Published : 03 Apr 2025, 11:23 AM
উদযাপন দেখেই পেছনের গল্পটা অনুমান করে নেওয়া যায় অনায়াসে। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর এই উদযাপন তো গোটা বিশ্বের সব খেলা মিলিয়েই সবচেয়ে ‘আইকনিক’ উদযাপনগুলোর একটি। মোহাম্মদ সিরাজ সেটি মুখেও খোলাসা করে দিলেন। পর্তুগিজ মহাতারকার ভক্ত হিসেবেই এই উদযাপন তার নৈবেদ্য।
উদযাপনটি অনেক দিন ধরেই করে আসছেন সিরাজ। সবসময় বা সব উইকেট নিয়েই অবশ্য এই উদযাপন করেন না। তবে অনেক সময়ই তাকে দেখা যায় ‘Siuuu’ উদযাপন করতে। জাতীয় দলর ম্যাচে নানা সময়ে, আইপিএলেও বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে। যেমন দেখা গেল বুধবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচে।
দুর্দান্ত প্রথম স্পেলে দুটি উইকেট নিয়ে তিনি নির্বিষ করে দেন বেঙ্গালুরুর বিপজ্জনক টপ অর্ডারকে। পরে শেষ দিকে ফিরে তিনি বিদায় করেন বেঙ্গালুরুর সর্বোচ্চ স্কোরার লিয়াম লিভিংস্টোনকে (৫৪)। ১৯তম ওভারে বোলিং করেও রান দেন মাত্র চার।
সব মিলিয়ে চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে গুজরাট টাইটান্সের জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি। পরে রান তাড়ায় ৮ উইকেটে জিতে যায় দল। জস বাটলার ৩৯ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেললেও ম্যাচের সেরা সিরাজ।
‘Siuuu’ উদযাপনের ঠিক আগে একটু ভিন্ন উদযাপনও করেন সিরাজ। দুই হাতের আঙুলে বুকে স্পর্শ করে মাটির দিকে ইশারা করে তবে রোনালদোর উদযাপনে মেতে উঠতে দেখা যায় তাকে। ম্যাচ-সেরার পুরস্কার নেওয়ার পর সেই উদযাপনের গল্প ছোট্ট করে বললেন গুজরাটের পেসার।
“(আঙুলের ইশারা করে) এটায় বোঝাচ্ছি যে, আমি আছি লড়াইয়ের জন্য… এরপরই ‘Siuuu’ উদযাপন… রোনালদোর ভক্ত আমি, তার মতো উদযাপন তো করতেই হবে…।”
উদযাপন চেনা হলেও সিরাজের জন্য এই ম্যাচটি ছিল অন্যরকম। আইপিএলে তাকে এত বছর ধরে সবাই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সিরাজ বলেই চিনতেন। ২০১৭ আসরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে শুরুর পর ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত টানা সাত মৌসুমে তিনি খেলেছেন বেঙ্গালুরুর হয়ে। এই দলে পারফর্ম করেই নাম-পরিচিতি-অর্থ পেয়েছেন, জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন। এই দলের প্রতীকীও হয়ে উঠেছিলেন কিছুটা। এবার সেই বেঙ্গালুরু তাকে নিলামের আগে ছেড়ে দেয়। নিলাম থেকেও নেয়নি তাকে। তার নতুন ঠিকানা হয় গুজরাট।
পুরোনো দলের বিপক্ষে পুরোনো ঘরের মাঠে চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে বোলিংয়ে বাড়তি বারুদ ছিল কি না, এই প্রশ্ন উঠল। তবে ৩১ বছর বয়সী পেসার লাজুক হাসিতে বললেন, আগুন নয়, ছিল আবেগ।
“নাহ (বাড়তি আগুন ছিল না)… কিছুটা আবেগপ্রবণ ছিলাম, কারণ সাত বছর এখানে খেলেছি, লাল জার্সিতে খেলেছি। এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা… কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, আবেগও ছিল। তবে যখনই হাতে বল নিয়েছি, এরপর ‘ফুল অন’ হয়ে গেছি।”
এবারের আইপিএলে শুরুর আগে সময়টা খুব ভালো ছিল না সিরাজের। ছন্দ হারিয়ে জাতীয় দলে জায়গ হারান। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডর বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজ ও পরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারতীয় দলে জায়গা পাননি। জানুয়ারির শুরুতে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফেরার পর আইপিএলের আগ পর্যন্ত স্রেফ রাঞ্জি ট্রফির একটি ম্যাচ ছাড়া আর কোনো ম্যাচ খেলেননি তিনি।
আইপিএলের শুরুটাও এবার তার ভালো ছিল না। রান বন্যার প্রথম ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে চার ওভারে ৫৪ রান দেন তিনি। তবে পরের ম্যাচেই উইকেট শিকার করেন দুটি। এরপর তৃতীয় ম্যাচে আরও ধারাল বোলিং করে ম্যান অব দা ম্যাচ।
সিরাজ বললেন, বাইরে থাকার সময়টা তিনি ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়েছেন নিজেকে আরও শাণিত করে তুলতে।
“টানা ম্যাচ খেলছিলাম। ভুলগুলো তাই উপলব্ধি করতে পারছিলাম না। এবার যখন বিরতি পেলাম, নিজের ফিটনেস ও বোলিংয়ের ওপর মনোযোগ দিলাম। মানসিকভাবেও সবকিছু খুব ভালো ছিল। এরপর যখন জিটি দলে (গুজরাট টাইটান্স) দলে যোগ দিলাম, তখন আশিস ভাইয়ের সঙ্গে (কোচ আশিস নেহরা) কাজ করলাম। বল এখন হাত থেকে ভালোভাবে বের হচ্ছে এবং আত্মবিশ্বাসও দারুণ।”
“বিশ্বাসটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, নিজের ভেতরে বিশ্বাসটা রাখতে হবে। বিশ্বাস না থাকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ার সুযোগ থাকে। আমার ভেতরে এই বিশ্বাসটা রাখি যে, আমি করতে পারি। আমার মানসিকতটা এরকমই থাকে।”