Published : 06 Feb 2025, 09:31 PM
পাওয়ার প্লের ভেতরেই ড্রেসিং রুমে চার ব্যাটসম্যান। স্কোরবোর্ডে তখন সাকুল্যে ৩৪ রান। ছয় নম্বরে নেমে সব চাপ নিজের ওপর নিয়ে নিলেন শামীম হোসেন। পাল্টা আক্রমণে দলকে এনে দিলেন লড়াই করার মতো পুঁজি। নিজে খেললেন ৪৭ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৭৯ রানের ইনিংস।
বিপিএলে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারের ম্যাচের ঘটনা এটি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি অবশ্য জিততে পারেনি চিটাগং কিংস। তবে টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাটিংয়ে যে নির্ভরতা দিয়েছেন শামীম, তারই একটি উদাহরণ সেটি। টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাটিং গভীরতায় পিছিয়ে থেকেও ফাইনালের ওঠা দলের প্রধান কোচ শন টেইট বললেন, নিচের দিকে শামীমের উপস্থিতি দলে জোগায় বাড়তি সাহস।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ওপরের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে ছয় নম্বরে নেমে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৩৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন শামীম। পরের দুই ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে এক ধাপ উন্নতি হয় তার। ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ১৩ বলে ৩০ রানের ক্যামিও খেলে তিন বল বাকি থাকতে তিনি নিশ্চিত করেন দলের জয়।
খুনে ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা আসরজুড়েই ধরে রাখেন শামীম। এখন পর্যন্ত ১৪ ইনিংসে তার সংগ্রহ ৩৫০ রান, স্ট্রাইক রেট ১৫৯.৮১! টুর্নামেন্টে সাড়ে তিনশ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার স্ট্রাইক রেটই সর্বোচ্চ।
এবারের আসরে আলাদাভাবে নজর কেড়েছে শামীমের রান করার ধরনও। একসময় নির্দিষ্ট কিছু শট বা নিজের জোনের বাইরে খুব বেশি খেলতে পারতেন না তিনি। সেখানে এখন উন্নতির ছাপ মেলে ধরেছেন বেশ। পেস হোক কিংবা স্পিন, উইকেটের চারপাশে শট খেলার পারদর্শিতা দারুণভাবে দেখিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
ফাইনালের আগে টিম হোটেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে চিটাগংয়ের কোচ বললেন, শামীমের সাহস সঞ্চারিত হয়েছে গোটা দলে।
"ছয় নম্বরে শামীম হোসেন দারুণ খেলছে। যা ওপরের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস জোগায়। তাকে বোলিং করা খুবই ট্রিকি ব্যাপার। ওই জায়গায় শামীমের থাকা আমাদের অনেক সাহস দেয়। আর আমাকে বলতেই হবে, আমাদের বোলিং বিভাগ বেশ শক্তিশালী। আপনি একসঙ্গে সব পাবেন না।"
চিটাগংয়ের হয়ে শামীমের চেয়ে বেশি রান করতে পেরেছেন শুধু গ্রাহাম ক্লার্ক। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে এক ফিফটিতে ইংলিশ ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ ৩৮৭ রান। আড়াইশর বেশি রান আছে মোহাম্মদ মিঠুন (২৬৮) ও পারভেজ হোসেনের (২৬০)। শেষ দিকে সুযোগ পেয়ে খাওয়াজা নাফেও করেছেন দুটি ফিফটি।
প্রত্যেকে প্রয়োজনের সময় নিজেদের কাজটুকু করে দেওয়ায় পুরো আসরে ছয় ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেও তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি চিটাগংকে। লিগপর্বে দ্বিতীয় হয়ে প্লে-অফের টিকেট নিশ্চিত করে তারা। পরে বরিশালের কাছে প্রথম কোয়ালিফায়ার হারলেও দ্বিতীয় সুযোগে খুলনার বিপক্ষে রোমাঞ্চকর এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।
টেইটের মতে, ঝুঁকি নিয়ে ছয় ব্যাটসম্যান খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সফল হয়েছেন তারা।
"মানুষ হয়তো বলবে, আমাদের ব্যাটিং তেমন লম্বা নয়। কিন্তু দিন শেষে আমরা ফাইনাল খেলছি। তো কখনও কখনও ঝুঁকি নিতে হয়। দল হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়। সেগুলো পক্ষে আসুক অথবা বিপক্ষে যাক, ক্রিকেটারদের পাশে থাকতে হবে। আমার এ নিয়ে সমস্যা নেই। বেশিরভাগ ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা তাদের কাজটা করে দিয়েছে।"