Published : 28 May 2025, 05:45 PM
শেপো এনটুলির সঙ্গে রিপন মণ্ডলের হাতাহাতির পর মাঠে যেন বেড়ে গেল উত্তেজনা। শেষের ব্যাটসম্যানদের টানা বাউন্সার দিতে শুরু করলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দলের পেসাররা। সেই চ্যালেঞ্জ সামলে সাড়ে তিনশ ছাড়াল বাংলাদেশ। পরে বল হাতেও সফরকারীদের দারুণ জবাব দিলেন রিপন মন্ডল, রকিবুল হাসানরা।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচে দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৫২ রান। বাংলাদেশের চেয়ে ২১৯ রানে পিছিয়ে তারা। ফলো-অন এড়াতে প্রয়োজন আরও ৭০ রান।
৭ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে বুধবারের খেলা শুরু করা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত থামে ৩৭১ রানে। দলকে সাড়ে তিনশ পার করানোর কারিগর লেজের তিন ব্যাটসম্যান রকিবুল, রিপন ও মেহেদি হাসান। তাদের দারুণ লড়াইয়ে এ দিন আরও ১২৯ রান যোগ করে বাংলাদেশ।
স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ওপেনার ইফতেখার হোসেনের সেঞ্চুরির পরও প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান মিলে করতে পারেন মাত্র ১১৯ রান। বাকি পাঁচ জনের কেউ দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি।
আর শেষের পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই খেলেন ত্রিশছোঁয়া ইনিংস। সব মিলিয়ে তাদের ব্যাট থেকে আসে ২০৯ রান। এর সঙ্গে অতিরিক্ত পাওয়া ৪৩ রানের সৌজন্যে ৩৭০ ছাড়ায় স্বাগতিকরা।
নতুন দিনে প্রথম ঘণ্টায় উইকেট পড়তে দেননি রকিবুল ও রিপন। পানি পানের বিরতির পর কোবানি মোকোয়েনার শর্ট বলে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে দিনের প্রথম ছক্কা পেয়ে যান রকিবুল।
পরের বলে আবার পুল করার চেষ্টায় লাগে তার ব্যাটের কানায়। শর্ট কাভারে সহজ ক্যাচ নেন ডিয়ান ফরেস্টার। ৪৫ রানে ভাঙে জুটি। ৩১ রান করে ফেরেন রকিবুল।
পরের ওভারে এনটুলির বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা মারেন রিপন। এর পরপরই বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান এই দুজন। যা চোখের পলকে গড়ায় হাতাহাতিতে। একপর্যায়ে আম্পায়ারের বাধাকে পাত্তা না দিয়ে রিপনের হেলমেট ধরে টানাটানি করতে থাকেন এনটুলি। তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর দুই আম্পায়ারের মধ্যস্থতায় নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি।
দুই বল পর রিপনের শরীর বরাবর থ্রো করেন প্রোটিয়া অফ স্পিনার। ব্যাট দিয়ে ঠেকিয়ে আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচেন রিপন।
উত্তেজনাপূর্ণ ওই ওভার রিপনকে দমাতে পারেনি। বরং আরও দুটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মেরে ফিফটির খুব কাছে পৌঁছে যান তিনি। অন্য প্রান্তে মেহেদিও দারুণ সঙ্গ দিলে প্রথম সেশনে আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর টিকতে পারেননি রিপন। সেই এনটুলির বলেই ক্রিজ ছেড়ে মারার চেষ্টায় স্টাম্পড হন তিনি। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৮১ বলে করেন ৪৩ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ৬৭ রানের নবম উইকেট জুটি।
এরপর নাঈম আহমেদের সঙ্গে জুটিতে ১৯ রান যোগ করেন মেহেদি। আন্দিলে মোগাকানের বেশ কয়েকটি শর্ট বলে পরাস্ত হওয়ার পর স্লোয়ারে ক্যাচ আউট হন নাঈম। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৮ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন মেহেদি।
প্রোটিয়াদের হয়ে ৪২ রানে ৪ উইকেট নেন মোগাকানে। ৪০ ওভার হাত ঘুরিয়ে এনটুলি পান ৩ উইকেট।
ইনিংসজুড়ে এলোমেলো বোলিংয়ে মোট ১৭টি 'নো' বল করে সফরকারীরা। এর মধ্যে মোকোয়েনা একাই করেন ১০টি।
ব্যাটিংয়ে নেমে ইতিবাচক শুরু করেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার মুহাম্মদ মানাক ও মিকা-এল প্রিন্স। ওভারপ্রতি চারের কাছাকাছি রান করতে থাকেন তারা। দ্বাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রিন্সকে আউট করে ৪৮ রানের জুটি ভাঙেন নাঈম।
তবে অন্য প্রান্তে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন মানাক। ৮ চারে ৬৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। রোমাশান পিল্লের সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেও আসে ৪৮ রান। মেহেদির ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন ২৯ রান করা পিল্লে।
মানাককে থামান রকিবুল। লেগ স্টাম্পের ওপর হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি স্কুপ করার চেষ্টায় বোল্ড হন ৫৪ রান করা ওপেনার।
পরপর দুই ওভারে রিচার্ড সেলেতসোয়ানে ও ডেওয়ান মারাইসকে আউট করে প্রোটিয়াদের চাপে ফেলে দেন রিপন। পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করা মোগাকানেকে দুই ওভার ফিরিয়ে দেন রকিবুল।
শেষ দিকে আলোকস্বল্পতায় আগেভাগে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। কনর এস্তেহেইজেন ও জর্জ-ফন হিয়ার্ডিন তৃতীয় দিনে ফলো-অন এড়ানোর লড়াইয়ে নামবেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ইমার্জিং ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৪২/৭) ১২১.৪ ওভারে ৩৭১ (রকিবুল ৩১, রিপন ৪৩, মেহেদি ৪৪*, নাঈম ০; ফরেস্টার ২০-৬-৩৩-১, মোকোয়েনা ১৪-০-৭১-২, পিল্লে ৭-১-২৮-০, এনটুলি ৪০-১০-১০৮-৩, মোগাকানে ২১.৪-৫-৪২-৪, ফন হিয়ার্ডিন ১২-২-৩৮-০, মানাক ৭-০-২৯-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং ১ম ইনিংস: ৪২.৩ ওভারে ১৫২/৬ (মানাক ৫৪, প্রিন্স ১৭, পিল্লে ২৯, সেলেতসোয়ানে ১৯, মারাইস ৫, মোগাকানে ২০, এস্তেহেইজেন ৬*, ফন হিয়ার্ডিন ০*; রিপন ১০.৩-১-৩৫-২, মেহেদি ৮-৩-১৬-১, রকিবুল ১৩-১-৬৩-২, নাঈম ১১-১-৩৮-১)