Published : 09 Jul 2024, 12:09 PM
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুল হাসান ও তার স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ জেবুননেছা মঙ্গলবার এ আদেশ দেন বলে দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু জানান।
কামরুল হাসান বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিওএম) পদে আছেন। এর আগে তিনি নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশানর (প্রসিকিউশন) এবং অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম) পদে কর্মরত ছিলেন।
দুদকের অভিযোগ, পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস মেলেনি।
দুদকের অনুসন্ধানে এই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর নামে একাধিক জমি, ফ্ল্যাট, যৌথ মালিকনাধীন ভবনে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন স্থাবর অস্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে, যা তার আয়ের সাথে ‘সঙ্গতিপূর্ণ নয়’।
তাদের সম্পদ ক্রোকের আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করতে গত ২৬ মে অনুমোদন দেয় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়।
দুদকের উপ-পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই অনুমোদনে বলা হয়, “অভিযোগ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান এর নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ ক্রোকের জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করতে কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন আদালতে করা আবেদনে বলেন, “প্রাথমিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাখিলের পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ তাদের নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত অপরাধলব্ধ সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, বিক্রি বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন মর্মে নির্ভরযোগ্য সূত্র মারফত জানা যায়।”
এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সেসব সম্পদ ‘বেহাত হয়ে যাবার’ শঙ্কা প্রকাশ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আবেদন করেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা।
দুদকের অনুসন্ধানে ‘জ্ঞাত আয় বর্হিভূত’ যেসব সম্পদের হদিস মিলিছে, তার মধ্যে আছে কামরুল হাসানের নামে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলি থানার উত্তর হালিশহর মৌজায় ৮০ শতক নাল জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদ মৌজায় ৩ দশমিক ৩৩ শতক ভিটি জমি, এক মৌজায় চার কড়া দুই দন্ত ভিটি জমি এবং ঢাকার সাভারে ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি।
একই মৌজায় বিভিন্ন দাগে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৬ গণ্ডা ও ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ নাল জমি এবং অন্য একটি সাত শতাংশ জমিতে চারতলা ভবনে আছে তার।
নগরীর পাহাড়তলী থানার উত্তর হালিশহরে আরও ৪০ শতক নাল জমি আছে কামরুল হাসানের। এছাড়া নগরীতে সিডিএ’র অনন্যা আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠার একটি প্লটের মালিক তিনি।
সাভারের ওই জমিতে পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসানসহ চারজন অংশীদার মিলে ১২ তলা সাভার সিটি সেন্টার টাওয়ার নামের ভবন নির্মাণ করেন। ওই ভবনে কামরুল হাসানের ৮ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা বিনিয়োগ আছে বলে তার ২০২৩-২৪ সালের আয়কর নথি থেকে জানতে পারে দুদক।
বর্তমান বাজার দরে ওই ভবনে কামরুল হাসানের বিনিয়োগ আরো বেশি বলে দুদকের ভাষ্য। ওই টাওয়ারের ২৮টি দোকান ও ৬টি ফ্ল্যাটের মালিকানা কামরুল হাসানের।
এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং লিমিটেডের আবাসিক এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে দশমিক ৭৪ শতক জমি এবং সেই জমিতে ২৫৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মালিক পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসান।
ঢাকার সাভারের আনন্দপুর মৌজায় দুই দাগে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ জমি এবং ওই জমিতে ৫ জন মালিকের নির্মিত একটি ১০ তলা ভবনে তার একটি ফ্ল্যাট আছে। ওই ভবনে কামরুল হাসানের বিনিয়োগ ৯৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আছে ৩০ লাখ টাকার। আর স্ত্রী সায়েমা বেগমের নামে পাঁচ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্র আছে ৪৫ লাখ টাকার।
এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের স্ত্রী সায়েমা বেগম মেসার্স সওদাগর নেভিগেশন নামের একটি নৌযান পরিচালনাকারী কোম্পানির তিন অংশীদারের একজন। ওই কোম্পানির তিন মালিকের সমান বিনিয়োগে চারটি নৌযান আছে। তাতে সায়েমা বেগমের অংশ প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বলে দুদকের প্রতিবেদনের ভাষ্য।
১৯৮৯ সালে সাব-ইন্সপেক্টর পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ কামরুল হাসান।