Published : 30 Oct 2022, 01:57 PM
‘এর আগে কখনও এমন কিছু দেখিনি’ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই একই কথা জানালেন তাসকিন আহমেদ, ক্রেইগ আরভিন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বরাবরের মতো এক্ষেত্রেও কিছুটা ভিন্ন সাকিব আল হাসান। সম্ভাব্য বিপদের আঁচ করতে পেরে তিনি সতর্ক করেছিলেন কিপার নুরুল হাসান সোহানকে।
ব্রিজবেনে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে ফল এসেছে শেষ বলে। সরাসরি ‘শেষ বল’ বললে আসলে ভুল হবে। কারণ, নাটকীয় ম্যাচে শেষ বলটি করতে হয়েছে দুইবার। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের আত্মবিশ্বাসী বোলিংয়ে দুইবারই হেসেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেট ১৫০ রান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ৭১ রান করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরে তাসকিন আহমেদ ১৯ রানে ৩ ও মুস্তাফিজুর রহমান ১৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে চাপে ফেলে দেন। শেষ ওভারে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান।
অধিনায়ক সাকিব শেষ ওভারের দায়িত্ব দেন মোসাদ্দেককে। প্রথম বলে ১ রান নেন রায়ান বার্ল। দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে অক্কা পান ব্র্যাডলি ইভান্স। পরের বলটি রিচার্ড এনগারাভার বাহুতে লেগে উইকেটের পেছন দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। সমীকরণ দাঁড়ায় তিন বলে ১১ রানে।
ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন এনগারাভা। পঞ্চম বলে আবারও বড় শটের আশায় উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। সহজ সুযোগ পেয়ে স্টাম্পিং করেন সোহান। তখন সোহানকে সতর্ক করেন সাকিব।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে সাকিব জানান, তার মনে হচ্ছিল, বল ধরার সময় স্টাম্পের খুব কাছে চলে এসেছিলেন সোহান।
“যখন দ্বিতীয় শেষ বল (ওভারের পঞ্চম বল) করা হলো এবং সোহান স্টাম্পিং করল, আমি তখন বলছিলাম, 'তুই (সোহান) স্টাম্পের খুব কাছে, পরেরবার সাবধান থাকিস।' পরে থার্ড আম্পায়ার চেক করলেন! আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না (হাসি)।”
এনগারাভা আউট হওয়ার পরই ঘটে ম্যাচের সেই আলোচিত ঘটনা। ১ বলে ৫ রানের সমীকরণ মেলাতে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ঘুরিয়েছিলেন নতুন ব্যাটসম্যান ব্লেসিং মুজারাবানি, পারেননি সংযোগ ঘটাতে। বল ধরে তড়িৎবেগে স্টাম্প ভেঙে দেন সোহান। বাংলাদেশ দল মাতে জয়ের আনন্দে।
তবে লেগ আম্পায়ার দ্বারস্থ হন থার্ড আম্পায়ারের। টিভি রিপ্লে চলতে চলতে মাঠ ছেড়ে যান দুই দলের ক্রিকেটাররা। তখন থার্ড আম্পায়ার জানান, স্টাম্পের সামনে থেকে বল ধরেছেন সোহান। তাই ‘নো’ বল ডাকা হয় সেটিকে। আবার মাঠে ফিরতে হয় দুই দলের সবাইকে।
দ্বিতীয়বার শেষ বল করতেও আত্মবিশ্বাস হারাননি মোসাদ্দেক। বরং চিন্তায় পড়ে যাওয়া সাকিবকে নির্ভার করেন এ ডানহাতি অফস্পিনার। প্রায় একই ধরনের ডেলিভারিতে মুজারাবানিকে আবারও পরাস্ত করে দলকে ৩ রানের জয় এনে দেন তিনি। শেষ বলের আগের পরিস্থিতি জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“শেষ বলের আগে (নো বলের পরে) আমি মোসাদ্দেকের কাছে গেলাম। সে আমাকে বলে, ‘চিন্তার কিছু নেই। আমার নিয়ন্ত্রণে আছে সব। সে (মুজারাবানি) ব্যাটেই লাগাতে পারবে না।’ এটি আমাকে কিছুটা শান্ত করেছে। তবে ভেতরে ভেতরে আমি নার্ভাস ছিলাম। ম্যাচটি খুব ভালো ছিল। দুই দল শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। দর্শকদের জন্যও খুব ভালো।”
জয়ী অধিনায়ক হিসেবে মুখে হাসি নিয়েই কথাগুলো বলতে পেরেছেন সাকিব। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনের পক্ষে তা সম্ভব ছিল না। দুইবার যে হতাশায় পুড়তে হয়েছে তাদের!
“এটি সত্যিই অদ্ভুত ছিল। আমি এর আগে কখনও এমন কিছু দেখিনি। এই বিশ্বকাপে সম্ভাব্য সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। আমরা আসলে ভেবেছিলাম, এটি হয়তো আমাদের সুযোগ হিসেবে এসেছে। শেষ বলে হয়তো বাউন্ডারি মারা যেতে পারে। কৃতিত্ব অবশ্যই বাংলাদেশের। তারা দারুণ বোলিং করেছে, দারুণ ফিল্ডিং করেছে।”
প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেটসহ চার ওভারে এক মেডেন দিয়ে ৩ উইকেট পাওয়া তাসকিনের হাতে ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। চলতি বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো এ স্বীকৃতি গ্রহণ করে তিনি জানালেন, পুরো ক্যারিয়ারে এমন কিছু এবারই প্রথম দেখলেন।
“আমরা সেই শেষ বলের (নো বল) পর কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আমার ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম দেখলাম যে, মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর আবার মাঠে নামতে হলো। শেষ পর্যন্ত জিততে পেরেছি। খুব ভালো খেলা হয়েছে।”
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে একই কথা জানালেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা শান্ত। শেষ পর্যন্ত ফল নিজেদের পক্ষে আসায় স্বস্তির কথা জানালেন এ বাঁহাতি ওপেনার।
“আমি কখনও এমন দেখিনি। আমার জন্য একদম নতুন। আমার মনে হয়, আমাদের সবার জন্যই একদম নতুন একটা অভিজ্ঞতা। দিন শেষে ফলটা আমাদের পক্ষে এসেছে।”