Published : 02 Feb 2025, 05:57 PM
জাতীয় নির্বাচক কমিটিতে যোগ দেওয়ার এক বছরও পূরণ হয়নি এখনও। দায়িত্বটা উপভোগও করছেন হান্নান সরকার। তবে ভবিষ্যতের হাতছানিও দেখতে পাচ্ছেন তিনি। সেই সম্ভাবনার পথে এখনই হাঁটা শুরু করতে চান সাবেক এই ওপেনার। তাই নির্বাচক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি।
আট বছর বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করার পর গত ১ মার্চ জাতীয় নির্বাচক কমিটিতে যোগ দেন হান্নান। এই মাস দিয়েই শেষ হচ্ছে তার দায়িত্ব।
নির্বাচকের কাজ ছেড়ে হান্নান ফিরছেন তার পুরোনো পেশা কোচিংয়ে। এটিকেই তিনি ভবিষ্যতের পাথেয় করে নিতে চান। ৪২ বছর বয়সী সাবেক এই ওপেনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, অনেক দিন ধরেই এটা তার ভাবনায় ছিল।
“গত বছরের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূধর্ব-১৯ বিশ্বকাপ শেষে যখন ফিরলাম দেশে, তখন থেকেই আমার কোচিংয়ে ফেরার পরিকল্পনা ছিল। বিসিবিতে চিঠি দিয়েছিলাম, প্রায় চূড়ান্ত ছিল। পরে যখন জাতীয় নির্বাচক কমিটিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব এলো, তখন ভাবলাম, আট বছর জুনিয়র নির্বাচক ছিলাম, তাহলে জাতীয় দলে করি।”
“এক বছর এটা করলাম। সবার সঙ্গে সবকিছু খুব ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এটা তো আসলে দীর্ঘমেয়াদি কোনো ক্যারিয়ার নয়। সর্বোচ্চ হয়তো চার-পাঁচ বছর থাকতে পারি। তার পর তো সরতেই হবে। তখন অন্য কিছু চিন্তা করতেই হবে। সেই চিন্তা চার বছর পরে না করে আমি এখন করছি।”
জাতীয় নির্বাচকরে দায়িত্বটি বাংলাদেশের বাংলাদেশের বাস্তবতায় বেশ আকর্ষক এবং অনেকের জন্য কাঙ্ক্ষিতও। যদিও কাঁটার আঘাতও কিছু পেতে হয় এখানে, তবে ফুলের সুবাসও মোহনীয়। তবে হান্নান আবার মাটির ছোঁয়া পেতেই বেশি আগ্রহী।
“জাতীয় নির্বাচকের কাজটা অবশ্যই আকর্ষণীয় এবং বেশ সম্মানের একটি দায়িত্ব। তবে শুধু সম্মানের জন্য তো দীর্ঘদিন এটা চালিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। দীর্ঘসময় দায়িত্বে থাকলে আসলে সম্মানটাও থাকে না।”
“আমার যে সামর্থ্য আছে, আমার বিশ্বাস যে, কোচিংয়ে গেলে ভালো করতে পারব। ক্রিকেটারদের সঙ্গে তো কাজও করেছি নির্বাচক থাকার সময়। সেই জায়গা থেকে মনে হয়েছে, এখনই সামনে তাকানো উচিত। নিজের দিক থেকে মনে হয়েছে, এসি রুমে বসে না থাকে মাঠের ক্রিকেটে কাজ করতে পারলে আমি বেশি অবদান রাখতে পারব।”
খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হওয়ার আগেই ২০১০ সালে বিসিবির লেভেল ওয়ান ও পরের বছর লেভেল টু কোচিং কোর্স করেছেন হান্নান। বাংলাদেশের হয়ে ১৭ টেস্ট ও ২০ ওয়ানডে খেলা ব্যাটসম্যান পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচ হিসেবে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন। প্রথম দুই বিপিএলে দুরন্ত রাজশাহীর সহকারি কোচ ছিলেন তিনি। পরে রাজশাহীরই আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি রাজশাহী কিংসে একই দায়িত্ব পালন করেছেন দুই দফায়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্যাটিয কোচ হিসেব কাজ করেছেন আবাহনী লিমিটেড ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। এছাড়াও জাতীয় লিগে ঢাকা মেট্রোর প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। কাজ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগেও।
আগামী মাসে শুরু হবে ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই নতুন করে কোচ হিসেবে পথচলা শুরু করবেন তিনি।
“প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে শুরু করার ইচ্ছে আছে। কথা হচ্ছে, চূড়ান্ত কিছু বলতে চাই না এখনই। তিনটি দলের সঙ্গে কথা হচ্ছে। কোন দলটা কেমন গড়া হয়, সেটির ওপরও নির্ভর করতে পারে। ভালো একটা দলকে কোচিং করাতে টাই। এতদিন পর কোচিংয়ে ফিরব, সতর্কভাবেই দল বাছাই করতে হবে।”
তার মুল লক্ষ্য অবশ্য ক্রিকেট বোর্ডে কোচ হিসেবে কাজ করা। সম্প্রতি দেশের কোচদের যেভাবে গুরুত্ব ও সম্মান দিচ্ছে, এটিও তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে জাতীয় নির্বাচকের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সাহস জোগাতে।
“আমার ইচ্ছে আছে ক্রিকেট বোর্ডে কাজ করার (কোচ হিসেবে)। ক্রিকেট বোর্ড যদি মনে করে, তাহলে আলোচনায় যাব। ক্রিকেট বোর্ড না হলে তো অন্য দিকে চিন্তা করতেই হবে। এই মাসটা তো আছি নির্বাচক প্যানেলে, এর মধ্যেই হয়তো অন্য দিকটি গুছিয়ে নিতে পারব।”
“বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে দেশি কোচদের নিয়ে। দেশের কোচদের ভালোভাবে মূল্যায়ন করছেন তারা। আমি যদি বোর্ডে কাজ করতে পারি, আশা করি ভালো কিছু করতে পারব।”
বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের কোচ থেকে একসময় তিনি নিজেকে দেখতে চান বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যই নিজেকে পোক্ত করে তোলার অভিযান শুরু করছেন তিনি।
“একজন ক্রিকেটার যখন একটা পর্যায়ে খেলে, তার স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলা। আমি যখন কোচিংয়ে ফিরছি, অবশ্যই বাংলাদেশের টপ জায়গায় কাজ করতে চাইবই, এটা স্বাভাবিক। সেটার জন্য আমাকে নিজেকে নিশ্চিতভাবেই প্রস্তুত করতে হবে। আমি নিজেকে কতটা সমৃদ্ধ করতে পারব, কতটা শিখতে ও জানতে পারব, ক্রিকেটারদের কতটা কাজে লাগতে পারব, এটার ওপরই নির্ভর করবে কতটা সামনে এগোতে পারব। এভাবে যদি পারি, একটা সময় অবশ্যই চাইব (জাতীয় দলে কাজ করতে)। তবে অবশ্যই নিজেকে সেই জায়গায় নিতে হবে।”
জুনিয়র ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৯ বছর নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করে বড় তৃপ্তির অধ্যায়টুকুর কথা শোনালেন হান্নান।
“বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম বড় অর্জন যেটা, ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়, সেটার অংশ হতে পারা, পুরো প্রক্রিয়ায় থাকতে পারা একটা গর্বের জায়গায়। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে প্রথম শিরোপাও আমার হাত ধরে এসেছে, নির্বাচক হিসেবে। এই দুটি বড় তৃপ্তির জায়গা।”