চেষ্টা করেছেন তিনি।
“উইকেট ছিল দুই রকম গতির। একটার পর একটা উইকেট পড়ছিল। গতকালকে গৌতাম স্যারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল আমার। তিনি বলেছিলেন, ‘যেটাই হোক, তুমি পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করার চেষ্টা করবে। খোলা মন নিয়ে ব্যাট করা উচিত। দলের যদি ওভারপ্রতি ১০ রান করে লাগে, তাহলে আক্রমণ করতে হবে। যদি ওভারপ্রতি সাত-আট করে লাগে, তাহলে ওভারে একটি বাউন্ডারি মেরে বাকিটা এক-দুই রান করে নিয়ে শেষ পর্যন্ত থাকা উচিত।’ আমি সেটাই চেষ্টা করেছি।”
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি রাজকোটে মঙ্গলবার।