Published : 11 May 2025, 05:49 PM
গত বছরের বিপিএলের পর ক্যারিবিয়ান সফরে লিটন কুমার দাসের অধিনায়কত্ব খুব কাছ থেকে দেখেছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এবার টি-টোয়েন্টিতে পূর্ণ মেয়াদে একসঙ্গেই কাজ করবেন তারা। জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মনে করেন, অধিনায়ক হিসেবে কৌশলের দিক থেকে বেশ এগিয়ে লিটন। ফল পাওয়ার জন্য তাই তাকে সমর্থন দিতে বললেন সালাউদ্দিন।
২০২১ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে তিন সংস্করণেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিটন। পূর্ণ মেয়াদে এবারই প্রথম তাকে দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত এই সংস্করণে লিটনের নেতৃত্বে খেলবে বাংলাদেশ।
বিপিএলের ২০২৪ সালের আসরে লিটনের নেতৃত্বে ফাইনালে খেলেছিল কুমিল্লা। প্রধান কোচের দায়িত্বে থেকে ওই আসরে নিবিড়ভাবে কাজ করেন সালাউদ্দিন। পরে গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও অধিনায়কত্ব করেন লিটন।
ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করা ওই সিরিজ দিয়ে সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু করেন সালাউদ্দিন। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বা জাতীয় দলের ওই সিরিজ ছাড়াও ছোটবেলা থেকেই লিটনকে কাছ থেকে দেখছেন দেশের অভিজ্ঞ এই কোচ।
সামনের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরেও একসঙ্গে কাজ করবেন লিটন ও সালাউদ্দিন। গত সপ্তাহ থেকে চলছে ওই সফরের প্রস্তুতি। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববারের অনুশীলন শুরুর আগে নতুন অধিনায়কের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো নিয়ে বললেন সালাউদ্দিন।
“অধিনায়ক হিসেবে লিটনের শক্তির জায়গা... সে খুব ভালো ট্যাকটিশিয়ান। বোলারের শক্তি সম্পর্কে তার ভালো ধারণা আছে। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে খুব ভালো বিশ্লেষণ করে। কীভাবে ফিল্ড সেট-আপ করতে হবে, খেলাটা এগিয়ে নিতে হবে, ব্যাটিংটা এগিয়ে নিতে হবে- সেই সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে। উইকেট বলেন, বোলার সামলানো বলেন, দল সামলানো বলেন- সবকিছুই তার ভালো।”
“আর দুর্বলতার কথা যদি বলেন, এখন যেহেতু কিছু দিন ধরে সে রান করেনি। এটা হয়তো আপাতত তার দুর্বলতা আছে। তবে আমি মনে করি সে এটা থেকে বেরিয়ে আসবে।”
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে লিটনের ফর্ম তেমন ভালো নয়। ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করার পথে নেতৃত্ব দিলেও ওই সিরিজের তিন ইনিংসে তার রান ছিল মাত্র ১৭। সবশেষ ২৪ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তার ফিফটি স্রেফ একটি।
অধিনায়কত্বের পাশাপাশি তাই ব্যাট হাতেও লিটনের ফর্মে ফেরার গুরুত্বের কথা বলেন সালাউদ্দিন। পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়ক হওয়ার নতুন এই দায়িত্বে কাজটা একদমই সহজ নয় সেটি লিটনকে মনে করিয়ে দিলেন জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ।
“বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আসলে পুরো দেশের অধিনায়ক। এটা আমাদের মানতে হবে। অনেকে হয়তো অনেককে অপছন্দ করেন, অনেক অধিনায়ককে দেখলে হয়তো মাথা গরম হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করাটা, বাইরে থেকে মনে হতে পারে অনেক সহজ। কিন্তু এটা অনেক কঠিন কাজ। এটার জন্য আমাদের সবারই আসলে সমর্থন করতে হবে।”
তবে লিটনের অধিনায়কত্বে পূর্ণ আস্থাই আছে সালাউদ্দিনের। ভালো ফল পাওয়ার জন্য সবার কাছ থেকে সমর্থন চাইলেন তিনি।
“অধিনায়কত্বের যেসব গুণ দরকার, যেভাবে দলকে এগিয়ে নেওয়া দরকার, কৌশলগত দিক- সব দিকেই সে খুব ভালো। চেষ্টা করছে দলটাকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়। অধিনায়কই দলটা চালাবে। আমরা যারা পাশে আছি, তাকে সমর্থন দিতে হবে, সেই স্বাধীনতা দিতে হবে। তাহলে সে ভালো করবে।”
“নেতা কিন্তু গিয়েই ভালো হতে পারে না। আবার সবাই নেতা হতেও পারে না। অধিনায়কত্ব যখন কেউ করে, সে কিন্তু পুরো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। তার ওপর অনেক চাপ থাকে। তাকে সমর্থন দেওয়াটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
এসময় সাকিব আল হাসানের উদাহরণ এনে সালাউদ্দিন জানান, বাইরে থেকে খুব বেশি মিশুক মনে না হলেও, দলের ভেতরে নিজের কাজটা ভালোভাবেই করেন লিটন।
“লিটনকে আমরা সবসময় একটু অন্যভাবে দেখি। কথা কম বলে দেখে অন্য রকম মনে করি। যারা কাছ থেকে মেশে, তাদের সেই ভুল ধারণা থাকে না। একসময় সাকিবকে নিয়ে এই ভুল ধারণাটা ছিল। বাইরে থেকে মনে হতে পারে যে, তারা হয়তো অনেক কিছুই ঠিক মতো করে না। তবে একজন সতীর্থ ও অধিনায়ক হিসেবে যা কিছু করার, তার চেয়ে বেশিই সে করে।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে সালাউদ্দিনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, বাংলাদেশে অধিনায়কত্ব করা কেন কঠিন? উত্তরে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন অভিজ্ঞ এই কোচ।
“আমরা সবাই মিলে পারফর্ম করি না। এটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের যদি অনেক পারফর্মার থাকত, তাহলে কিন্তু অধিনায়কত্ব করাটা সহজ হয়ে যেত। আমাদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা নেই। সেটা আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। এটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।”
“একইসঙ্গে আমরা জাতি হিসেবে অনেক আবেগপ্রবণ। এটা ব্যক্তিগতভাবে অনেক কষ্ট হয় মাঝেমধ্যে। তবে এই পরিপক্বতা চলে আসবে দ্রুতই। তবে অধিনায়ক হিসেবে এই চাপটা নিতে হবে। পারফরম্যান্সের গ্রাফ ওপরের দিকে উঠলে তার জন্য সহজ হবে।”