Published : 18 Jun 2025, 01:32 PM
ক্রিজে থাকা ব্যাটসম্যানটি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলই তো? ধন্দে পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। ১৩ ওভার শেষে তার রান ১১। ১৫ বল খেলেও বাউন্ডারি নেই। ম্যাক্সওয়েলকে চেনা তো কঠিনই! তবে সেই ধন্দ ধুলোয় মিশিয়ে দিলেন তিনি পরের সময়টাতেই। ব্যাট হাতে এমন ধংসযজ্ঞ চালালেন যে, তাকে চিনতে আর সমস্যাই হলো না!
বাউন্ডারি স্রেফ দুটি, কিন্তু ছক্কা ১৩টি। মেজর লিগ ক্রিকেটে আপন রূপে আবির্ভুত হলেন ম্যাক্সওয়েল। ওয়াশিংটন ফ্রিডমের হয়ে লস অ্যাঞ্জেলস নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে উপহার দিলেন ৪৯ বলে ১০৬ রানের অপরাজিত ইনিংস।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার অষ্টম সেঞ্চুরি এটি। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। বিশ্বরেকর্ডে তার ওপরে এখন কেবল চারজন – ক্রিস গেইল (২২), বাবর আজম (১১), রাইলি রুশো (৯) ও ভিরাট কোহলি (৯)।
এই টুর্নামেন্টের আগে বেশ বাজে ফর্মে ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে আইপিএল সাত ম্যাচ খেলে মোট ৪৮ রান করেন স্রেফ ৮ গড়ে। এর মধ্যে এক ম্যাচে ছিল ৩০ রান, বাকি কোনো ম্যাচে দু অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। পরে তো চোটের কারণে ছিটকেই পড়েন টুর্নামেন্ট থেকে।
মেজর লিগ ক্রিকেটে ফিরে প্রথম ম্যাচে আউট হন ৫ রানে। পরের ম্যাচে ২০ বলে ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে জিতিয়ে ফর্মে ফেরার আভাস দেন। অবশেষে এই ম্যাচে ফিরলেন সেরা চেহারায়।
ওকল্যান্ডে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচটিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়াশিংটন এক পর্যায়ে বেশ বিপাকে ছিল। ওপেনিংয়ে মিচেল ওয়েন যদিও ১১ বলে ৩২ রানের বিধ্বংসী ক্যামিও খেলেন। তার পরও রাচিন রাভিন্দ্রা, আন্দ্রিয়েস হাউস ও জ্যাক এডওয়ার্ডসের ব্যর্থতায় দলের রান অষ্টম ওভারে ছিল ৪ উইকেটে ৬৮।
অধিনায়ক ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে যান তখন। একটু পর বিদায় নেন মার্ক চ্যাপম্যানও। রানের গতিও থমকে যায় অনেকটা।
১৩ ওভার শেষে ওয়াশিংটনের রান ছিল ৫ উইকেটে ৯৮।
পরের ওভারেই খোলস ছেড়ে বের হন ম্যাক্সওয়েল। টানা তিনটি ছক্কা মারেন স্বদেশী লেগ স্পিনার তানভির স্যাঙ্ঘাকে। সেই শুরু, আর থামান নাম নেই। কর্নে ড্রাইকে মারেন দুটি ছক্কা, সুনিল নারাইনের ওভারে তিনটি।
ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ২৯ বলে। এরপরও ঝড় চলতে থাকে। টানা দুটি ছক্কা মারেন শ্যাডলি ফন স্কালভিকের বলে।
ততক্ষণে তার ছক্কা ১০টি, চার নেই একটিও। অবশেষে ১৯তম ওভারে দুটি চার মারেন আন্দ্রে রাসেলকে।
শেষ ওভার শুরুর সময় তার রান ছিল ৮৭। জেসন হোল্ডারকে টানা দুটি ছক্কায় শতরানের কাছে পৌঁছে যান তিনি। এরপর সিঙ্গল নিয়ে তিন অঙ্কে পা রাখেন ৪৮ বলে।
ওভারের শেষ বলে আবার স্ট্রাইক পেয়ে ইনিংস শেষ করেন বিশাল ছক্কায়।
শেষ সাত ওভারে ১১০ রান তুলে ওয়াশিংটন ফ্রিডম থামে ২০ ওভারে ২০৮ রানে।
৫ উইকেটের পর আর কোনো উইকেট হারায়নি ওয়াশিংটন। ষষ্ঠ উইকেট জুটির পরিসংখ্যান অবিশ্বাস্য। ৫২ বলে ১১৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে অবাস পিনারের অবদান ১৫ বলে ১৪, ম্যাক্সয়েলের ৩৭ বলে ৯৭!
রান তাড়ায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি লস অ্যাঞ্জেলস। প্রথম তিন ব্যাটসম্যান সুনিল নারাইন, অ্যালেক্স হেলস ও উন্মুক্ত চাঁদ রানই করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এ নিয়ে চতুর্থবার প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই শূন্য রানে আউট হলেন।
এরপর ৩১ বলে ৩২ রান করেন সাইফ বাদার, ১৬ বলে ২৩ অধিনায়ক হোল্ডার। ৯৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস ম্যাচ হেরে যায় ১১৩ রানে।
ওয়াশিংটনের মিচেল ওয়েল ও জ্যাক এডওয়ার্ডস শিকার করেন তিনটি করে উইকেট।