Published : 08 Jun 2025, 11:51 AM
টানা তিন মাস ব্যাটিং অনুশীলন করেননি স্টিভেন স্মিথ। কল্পনা করা যায়? গোটা ক্রিকেটবিশ্ব তাকে চেনে ব্যাটিং নিয়ে মোহগ্রস্ত একজন হিসেবে। ব্যাটিং না করে তিনি থাকতে পারেন না। কাজেই এত লম্বা সময় তিনি ব্যাটিং করবেন না, খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয় তা। তবে স্বয়ং স্মিথই যখন বলছেন, বিশ্বাস তো করতেই হয়!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে গত ৪ মার্চ ভারতের বিপক্ষে দুবাইয়ে ৭৩ রান করে মোহাম্মদ শামির ফুল টসে বোল্ড হন স্মিথ। পরে ওই ম্যাচ হেরে বিদায় নেয় তার দল। এরপর অস্ট্রেলিয়ার আর কোনো খেলা ছিল না।
এই সময়টায় ক্রিকেট দুনিয়ার মূল ব্যস্ততা ছিল আইপিএল ঘিরে। অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্রিকেটার ছিলেন সেখানে। কিন্তু স্মিথ দল পাননি। ক্যামেরন গ্রিন, বাউ ওয়েবস্টার, মার্নাস লাবুশেন, ব্রেন্ডান ডগেটসহ অস্ট্রেলিয়ার কিছু ক্রিকেটার ব্যস্ত ছিলেন কাউন্টি ক্রিকেটে। মে মাসের শেষ দিকে ব্রিজবেনে অনুশীলন শুরু করেছেন দেশে থাকা ক্রিকেটারদের কেউ কেউ। এই পুরো সময় স্মিথ ছিলেন নিউ ইয়র্কে!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, টানা প্রায় তিন মাস ব্যাট হাতে নেটে যাননি স্মিথ। যুক্তরাষ্ট্রে স্রেফ ছুটি কাটিয়েছেন বা ঘুরে বেরিয়েছেন এমন অবশ্যই নয়। নতুন ব্যক্তিগত ট্রেনারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এরপর কদিন আগে ইংল্যান্ডে পৌঁছে বেকেনহ্যামে দলের প্রথম অনুশীলন সেশনে ব্যাট করেছেন। লম্বা বিরতির পর প্রথমবার!
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্মিথ ও অস্ট্রেলিয়া। এর ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি শোনালেন ব্যাটিংবিহীন সময়ের গল্প।
“এমনিতে বাড়িতে ব্যাট পড়েই ছিল এখানে-সেখানে এবং কখনও কখনও তা তুলে নিয়েছি, ব্যাট করার মতো ভঙ্গি করেছি। কিন্তু সচেতনভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ব্যাটিং অনুশীলন না করতে ও স্রেফ দূরে থাকতে। আমার জন্য এটা ভালো হয়েছে।”
“চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মোহাম্মাদ শামির ফুল টস মিস করার পর একবারও বলে হিট করিনি। সৌভাগ্যবশত, সবকিছুই দারুণভাবে কাজে লেগে গেছে (ফেরার পর প্রথম অনুশীলনে)। মনে হচ্ছে, খুব ভালোভাবে বিচরণ করতে পারছি। নিজেকে আরও শক্তিশালী মনে হচ্ছে এবং এখন নেমে পড়তে পুরো তৈরি।”
ব্যাটিংয়ে ফেরার পর প্রস্তুতি এখনো পর্যন্ত যেভাবে হয়েছে, তিনি নিজেও নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন নতুন রূপে।
“আমার ক্ষেত্রে সাধারণত যেটা হয়, প্রথম হিট ভালো হয়, দ্বিতীয় হিট জঘন্য হয়, এরপর সেখান থেকে ক্রমে ভালো হতে থাকে। কিন্তু এবার প্রথম দুটি হিটই ছিল সত্যিই ভালো এবং আমার মনে হচ্ছিল, এখান থেকে আবার উল্টে না গেলেই হয়! আগামী দুই দিন নেটে বাড়তি সময় যেন না কাটাতে হয়।”
স্মিথ জানালেন, ২০১৪ সালের পর শারীরিকভাবে এতটা শক্তিশালী তিনি অনুভব করেননি। তার শরীর আরও সক্রিয় হয়েছে, গতিশীলতা বেড়েছে বলে অনুভব করছেন। তার ধারণা, বাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও এটা সহায়তা করবে, বিশেষ করে স্লিপে।
ক্যারিয়ার লম্বা করতেই এমন ফিটনেস ট্রেনিং কি না, প্রশ্নটিও উঠে যাচ্ছে। এই বছরের শেষে অ্যাশেজ আছে অস্ট্রেলিয়ায়। ইংল্যান্ডে ফিরতি অ্যাশেজ ২০২৭ সালে। কদিন আগে ৩৬ পূর্ণ করা স্মিথকে কি দখা যাবে ২০২৭ অ্যাশেজে?
গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ব্যাটসম্যান বললেন, সময়ের হাতেই তিনি তুলে রেখেছেন সব।
“এতটা দূরে এখন নিশ্চিতভাবেই তাকাচ্ছি না। প্রতিটি দিন ধরে এগোচ্ছি। যতদিন আমি উপভোগ করছি, ভালো ব্যাটিং করছি এবং দলে অবদান রাখছি, ততদিন আমি বেশ খুশি। ওটা (২০২৭ অ্যাশেজ) এখনও বেশ দূরের পথ।”
ইংল্যান্ডে স্মিথের রেকর্ড এমনিতে দারুণ। ইংল্যান্ডে তার ব্যাটিং গড় ৫৫। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের ভেন্যু লর্ডসে তার পারফরম্যান্স তো আরও ভালো। এখানে তার ব্যাটিং গড় ৫৮.৩৩। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি এখানেই। এই মাঠে সবশেষ টেস্টেও করেছন সেঞ্চুরি।
ক্রিকেট-তীর্থে আবারও ভালো করতে তিনি মুখিয়ে আছেন। মজা করলেন এই মাঠের লাঞ্চ নিয়েও।
“সিডনির বাইরে এটিই (লর্ডস) সম্ভবত আমার প্রিয় মাঠ। এখানকার ঐতিহ্য, উইকেটের ধরন… মানিয়ে নিতে কিছু বল লেগে যায়। এক প্রান্তে দাঁড়ালে মনে হয়, বেশ লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আরেক প্রান্তে মনে হয় কিছুটা ভারসাম্য হারাচ্ছি। তবে বল সব দিকেই দারুণ গতিতে ছুটে যায়।”
“এখানকার লাঞ্চ তো দুর্দান্ত। তারা সবসময় বলে থাকেন, ‘এই জায়গাকে মিস করতেই হবে, কাজেই লাঞ্চ উপভোগ করে নাও।’ সৌভাগ্য হোক আর দুর্ভাগ্য, গত কয়েক বছরে এখানে সত্যিই ভালো খেলেছি। কাজেই ওই সুযোগটা সেভাবে কাজে লাগাতে পারিনি!”
অস্ট্রেলিয়া ও স্মিথ অবশ্য চাইবেন, এবারও যেন এখানে লাঞ্চ ভালোভাবে করা না হয়, বেশির ভাগ সময় যেন মাঠেই থাকেন!
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল শুরু বুধবার।