Published : 30 Jan 2025, 09:55 AM
অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার জন্য বিসিবি একাডেমি মাঠ থেকে বেরিয়ে এলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কাছেই থাকা সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় মজার ছলেই একজন বললেন, ‘এখানেই করে ফেলি।’ রসিকতা ধরতে পেরে উচ্চ হাসিতে মিরাজের উত্তর, ‘নাহ থাক… চলেন, আরাম করে কথা বলি।’
সদা হাস্যোজ্জ্বল মিরাজ বুধবার বলছিলেন আরামের কথা। আদতে সময়টা হতে পারে ব্যারামের। তাদের সামনে কঠিন পরীক্ষা! প্রতিটি ম্যাচই এখন তাদের বাঁচা-মরার লড়াই। মিরাজের চোখে, প্রতিটি ম্যাচ নকআউট।
চিটাগং কিংস ও ঢাকা ক্যাপিটালসকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে উড়ন্ত সূচনা করেছিল খুলনা। এরপর থেকেই তারা ধারাবহিকভাবে অধারাবাহিক। পরের আট ম্যাচে তাদের জয় আর মাত্র দুটি।
দশ ম্যাচে আট পয়েন্ট নিয়ে এখন অনিশ্চয়তায় প্লে-অফ খেলা। একটি ম্যাচে পা হড়কালেই শেষ হয়ে যাবে সব সম্ভাবনা।
এমন না যে হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোতে একদম উড়ে গেছে খুলনা। দুটি ম্যাচে হারা হেরেছে কেবল আট রানে, একটিতে সাত রানে। তিনটি ম্যাচেই জয়ের দারুণ সুযোগ তৈরি করে শেষ দিকে তালগোল পাকিয়ে হেরেছেন মিরাজ, আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম শেখরা।
সেটির খেসারত দিয়ে এখন কঠিন সমীকরণের সামনে খুলনা। প্লে-অফে জায়গা করে নিতে বুধবারের আগে তাদের লড়াই ছিল চিটাগং কিংস ও দুর্বার রাজশাহীর সঙ্গে। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে বুধবার চিটাগং জয় পাওয়ায় এখন মূলত রাজশাহীকে টপকানোর অভিযান খুলনার। বুধবার জিতে ১০ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট হয়ে গেছে চিটাগংয়ের।
সমান ম্যাচে খুলনার সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট। প্রথম পর্বের ১২ ম্যাচ শেষে রাজশাহীর ঝুলিতেও ১২ পয়েন্ট। চিটাগংয়ের আরও পয়েন্ট বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও রাজশাহীর সেটি নেই। তাই পরের দুই ম্যাচ জিতলে রাজশাহীকে টপকে সেরা চারে জায়গা করে নিতে পারবে খুলনা। আপাতত নেট রান রেটে এগিয়ে তারাই।
প্লে-অফের টিকেট পাওয়ার অভিযানে বৃহস্পতিবার রংপুরের মুখোমুখি হবে খুলনা। টানা আট জয়ের পর তিন ম্যাচ হেরে কিছুটা চাপে আছে রংপুরও। সেরা চারের লড়াইয়ে নামার আগে হারানো মোমেন্টাম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা থাকবে তাদেরও।
তাই সামনের কাজ যে বেশ কঠিন, তা বুঝতেই পারছেন মিরাজ। প্রতিটি ম্যাচকে তাই ফাইনালের মতোই দেখছেন খুলনা অধিনায়ক।
“আমরা যে ম্যাচগুলো হেরেছি, খুব কাছে গিয়ে হেরেছি... ৭-৮-৯ রানে। যেহেতু এখনও একটা সুযোগ আছে, তাই কালকের (বৃহস্পতিবার) ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। জিততে পারলে আমাদের জন্য মনে হয় সহজ হয়ে যাবে প্লে-অফ খেলা। যেহেতু পরের ম্যাচ ঢাকার সঙ্গে।”
“এখন আমাদের নকআউট হয়ে গেছে খেলাটা। যারা সেরা চারে খেলবে, তাদের জন্য প্লে-অফ হবে নকআউট। আমাদের জন্য এখন থেকে শুরু হয়ে গেছে। কালকের (বৃহস্পতিবার) ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেভাবে পরিকল্পনা করছি যেন ম্যাচটা জিততে পারি।”
টুর্নামেন্টে দারুণ শুরুর পরও ছন্দপতনের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের দিকে আঙুল তোলেন মিরাজ।
“আমার মনে হয়, আমাদের দেশি ক্রিকেটাররা ভালো খেলছে, বিদেশিরা একটু কম সহায়তা করছে। আমাদের যে ব্যাটসম্যানরা আছে, যেমন দরকার, যখন যে ইনিংস প্রয়োজন, তেমন খেলতে পারছে না। পারলেও বেশি বড় খেলতে পারছে না। তাই কিছুটা পিছিয়ে পড়ছি।”
এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছেন আবু হায়দার। সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় যৌথভাবে ৪ নম্বরে আছেন বাঁহাতি পেসার। দলের আর কেউ ১০ উইকেটও নিতে পারেননি। পাকিস্তানি পেসার সালমান ইরশাদের ৭ ম্যাচে শিকার ৯টি।
ব্যাটিংয়ে ৩৩৩ রান করে দলের সফলতম ব্যাটসম্যান নাঈম। ২৫৮ রান করে পরের নামটি মিরাজের। শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করা মাহিদুল ইসলাম ১৮৩.৫৮ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৪৬ রান।
সব মিলিয়ে দেশিদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হলেও, আরও বড় ইনিংস খেলার তাগিদ দিয়েছেন মিরাজ।
“দেশিরা খুব ভালো খেলছে। বিশেষ করে আবু হায়দার... দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট (আসলে চতুর্থ)। মাহিদুল যেভাবে ব্যাটিং করছে। অল্প বলে প্রতিদিন বেশি রান করছে। নাঈম শেখ, আফিফ... সব মিলিয়ে স্থানীয় সবাই পারফর্ম করছে। তবে দিন শেষে ইনিংসে বড় করতে পারছি না। হয়তো ৪০-৫০ রান করে আউট হচ্ছি। সেটা যদি ৭০-৮০ রান করত কেউ, আমাদের জন্য সহজ হয়ে যেত।”