Published : 12 May 2025, 08:44 PM
হারতে বসা ম্যাচে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে আশা দেখালেন আকবর আলি। অনেকটা পথ এগিয়ে যাওয়ার পর ছক্কার খোঁজে সীমানায় দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায়ঘণ্টা বাজল তার। জয়ের জন্য তখনও ২০ বলে প্রয়োজন ৩৯ রান। উইকেট বাকি ৩টি। তখনই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন রকিবুল হাসান। ৯ নম্বরে নেমে যেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন বাঁহাতি স্পিনার। তিন ছক্কায় দলকে তিনি নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে।
আকবরের বিদায়ের পর শেষ তিন ওভারে ৩৮ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। টিয়ান ফন ফুরেনের শেষ বল ছক্কায় উড়িয়ে সমীকরণ ১২ বলে ২৭ রানে নামান রকিবুল। পরের ওভারে আন্দিলে মোগাকেনের বলে তিনি মারেন দুটি ছক্কা। শেষ বল তোফায়েল আহমেদ ছক্কায় ওড়ালে ওভার থেকে আসে ২০ রান। শেষ ওভারে এক-দুই করে নিয়েই ম্যাচ শেষ করে ফেলেন লেজের সারির দুই ব্যাটসম্যান।
রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সোমবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম এক দিনের বাংলাদেশের কাজটা সহজ ছিল না। কনর এস্তারহুইজেন ৭১ ও শেষ দিকে আন্দিলে সিমেলানের ঝড়ো ৬১ রানের সৌজন্যে ৮ উইকেটে ৩০১ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দল।
বড় লক্ষ্যে ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার মাহফিজুল ইসলাম। অন্যরা তেমন সমর্থন দিতে পারেনি তাকে। সাত নম্বরে নেমে আকবর ২৪ বলে ৪১ রান করে জাগান সম্ভাবনা। শেষ দিকে রকিবুল-তোফায়েলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দুই বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে যায় স্বাগতিকরা।
টস জিতে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মন্দ করেনি বাংলাদেশ। ৮০ রানের আগে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। তবে এরপর ছোট ছোট কার্যকর জুটিতে রানের চাকা সচল রাখেন পরের ব্যাটসম্যানরা।
চার নম্বরে নেমে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৯ বলে ৭১ রান করেন এস্তারহুইজেন। এছাড়া ত্রিশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন মিকা-এল প্রিন্স ও ডেওয়ান মারাইস। তবু তেমন বড় সংগ্রহের ভিত ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার।
৪৪তম ওভারে ২১৮ রানে সপ্তম উইকেট হারায় তারা। এরপর ঝড় তোলেন সিমেলানে ও ফন ফুরেন। দুজনের অষ্টম উইকেট জুটিতে মাত্র ৩৮ বলে আসে ৭৬ রান। শেষ ওভারে তিন ছক্কায় ২৩ রান খরচ করেন রিপন মন্ডল।
নতুন বলে বেশ ভালো বোলিং করলেও শেষ পর্যন্ত ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ৮৪ রান দেন রিপন। উইকেট নেন ৩টি। বাঁহাতি স্পিনে আহরার আমিন পান ২ উইকেট।
বড় লক্ষ্যে আগ্রাসী শুরু করেন জিসান আলম। নবম ওভারে পঞ্চাশ করে বাংলাদেশ।তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি জিসান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ছক্কার খোঁজে সীমানায় ধরা পড়েন তিনি। ৭ চারে ২৭ বলে করেন ৩১ রান।
আরেক ওপেনার মাহফিজুল একপ্রান্তে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন। তবে প্রিতম কুমার ও আরিফুল ইসলামের ধীরে ব্যাটিংয়ে বাড়তে থাকে চাপ। দলীয় একশ হওয়ার আগে ৩৫ বলে ১৭ রান করে ফেরেন প্রিতম। আরিফুল ৩৫ রান করতে খেলেন ৬৮ বল।
৫৭ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে তিন অঙ্কের দিকে এগোতে থাকেন মাহফিজুল। কিন্তু স্লোয়ার শর্ট বলে আগেই ব্যাট চালিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন ২১ বছর বয়সী ওপেনার। ৮৯ বলের ইনিংসে ৮ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
আহরার ও মাহফুজুর রহমান রাব্বি হতাশ করলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেটে তোফায়েলকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন আকবর। মিড উইকেট সীমানায় মারাইসের অসাধারণ ক্যাচে ফেরার আগে ৪ চার ও ২ ছক্কা মারেন স্বাগতিক অধিনায়ক।
পরে ডুবতে থাকা তরীর হাল ধরে ম্যাচ শেষ করেন রকিবুল ও তোফায়েল। ৩ ছক্কায় ১০ বলে ২৪ রান করেন রকিবুল। তোফায়েল ১টি করে চার-ছক্কায় করেন ২০ বলে ২৪ রান।
একই মাঠে বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং: ৫০ ওভারে ৩০১/৮ (মানাক ১৬, প্রিন্স ৩৫, ফন হার্ডিন ২২, এস্থাইজেন ৭১, মোগাকেন ০, মারাইস ৩১, ফরেস্টার ১৯, সিমেলানে ৬১, ফন ফুরেন ২৬*, মোকোয়েনা ৬*; রিপন ১০-২-৮৪-৩, তোফায়েল ৩-১-১৯-০, রকিবুল ১০-০-৩৯-১, রাব্বি ১০-০-৩৩-১, পায়েল ৬-০-৪৮-১, জিসান ২-০-১১-০, আহরার ৭-০-৫১-২, আরিফুল ২-০-১২-০)
বাংলাদেশ ইমার্জিং: ৪৯.৪ ওভারে ৩০২/৭ (মাহফিজুল ৮৭, জিসান ৩১, প্রিতম ১৭, আরিফুল ৩৬, আহরার ৮, রাব্বি ৫, আকবর ৪১, তোফায়েল ২৪*, রকিবুল ২৪*; ফরেস্টার ৬-০-২৮-০, ফুরেন ৭.৪-০-৫৬-০, মোকোয়েনা ৫-০-৩৫-০, এন্ডুয়ানওয়া ১০-০-৫৮-২, সিমেলানে ৫-০-৩২-১, হার্ডিন ১০-০-৫১-২, মোগাকেন ৬-০-৪১-২)
ফল: বাংলাদেশ ইমার্জিং ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহফিজুল ইসলাম