বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
Published : 09 Dec 2024, 09:04 AM
সপ্তাহ দুয়েক আগে আবু ধাবি টি-টেন ক্রিকেটে বিস্ফোরক এক সেঞ্চুরি করেছেন শেরফেইন রাদারফোর্ড। ১০ ওভারের ম্যাচে ১০ ছক্কায় করেছেন ৪০ বলে ১০৩ রান। টি-টোয়েন্টি, টি-টেনের ক্রিকেটার হিসেবেই ক্রিকেটবিশ্বে তার পরিচিতি। সেই তিনি এখন নিজের আলাদা পরিচয় গড়তে শুরু করেছেন। নতুন আঙিনায় পা রেখেই তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দিতে শুরু করেছেন। এবার বাংলাদেশও স্বাক্ষী হলো তার সেই দ্যুতির।
রাদারফোর্ড এখন ওয়ানডে ক্রিকেটের আকাশের উজ্জ্বল তারা। ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার শুরুতেই অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতেও সেই ছাপ রাখলেন আরও প্রবলভাবে।
সেন্ট কিটসে রোববার রাদারফোর্ড যখন ক্রিজে যান, ২৯৫ রান তাড়ায় তখন যথেষ্টই নড়বড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকেই দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন তিনি শেই হোপের সঙ্গে জুটিতে। অধিনায়ক হোপ যখন আউট হন, তখনও ৭৭ বলে ১০২ রান লাগে তাদের। রাদারফোর্ড সেই পথ পাড়ি দেন চোখের পলকে।
সাতটি চার ও আট ছক্কায় ৮০ বলে ১১৩ রান করে তিনি যখন আউট হন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন জয়ের দুয়ারে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম ইনিংসেই তিনি পেলেন প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ। আগের সাত ইনিংসে ফিফটি পাঁচটি!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তার টি-টোয়েন্টি অভিষেক সেই ২০১৮ সালে। এই সংস্করণই মূলত খেলে আসছিলেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছিলেন ক্রিকেট বিশ্বময়। টি-টোয়েন্টি অভিষেকের ছয় বছর পর গত ডিসেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক তার।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেদিন ৬ রানে আউট হয়ে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পরের ম্যাচে প্রথম ফিফটির দেখা পেয়ে আউট হন ৬৩ রানে। তৃতীয় ম্যাচে আবার ব্যর্থ (৩)।
এরপর গত অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা সফরে দুর্দান্তভাবে নিজেকে মেলে ধরেন। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত থাকেন ৭৪ রান করে, পরের ম্যাচে করেন ৮০। শেষ ম্যাচে ২৬ বলে অপরাজিত ৫০।
এরপর গত মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে কেবল একবার ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে করেন ৩৬ বলে ৫২।
সেই রেশকে সঙ্গী করে এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সেঞ্চুরি। তার টানা পঞ্চম পঞ্চাশ ছোঁয়া স্কোর। পরের ম্যাচে ফিফটি করতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টানা পঞ্চাশ ছোঁয়ার রেকর্ডে তিনি স্পর্শ করবেন গর্ডন গ্রিনিজ ও ক্রিস গেইলকে।
সব মিলিয়ে ৮ ইনিংসে তার ব্যাটিং গড় ৭৩.৮৩, স্ট্রাইক রেট ১১১.৩০।
“মূল ব্যাপার হলো কঠোর পরিশ্রম করা। নিজের খেলা নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করি আমি। সেভাবেই চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে এবং ভালো পারফর্ম করার জন্য নিজেকে সম্ভাব্য সেরা সুযোগ দিতে। ভালো লাগছে যে, সেসব কাজে দিচ্ছে।”
বাংলাদেশের বিপক্ষে এই ইনিংসে শুরুতে বেশ সাবধানী ছিলেন রাদারফোর্ড। প্রথম ২৯ বলে তার রান ছিল ১৯। থিতু হয়ে পরে হাত খুলে পুষিয়ে দেন দারুণভাবেই। ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বললেন, নিজের ওপর এই বিশ্বাসটুকু তার আছে।
“শুরুতে চেষ্টা করেছি ফাঁকা জায়গায় বল পাঠাতে, ভালো তাড়না নিয়ে খেলতে, রানিং বিটুইন দা উইকেট ভালো করতে। আমি জানতাম যে, শুরুটা মন্থর করলেও পরে পুষিয়ে দিতে পারব খুব ভালোভাবেই।”
তা তিনি পেরেছেন বটে। ২৯ বলে ১৯ রান থেকে খেলার ধারা বদলে ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি ৪৭ বলে। পঞ্চাশ থেকে একশতে যেতে বল লাগে মাত্র ৩০টি।
তাকে থামাতে শর্ট বলের কৌশল নেয় বাংলাদেশ। কয়েকবার তিনি অস্বস্তিতেও পড়েন। তবে পরে শর্ট বলকেও তুলাধুনা করে ছাড়েন। ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি তো অবধারিতই ছিল।
শেষটায় তিনি যা বললেন, তাতে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ নিয়ে প্রমাদ গুনতে পারেন বাংলাদেশের বোলাররা।
“ধারাবাহিক হতে চাই আমি এবং স্রষ্টার ইচ্ছায় আশা করি, এভাবেই রান করে যেতে পারব।”