Published : 15 Mar 2025, 05:28 PM
কাভারের ওপর দিয়ে চমৎকার ছক্কায় ৯২ রানে পৌঁছে গেলেন মুমিনুল হক। সম্ভাবনা জাগালেন লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে প্রায় সাত বছরের সেঞ্চুরি খরা কাটানোর। কিন্তু পূর্ণতা দিতে পারলেন না তিনি। পরের বলেই পায়ে লেগে বোল্ড হয়ে গেলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মুমিনুল সেঞ্চুরি না পেলেও বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আবাহনী লিমিটেড।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পঞ্চম রাউন্ডের প্রথম দিন সেঞ্চুরির দেখা পাননি কোনো ব্যাটসম্যান। মুমিনুল ছাড়া পঞ্চাশ ছুঁতে পারেন শুধু তাওহিদ হৃদয় ও মোহাম্মদ মিঠুন।
বোলারদের দাপটের দিনে ৪টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এছাড়া দারুণ বোলিং করেন তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি, নাহিদুল ইসলামরা।
টানা চার জয়ে শীর্ষে আবাহনী
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ৮০ রানে জিতেছে আবাহনী লিমিটেড। ৩১১ রানের লক্ষ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩০ রান করেছে পারেনি ব্রাদার্স।
নবাগত গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের কছে হেরে যাত্রা শুরু করা আবাহনীর এটি টানা চতুর্থ জয়। পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে উঠে গেছে তারা। পাঁচ ম্যাচে ব্রাদার্সের জয় স্রেফ একটি।
আবাহনীকে তিনশ ছাড়ানো পুঁজি এনে দেওয়ার পথে ৭৪ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলেন মুমিনুল। ৭ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
২০১৮ সালের পর লিস্ট 'এ'তে সেঞ্চুরি নেই মুমিনুলের। প্রায় সাত বছরের অপেক্ষা দূর করার আশা জাগালেও ৮ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় তাকে।
সেঞ্চুরি না পেলেও আবাহনীকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন মুমিনুল। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
চতুর্থ উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ১৪৩ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৮৬ বলে ৭১ রান করেন মিঠুন।
শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেন, মাহফুজুর রহমান রাব্বি, রকিবুল হাসানরা ছোট ছোট, তবে কার্যকর ইনিংস খেলে দলকে তিনশ পার করান।
বড় লক্ষ্যে জয়ের কোনো সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি ব্রাদার্স। অধিনায়ক মাইশুকুর রহমান ৭৮ বলে ৮৪ রানের ইনিংসে পরাজয়ের ব্যবধান কমান। ৩ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন মাইশুকুর।
এছাড়া মিজানুর রহমান ৪৫ ও অলক কাপালি ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ৩১০/৮ (জিসান ২৭, পারভেজ ৫, শান্ত ১২, মিঠুন ৭১, মুমিনুল ৯২, মেহেরব ১১, মোসাদ্দেক ২৩, মাহফুজুর ২৮*, রকিবুল ২২, এনামুল ৪*; আল আমিন ১০-০-৪১-২, মানিক ৭-০-৬৬-১, সোহাগ ১০-১-৫৩-১, ইফতেখার ১০-০-৬৭-০, মাইশুকুর ৩-০-২০-০, কাপালি ৯-০-৫০-১, আইচ ১-০-১০-১)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৫০ ওভারে ২৩০/৭ (মাহফিজুল ৮, ইমতিয়াজ ২০, মিজানুর ৪৫, আইচ ১৬, মাইশুকুর ৮৪, কাপালি ৩৩, জাহিদুজ্জামান ১৩, ইফতেখার ১*, মানিক ৬*; নাহিদ ৭-১-২১-১, রকিবুল ১০-০-৪৪-১, মোসাদ্দেক ৭-১-১২-২, মুমিনুল ৫-০-৪১-০, মাহফুজুর ১০-০-৫৭-১, এনামুল ৬-০-২৩-০, মেহেরব ৫-০-৩১-২)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৮০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুমিনুল হক
হৃদয়ের ফিফটির পর মিরাজের ৪ উইকেট
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কাগজে-কলমে লিগের শক্তিশালী দুই দলের ম্যাচে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে তেমন লড়াই করতে পারেনি লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
রূপগঞ্জকে ৯৪ রানে হারিয়ে টানা চতুর্থ জয় পেয়েছে মোহামেডান। ২৫৪ রানের লক্ষ্যে ১৫৯ রানে গুটিয়ে যায় তারকায় ঠাসা রূপগঞ্জ। পাঁচ ম্যাচে তাদের এটি দ্বিতীয় পরাজয়।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইতিবাচক শুরু করেন মোহামেডানের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও রনি তালুকদার। তবে দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৫ বলে ২৮ রান করে ফেরেন তামিম। রনি খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস।
তিন নম্বরে নেমে ৬৭ বলে ৪২ রান করেন মাহিদুল ইসলাম। ম্যাচের একমাত্র পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেন তাওহিদ হৃদয়। ৩ চার ও ২ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৭৬ বলে ৬৬ রান।
পরের ব্যাটসম্যানরা তেমন কিছু করতে না পারায় বেশি বড় হয়নি মোহামেডানের পুঁজি।
রূপগঞ্জের বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম নেন ৪ উইকেট।
রান তাড়ায় শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারায় রূপগঞ্জ। মাত্র ৫৭ রানে ৬ ব্যাটসম্যান ড্রেসিং রুমে ফিরে গেলে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় তারা।
লিগে তিন ইনিংসের মধ্যে দ্বিতীয়বার শূন্য রানে আউট হন সৌম্য সরকার। সব মিলিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে সবশেষ পাঁচ ইনিংসের চারটিতেই রানের খাতা খুলতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সপ্তম উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়েন জাকের আলি ও শেখ মেহেদি হাসান। ২৫ রান করে আউট হন জাকের। মেহেদির ব্যাট থেকে আসে ৪৩ রান।
৯.২ ওভারে ৩ মেডেনসহ ৩৮ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এর আগে ব্যাট হাতেও ২৫ রান করায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।
লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে তাসকিন আহমেদের শিকার ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫৩ (তামিম ২৮, রনি ৩৬, মাহিদুল ৪২, হৃদয় ৬৬, মুশফিক ১, আরিফুল ১৫, মিরাজ ২৫, সাইফ ১৯*, আবু হায়দার ১, তসকিন ৩, তাইজুল ২*; শরিফুল ১০-২-৫৪-৪, তানজিম ১০-০-৭০-২, মেহেদি ১০-১-৪০-১, তানভির ১০-০-৩৩-০, রিজওয়ান ৩-০-১৬-১, সাইফ ২-০-৯-০, সৌম্য ৫-০-২৭-১)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৩৭.২ ওভারে ১৫৯ (তানজিদ ১১, সাইফ ১১, সৌম্য ০, রিজওয়ান ১১, আফিফ ১৪, জাকের ২৫, আকবর ৪, মেহেদি ৪৩, তানজিম ১১, তানভির ৯*, শরিফুল ১৪; তাসকিন ৭-০-৪৩-৩, মিরাজ ৯.২-৩-৩৮-৪, আবু হায়দার ৬-১-৩০-০, তাইজুল ৯-০-৪০-১, সাইফ ৬-১-১৫-২)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৯৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ
গাজী গ্রুপের টানা চতুর্থ জয়
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ৯৪ রানে হারায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। মাত্র ১৮৩ রানের পুঁজি নিয়ে প্রাইম ব্যাংককে ৮৯ রানে গুটিয়ে দেয় এনামুল হকের নেতৃত্বাধীন দল।
মিরপুরে ৪২২ রানের ইতিহাস গড়ার পর দুই ম্যাচ মিলিয়ে আড়াইশও করতে পারল না প্রাইম ব্যাংক। পাঁচ ম্যাচে তাদের এটি তৃতীয় পরাজয়। হার দিয়ে যাত্রা শুরুর পর এ নিয়ে টানা চার ম্যাচ জিতল গাজী গ্রুপ।
ছোট রানের ম্যাচে দুই দলের কেউ পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি। এনামুলের ব্যাট থেকে আসে ম্যাচের সর্বোচ্চ ৪৮ রানের ইনিংস। ৪৪ বলে ৫ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন তিনি। এছাড়া আমিনুল ইসলাম ৩৫ রান করলে দুইশর কাছাকাছি পৌঁছায় গাজী গ্রুপ।
প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন নাহিদুল ইসলাম ও আরাফাত সানি।
রান তাড়ায় প্রথম বলেই বড় শটের খোঁজে আউট হন সাব্বির হোসেন। পঞ্চম ওভারে জাকির হাসান রান আউট হলে আরও বাড়ে প্রাইম ব্যাংকের বিপদ। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। আট নম্বরে নেমে দলের সর্বোচ্চ ২১ রান করেন রিশাদ হোসেন।
বাঁহাতি স্পিনে মাত্র ১২ রানে ৩ উইকেট নেন গাজী গ্রুপের আবু হাশিম। এছাড়া লিওন ইসলাম ও শেখ পারভেজ রহমানের ঝুলিতে জমা পড়ে ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৩.৪ ওভারে ১৮৩ (সাদিকুর ৮, এনামুল ৪৮, ওয়াসি ১৬, শামসুর ২, সালমান ০, আমিনুল ৩৫, তোফায়েল ২০, পারভেজ ৮, সাকলাইন ২৪, হাশিম ৬, লিওন ৭*; খালেদ ৮-০-৫৫-০, হাসান ৮.৪-১-২৩-২, নাহিদুল ৮-১-৪৬-৩, আরাফাত ৯-২-২২-৩, রিশাদ ৮-১-২৩-২, শামীম ২-০-১০-০)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ২৩.২ ওভারে ৮৯ (সাব্বির ০, নাঈম ১৫, জাকির ১১, শাহাদাত ১২, ইরফান ২, নাহিদুল ৬, শামীম ৪, রিশাদ ২১, খালেদ ৮, হাসান ০, আরাফাত ০*; শামসুর ১-০-৯-১, লিওন ৯-১-৩৮-২, পারভেজ ৭-১-১৭-২, হাশিম ৪.২-১-১২-৩, সাকলাইন ১-০-৫-০, তোফায়েল ১-০-৮-১)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৯৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আবু হাশিম