Published : 03 Mar 2025, 08:12 PM
ম্যাচের ফলাফল নিয়ে কোনো সংশয় আর বাকি ছিল না। উত্তেজনা যা একটু ছিল ইমরুল কায়েসকে ঘিরে। তিন অঙ্ক ছুঁতে তার প্রয়োজন ছয়, দলের জয়ের জন্যও বাকি ছয় রান। মাহফুজুর রহমান রাব্বির বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়িয়ে মারলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কিন্তু দূরত্ব পার করতে পারলেন না। ধরা পড়ে গেলেন লং অফে।
সেঞ্চুরি না হলেও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডকে হারিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যাত্রা শুরু করল ইমরুলের নেতৃত্বাধীন অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
ইমরুলের মতোই খুব কাছে গিয়েও শতক ছোঁয়া হয়নি শামীম হোসেনের। তবে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে বীরোচিত ইনিংস প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে অসাধারণ এক জয় এনে দিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী দিনের অন্য ম্যাচে তারকায় ঠাসা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে চমক উপহার দিয়েছে নবাগত গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। মোহামেডানের তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহদের মতো ব্যাটসম্যানরা পারেননি অভিজ্ঞতার ছাপ রাখতে।
আসরের প্রথম সেঞ্চুরির পর বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে গুলশানের নায়ক ইফতেখার হোসেন।
পরাজয়ে শুরু চ্যাম্পিয়নদের
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আবাহনীকে ৬ উইকেটে হারায় প্রিমিয়ার লিগে ফেরা অগ্রণী ব্যাংক। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ২৩৪ রানে আটকে রেখে ৩০ বল বাকি থাকতেই জিতে গেল ইমরুলের দল।
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ৯৪ রান করেছেন ইমরুল। ৯৪ বলের ইনিংসে ৩ চার ও ৭টি ছক্কা মেরেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
এক ঝাঁক ক্রিকেটারের বিদায়ে শক্তি হারানো আবাহনীর পক্ষে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেন পারভেজ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন। তবে তা যথেষ্ট হয়নি চ্যাম্পিয়নদের জন্য।
লিস্ট 'এ' স্বীকৃতি পাওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার লিগের প্রথম ম্যাচ হারল আবাহনী। ২০২২ সালে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের কাছে হেরে যাত্রা শুরু করেছিল তারা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে শাহরিয়ার কমলের উইকেট হারায় আবাহনী। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়তে ৯৭ বল খেলেন পারভেজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
রানের জন্য বেশ সংগ্রাম করতে থাকেন শান্ত। ২ চারে ২০ রান করতে ৫১ বল খেলেন আবাহনী অধিনায়ক। ৪০টি ডেলিভারি থেকে কোনো রান করতে পারেননি তিনি।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সবকটি ম্যাচে বেঞ্চে বসা থাকা পারভেজের ব্যাট থেকে আসে ৭৪ বলে ৫০ রান। পাঁচ নম্বরে নেমে ৪০ বলে ২৭ রান করে আউট হন মুমিনুল হক।
১১৭ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে পরে এগিয়ে নেন মোসাদ্দেক। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৫ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে দুইশ পার করান তিনি।
অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেন শহিদুল ইসলাম।
রান তাড়ায় দারুণ শুরু করেন সাদমান ইসলাম ও ইমরানউজ্জামান। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৮ রান যোগ করেন তারা। ৩৫ বলে ৩৫ রান করে ফেরেন ইমরান। সাদমানের ব্যাট থেকে আসে ৭০ বলে ৪৬ রান।
তৃতীয় উইকেটে অমিত হাসানকে নিয়ে ১২৫ রানের জুটি গড়েন ইমরুল। ১ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মেরে ৫২ বলে পঞ্চাশে পৌঁছান তিনি। পরে মারেন আরও ৩টি ছক্কা।
একই ওভারে ইমরুল ও অমিতকে আউট করেন মাহফুজুর। ৬৩ বলে ৪৪ রান করেন অমিত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ২৩৪ (কমল ০, পারভেজ ৫০, শান্ত ২০, মিঠুন ৭, মুমিনুল ২৭, মোসাদ্দেক ৭৩, মাহফুজুর ১০, মৃত্যুঞ্জয় ১৪, রকিবুল ৮, রিপন ২*, এনামুল ৫; রবিউল ১০-০-৫৪-১, শহিদুল ১০-১-৪৪-৪, রুয়েল ১০-০-৪৭-২, নাঈম ১০-২-৩২-১, শুভাগত ৭-১-৩৭-২, তাইবুল ৩-০-১৮-০)
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৫ ওভারে ২৩৫/৪ (ইমরানউজ্জামান ৩৫, সাদমান ৪৬, ইমরুল ৯৪, অমিত ৪৪, মার্শাল ৬*, তাইবুর ০*; রিপন ৫-০-১৫-০, মৃত্যুঞ্জয় ৬-০-২৬-১, রকিবুল ৮-০-৫৫-০, এনামুল ৪-০-৩৪-০, মোসাদ্দেক ১০-০-৩৭-১, শান্ত ৩-০-১৭-০, মাহফুজুর ৬-০-৪১-২, মুমিনুল ৩-০-১০-০)
ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমরুল কায়েস
শামীমের বীরোচিত ইনিংসে প্রাইম ব্যাংকের জয়
দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন তখন সাত রান। সেঞ্চুরির জন্য শামীম হোসেনের দরকার ১২। আল আমিন জুনিয়রের প্রথম বলে বাউন্ডারি মারলেন শামীম। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার সম্ভাবনা তার ছিল তখনও। তবে দুই বল পর তিনি মারলেন ছক্কা। ম্যাচ জিতে গেল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ২ রানের জন্য হলো না সেঞ্চুরি।
শতক না হলেও অবশ্য যে অবস্থা থেকে দলকে জিতিয়েছেন, তাতে কোনো আক্ষেপ থাকার কথা নয় শামীমের। ৮৩ বলে ৯৮ রানের ইনিংস খেলে চোখে-মুখে তৃপ্তি নিয়েই তাকে মাঠ ছাড়তে দেখা যায়।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে শামীমের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। ২১৭ রানের লক্ষ্য ৩২.৪ ওভারে ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।
একশর বেশি বল বাকি থাকলেও একদমই সহজ ছিল না প্রাইম ব্যাংকের জয়। রান তাড়ায় প্রথম ওভারে দুই ওপেনারকে হারায় তারা। তিন ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন চার ব্যাটসম্যান।
তৃতীয় ওভারে ইরফান শুক্কুরের রান আউটের সিদ্ধান্ত ঘিরে দেখা দেয় বিতর্ক। প্রায় ২৫ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা।
পুনরায় খেলা শুরু হলে পাল্টা আক্রমণ করেন শাহাদাত হোসেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৪ রান করে আউট হন তিনি।
১১৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় প্রাইম ব্যাংক। পরে সৈয়দ খালেদ আহমেদকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন শামীম। অষ্টম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৯৫ বলে ১০৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জেতান তিনি।
৪ চারের সঙ্গে ২ ছক্কা মেরে ৫৭ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন শামীম। এরপর শুরু করেন তাণ্ডব। পরের ২৬ বলে আরও ৬ চার ও ২ ছক্কায় মেরে ৪৮ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ২টি করে চার-ছক্কা মেরে ৩৭ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন খালেদ।
ম্যাচের প্রথম ভাগে রূপগঞ্জকে দুইশ ছাড়ানো পুঁজি এনে দেওয়ার কারিগর আব্দুল মজিদ ও তানবীর হায়দার। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ বলে ৫৩ রান করেন মজিদ। তানবীরের ব্যাট থেকে আসে ৫৬ বলে ৪৭ রান।
প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন আরাফাত সানি ও নাহিদুল ইসলাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৪৮.৪ ওভারে ২১৬ (মজিদ ৫৩, মহব্বত ১২, মইনুল ১, আল আমিন ১৮, মাহমুদুল ২৮, তানবীর ৪৭, সজিব ১০, মারাজ ১৭, হুসনা হাবি ৪, এনামুল ৩*, ফাহাদ ১; খালেদ ৯-০-৪১-২, ইফরান ২.২-১-১৩-১, আরাফাত ৯.২-০-৪০-৩, নাহিদুল ৯-০-৩৭-৩, নাজমুল ১০-১-২৯-০, সাব্বির ৯-০-৪৬-১)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩২.৪ ওভারে ২২০/৭ (নাঈম ০, সাব্বির ০, জাকির ২, শাহাদাত ৫৪, ইরফান ৪, নাজমুল ২৬, শামীম ৯৮*, নাহিদুল ০, খালেদ ২৮*; ফাহাদ ৭-০-৬০-২, এনামুল ৪-০-২৪-১, হুসনা হাবি ৬-১-৩৯-২, মাহমুদুল ৬-০-৪২-০, সজিব ৬-১-২৯-১, মইনুল ২-০-৬-০, মারাজ ১-০-৯-০, আলআমিন ০.৪-০-১০-০)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামীম হোসেন
ইফতেখারের সেঞ্চুরি, মোহামেডানের বড় পরাজয়
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে লড়াই করতেই পারেনি লিগের ফেভারিট মোহামেডান। প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১০৭ রানের জয় পায় গুলশান।
২৯৯ রানের লক্ষ্যে ৫৮ বল বাকি থাকতে ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় মোহামেডান।
ব্যাট হাতে ১০৮ রানের ইনিংসের পর মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন ইফতেখার হোসেন।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লের মধ্যে আজিজুল হাকিম তামিম ও খালিদ হাসানের উইকেট হারায় গুলশান। চাপ সামাল দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন জাওয়াদ আবরার। ইফতেখারের সঙ্গে তিনি গড়েন ৮৩ রানের জুটি।
৪ চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা মেরে ৮৬ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওপেনার জাওয়াদ।
এরপর হাবিবুর শেখকে নিয়ে আরও এগিয়ে যান ইফতেখার। ১০৮ বলে তিনি করেন লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৯ চার ও ৩ ছক্কায় সাজান ১১০ বলের ইনিংস। হাবিবুরের ব্যাট থেকে আসে ৫৩ বলে ৪৭ রান।
মোহামেডানের পক্ষে ৪ উইকেট নেন আবু হায়দার।
রান তাড়ায় আরিফুল ইসলাম ছাড়া কেউ মোহামেডানের পক্ষে তেমন কিছু করতে পারেননি। মেহেদি হাসানের বলে পরপর দুটি চার মেরে ভালো কিছুর আভাস দিলেও ২২ বলে ২২ রান করে ফেরেন অধিনায়ক তামিম।
পাঁচ নম্বরে নেমে মাত্র ৭ রানে আউট হন মুশফিক। ইফতেখারের বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ১০ রান। ইনসাইড আউট শট খেলার চেষ্টায় বৃত্তের ভেতরেই ধরা পড়েন তিনি।
একপ্রান্ত ধরে রেখে ৭৩ রান করেন আরিফুল। ৭৯ বলের ইনিংসে ৫ চারের সঙ্গে তিনি মারেন ৪টি ছক্কা। এছাড়া মাহিদুল ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ৩১ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৯৮/৮ (জাওয়াদ ৭৫, আজিজুল ৪, খালিদ ৮, ইফতেখার ১০৮, হাবিবুর ৪৭, শাকিল ১২, মেহেদি ২০, নিহাদউজজামান ১৩, ইলিয়াস ১*; আবু হায়দার ১০-০-৬৬-৪, সাইফ ১০-০-৭৮-১, ইবাদত ১০-০-৫০-১, নাসুম ৮-০-৪৫-০, তাইজুল ৮-১-৩৯-০, আরিফুল ৩-০-১১-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৯-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪০.২ ওভারে ১৯১ (রনি ৯, তামিম ২২, মাহিদুল ৩১, আরিফুল ৭৩, মুশফিক ৭, সাইফ ৪, মাহমুদউল্লাহ ১০, আবু হায়দার ৭, নাসুম ১২, তাইজুল ২, ইবাদত ২*; মেহেদি ৬-১-২৮-০, রায়হান ৭-০-৩৫-১, নিহাদউজজামান ৮-০-৩৫-১, আসাদুজ্জামান ৪-০-২৫-১, ইফতেখার ৭-০-৩২-৩, আজিজুল ৩.২-০-১০-২, ইলিয়াস ৫-১-২২-২)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ১০৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইফতেখার হোসেন