Published : 14 May 2025, 11:46 AM
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে কাগিসো রাবাদার মাঠে নামতে এখন আর বাধা নেই। শিগগিরই হয়তো আইপিএলে খেলতে দেখা যাবে তাকে। কদিন পরই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বল হাতে ছুটবেন লর্ডসের সবুজ প্রান্তরে। তবে ডোপ পরীক্ষায় তার পজিটিভ হওয়া নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে এখন ঘোরাফেরা করছে নানা প্রশ্ন- এই ফাস্ট বোলার কি একবারই ড্রাগ নিয়েছেন নাকি মাঝেমধ্যেই কিংবা নিয়মিতই নিতেন? তিনি আদৌ ভালো আছেন তো!
রাবাদার ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদমাধ্যম জানতে পেরেছে, স্রেফ একবারই এমন করে ফেলেছেন বলে ধারণা করছেন তারা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, স্রেফ একবারই ড্রাগ নিয়ে ধরা পড়ার শঙ্কা খুবই সামান্য। নিশ্চিত না হওয়া গেলেও তাই অনেকটা নিশ্চিত, একাধিকবার নিষিদ্ধ উপকরণ নিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার।
রাবাদা যদি সত্যিই আসক্ত হয়ে থাকেন বা কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে তাকে সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু যদি তিনি দায়িত্বজ্ঞান ভুলে উন্মত্ত হয়ে ড্রাগ নিয়ে থাকেন, তাহলে ব্যাপারটি ভিন্ন রকম। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
“সবচেয়ে বড় ভাবনার জায়গা আসলে তার ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই। যদি কোনো ইস্যু তার থেকেই থাকে, তাহলে যতটা প্রয়োজন, তার পাশে সবাই থকবে। যদি তেমন কোনো ব্যাপার না থাকে, স্রেফ বেপরোয়া হয়ে এমনটি করে থাকে, তাহলে তা তাকেই সামলাতে হবে।”
“মাঠে স্লেজিং, যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম, চারপাশের সবকিছু তাকেই সামলাতে হবে। আমরা স্রেফ আশা করতে পারি, সেই পরিস্থিতি থেকে সে ভালোভাবে বেরিয়ে আসবে।”
কোচ শুক্রি কনরাড অবশ্য এতটা গভীরে যেতে চাইলেন না। দলের বোলিং আক্রমণের মূল অস্ত্রকে টেস্ট চ্যাম্পিনশিপের ফাইনালে আপন রূপে দেখতে চান তিনি।
“ঘটনা জানার পর থেকেই কেজির (রাবাদা) সঙ্গে যোগাযোগ করে গেছি আমি। আমার জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল, কেজি এখনও ঠিকঠাক আছে কি না, এর আশেপাশের মানুষগুলো এবং এটা নিশ্চিৎ করা, সে যেন ভালো অবস্থায় থাকে।”
“দিনশেষে, আমাদের সব ক্রিকেটারই গুরুত্বপূর্ণ। সে তার সাজা কাটিয়েছে। এখন আমার একটাই আগ্রহ, কেজির যেমন পারফর্ম করার সামর্থ্য আছে, তেমন যেন করতে পারে।”
ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ার পর শিক্ষা ও সচেতনামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করায় রাবাদার শাস্তির মেয়াদ কমানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল টিম অ্যান্ড হাই পারফরম্যান্স ইনক ইনকুয়ে জানালেন, এই ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক রাবাদা।
“যদিও সে সুপারস্টার, তারপরও ভুল করতেই পারে। আমরা এখন ব্যাপারটি দেখছি শিক্ষণীয় দিক থেকে এবং সেটিকে চর্চা করায়। এই ব্যাপারটি সে নিজেও চালিয়ে যেতে আগ্রহী- তরুণদের সচেতন করা এবং এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো ও ইতিবাচক বার্তা দেওয়া।”
“দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অসাধারণ কিছু করেছে, এমন একজন তারকার কাছ থেকে যখন ১৯ বছর বয়সী বা ১৬ বছর বয়সী কেউ এসব কথা শুনবে, তখন তা নিশ্চিতভাবেই আরও প্রভাববিস্তারী হবে।”
গত ২১ জানুয়ারি এসএ টোয়েন্টিতে এমআই কেপ টাউন ও ডারবান সুপার জায়ান্টসের ম্যাচ শেষে ডোপ পরীক্ষায় পজিটিভ হন রাবাদা। সেই পরীক্ষার ফল আসে গত ১ এপ্রিল, তিনি যখন গুজরাট টাইটান্সের হয়ে খেলছেন আইপিএলে। ৩ এপ্রিল গুজরাট জানায়, ব্যক্তিগত কারণে দেশে ফিরে গেছেন অভিজ্ঞ পেসার।
তার ড্রাগ নেওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ করা হয় আরও মাসখাকে পরে। সেটি অবশ্য ছিল ‘রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ’, যা পারফরম্যান্স বর্ধক নয়। ম্যাচের সময় ড্রাগ নেননি তিনি। প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় তাকে। তবে পরে শিক্ষা ও সচেনতামূলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনা হয় এক মাসে। আইপিএলেই আবার খেলার জন্য ভারতে ফিরে যান তিনি।
ফেরার পর অবশ্য আর মাঠে নামার সুযোগ হয়নি তার। পরে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জের ধরে স্থগিত হয়ে যায় আইপিএল। শনিবার থেকে আবার সেই আসর শুরু হচ্ছে, রাবাদাও আরেক দফায় ফিরছেন ভারতে। এবার হয়তো মাঠেও দেখা যাবে তাকে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল শুরু লর্ডসে ১১ জুন।