চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
Published : 28 Feb 2025, 10:04 PM
গ্যালারিতে বেশিরভাগই আফগানিস্তানের সমর্থক। সেদিকউল্লাহ-ওমারজাইদের ব্যাটিংয়ের সময় গলা ফাটালেন তারা। আফগানদের বোলিংয়ের সময় সেই উপলক্ষ তারা খুব বেশি পেলেন না। বৃষ্টি শুরু হলে তাদের দেখা গেল ছুটোছুটি করতে। বৃষ্টি থামার পর অপেক্ষায় রইলেন খেলার শুরুর। কিন্তু সেটা আর হলো না। আফগানিস্তানকে হতাশ করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়া।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বুধবার ২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া ১২.৫ ওভারে ১ উইকেটে ১০৯ রান করার পর নামে বৃষ্টি। পরে বৃষ্টি থামলেও, আউটফিল্ডের অবস্থা এতটাই বাজে হয়ে যায় যে, খেলা সম্ভব হয়নি।
পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে দুই দলই পেয়েছে এক পয়েন্ট করে। ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের প্রথম দল হিসেবে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৩ পয়েন্ট করে নিয়ে নেট রানরেটে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দুইয়ে, আফগানিস্তান তিনে আছে।
আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শনিবার গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই ম্যাচে ইংল্যান্ড অনেক বড় ব্যবধানে জিতলেই কেবল নেট রানরেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে যেতে পারবে আফগানিস্তান। যেমন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারতে হবে অন্তত ২০৭ রানে (৩০১ রানের লক্ষ্য ধরে)।
২০০৯ আসরে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়া। গত দুটি আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের।
চোট ও ব্যক্তিগত কারণ মিলিয়ে নিয়মিত বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে ছাড়াই অবশ্য এবারের আসরে খেলতে হচ্ছে ওয়ানডের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
পুরো ম্যাচ খেলা হলে ফল কী হতো, তা বলা কঠিন। তবে আফগানিস্তান আক্ষেপ করতে পারে ট্রাভিস হেডের ক্যাচ ছাড়া নিয়ে। ৬ রানে জীবন পেয়ে বৃষ্টি নামার আগে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার। তার ৪০ বলের ইনিংসে ৯টি চারের পাশে ছক্কা একটি।
এই মাঠেই দুই দিন আগে ৩২৫ রানের পুঁজি গড়ে ইংল্যান্ডকে ৮ রানে হারায় আফগানিস্তান। এবার অতটা বড় হয়নি সংগ্রহ। ২৭৩ রানের পুঁজি গড়তে পারে তারা সেদিকউল্লাহ আটাল ও আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের সৌজন্যে।
তিনে নেমে ৯৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৫ রান করেন সেদিকউল্লাহ। ছয় নম্বরে ৫ ছক্কা ও এক চারে ৬৩ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন ওমারজাই।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই রাহমানউল্লাহ গুরবাজকে হারায় আফগানিস্তান। স্পেন্সার জনসনের দুর্দান্ত ইয়র্কারে শূন্য রানে ফেরেন তিনি। আসরে তিন ম্যাচে তার রান ১০, ৬ ও ০!
শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৭ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন ইব্রাহিম জাদরান ও সেদিকউল্লাহ। আগের ম্যাচে রেকর্ড ১৭৭ রানের ইনিংস খেলা ইব্রাহিম এবার থামেন অল্পেই (২৮ বলে ২২)।
টিকতে পারেননি অভিজ্ঞ রেহমাত শাহ। সেদিকউল্লাহ ফিফটি করেন ৬৪ বলে। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে জনসনের বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি ২০ রান করতে খেলেন ৪৯ বল। তার বিদায়ের পর দ্রুতই ফেরেন মোহাম্মদ নাবি ও গুলবাদিন নাইব। তখন ৪০ ওভারে আফগানিস্তানের স্কোর ৭ উইকেটে ১৯৯, আড়াইশ হওয়া নিয়েই শঙ্কা।
সেখান থেকে তারা ২৭৩ পর্যন্ত যেতে পারে মূলত ওমারজাইয়ের ব্যাটে। ২০২৪ সালে আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটার ৩ ছক্কায় ফিফটি করেন ৫৪ বলে। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর তিনি আরও দুটি ছক্কা মারেন ন্যাথান এলিসকে।
শেষ ওভারে থামে তার চমৎকার ইনিংসটি। ১৭ বলে ১৯ রান করেন রাশিদ খান।
৪৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার বাঁহাতি পেসার বেন ডোয়ার্শিস। দুটি করে উইকেট নেন আরেক বাঁহাতি পেসার জনসন ও লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা।
১৭টি ওয়াইডসহ অতিরিক্ত থেকে অস্ট্রেলিয়া দেয় ৩৭ রান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এক ম্যাচে যা তাদের সর্বোচ্চ।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ৩ ওভারে অস্ট্রেলিয়া করে ৩২ রান। পরের ওভারে ফাজালহাক ফারুকির প্রথম বলে ফিরতে পারতেন হেড। কিন্তু মিড-অন থেকে একটু বাঁদিকে সরে গিয়ে ক্যাচ ফেলেন রাশিদ। জীবন পেয়ে পরের বল ছক্কায় ওড়ান হেড।
পরের ওভারে ওমারজাইয়ের বলে আরেক ওপেনার ম্যাথু শর্টের লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দেন বদলি ফিল্ডার নানগেয়ালিয়া খারোটে। এর মূল্য অবশ্য বেশি দিতে হয়নি। এক বল পরই নাইবের ক্যাচে ফেরেন শর্ট (১৫ বলে ২০)।
ওই ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চাশ পূর্ণ হয় স্রেফ ২৯ বলে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দ্রুততম দলীয় ফিফটি এটি। আগের দ্রুততম ৩৪ বলে ফিফটি ছিল দুই দফায়; ২০০৬ আসরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২০১৭ আসরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া করেছিল।
পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়া করে ১ উইকেটে ৯০ রান। এটিও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির রেকর্ড। ২০১৭ আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ১ উইকেটে ৮৭ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।
সুযোগ কাজে লাগিয়ে হেড ফিফটি করেন ৩৪ বলে। একটু পরই বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৭৩ (গুরবাজ ০, ইব্রাহিম ২২, সেদিকউল্লাহ ৮৫, রেহমাত ১২, শাহিদি ২০, ওমারজাই ৬৭, নাবি ১, নাইব ৪, রাশিদ ১৯, নুর ৬, ফারুকি ০*; জনসন ১০-০-৪৯-২, ডোয়ার্শিস ৯-০-৪৭-৩, এলিস ১০-০-৬০-১, ম্যাক্সওয়েল ৬-১-২৮-১, জ্যাম্পা ৮-০-৪৮-২, শর্ট ৭-০-২১-০)
অস্ট্রেলিয়া: ১২.৫ ওভারে ১০৯/১ (শর্ট ২০, হেড ৫৯*, স্মিথ ১৯*; ওমারজাই ৫-০-৪৩-১, ফারুকি ৩-০-৩২-০, নাবি ৩-০-১৩-০, নুর ১.৫-০-১৩-০)
ফল: বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত