Published : 21 Aug 2024, 08:57 PM
প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারে সহায়তা না করে ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমের উপস্থিতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা আজকে খবর পেয়েছি, এটি বাংলাদেশের জন্য খুব দুঃখজনক একটি বিষয়। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীতে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারে রয়েছি, পার্শ্ববর্তী দেশ যেখানে আমাদের সহায়তা করার কথা, সেখানে তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে।
“পার্শ্ববর্তী দেশের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা যে আজকে ব্যারিকেড খুলে দিয়ে বাংলাদেশে পানি প্রবেশ করতে দিলেন। অন্যদিকে আমরা দেখেছি, তিস্তাতে পানির সংকটে সেখানে চাষাবাদ করা যায় না। আমাদের যখন পানির প্রয়োজন তখন পানি দিচ্ছেন না। যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন বেড়িবাঁধ খুলে দিয়ে বন্যায় বাংলাদেশের মানুষকে সংকটের মধ্যে ফেলেন।”
আন্দোলনকারীদের এই নেতা বলেন, “যারা আন্তর্জাতিকভাবে এই বাংলাদেশের সংস্কারকে ও পুর্নগঠনকে বাধা দিতে চায়, তাদের আমরা ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “৭৫ এর ১৫ অগাস্টের পরে যেভাবে দ্রব্যমূল্য সাথে সাথে কমে যায়, ঠিক একইভাবে ৫ অগাস্টের পরে বাজারগুলোতে দ্রব্যমূল্য কমে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখছি, এখন আবার একটি নতুন রাজনৈতিক দলের অধীনে আবার সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে।
“আমরা সর্তক করতে দিতে চাই, জনমুখী সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিন্ডিকেট মাফিয়াতন্ত্র তৈরি করে বাজার ব্যবস্থায় কোনো অসন্তোষ যদি তৈরি করেন, তাহলে শেখ হাসিনাকে যেভাবে গদি থেকে নামিয়েছিলাম, ঠিক একইভাবে সিন্ডিকেট সমূলে উৎখাত করব।”
ভূমি অফিস, বিআরটিএ, ওয়াসা, কাস্টমসসহ যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘দুর্নীতির আখড়া’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “এখনো সময় আছে, আপনারা লাইনে ফিরে আসুন। দুর্নীতির শৃঙ্খল যদি আরও বৃদ্ধি করেন, তাহলে ৫ অগাস্টের মত, বঙ্গভবনের মত, সংসদ ভবনের মত একই ধরনের পরিণতি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।”
ঘুষ খেয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করা যায় না মন্তব্য করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আপনারা রাষ্ট্র সংস্কারে সহযোগী হন। যদি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে কেউ ঘুষ খায়, তাহলে প্রথমেই আপনারা তাকে ঘুষি মারুন। এই ঘুষিটা একটা মেটাফরিক অর্থে ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ তাকে সাথে সাথে প্রতিরোধ করুন। তারপর বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা কাঠামোর মধ্যে যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাকে বিচারে সোপর্দ করুন।
“আর যারা চাকরি করছেন। বিগত সরকারের সময় যে ধরণের শাস্তি হত। মৃদু তিরষ্কার অথবা ওএসডি এগুলো কোন শাস্তি নয়। আমরা নিশ্চিত করব অন্তবর্তীকালীন সরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যা করা প্রয়োজন তা করে ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া সমূলে উৎপাটন করব।”
‘অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিন’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা বাংলাদেশ বির্নিমাণের মধ্যে রয়েছি। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্যে রয়েছি। আপনারা যদি যথাযথ রাষ্ট্রগঠনের সময় না দিয়ে গত ১৬ বছরের ব্যর্থতার দায়ভার আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল করেন, তাহলে মনে করব রাষ্ট্রপুর্নগঠনে সহায়তা না করে বরং আপনারা ষড়যন্ত্র করছেন।
“সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারে যথাযথ ও পর্যাপ্ত সময় দিন। যে দাবিগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে অ্যাকাডেমিক অ্যাপ্রোচ দেন। আমরা সেই দাবিগুলো নিয়ে কথা বলব।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “এখন আমাদের এই মুহূর্তে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অবস্থা প্রয়োজন। এক হচ্ছে স্থিতিশীল অবস্থা। আরেকটি হচ্ছে আমাদের যে ভাইরা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা ও পুর্নবাসনের কর্মসংস্থানের এই ব্যবস্থাটুকু করা।
“এখন সমস্যা যেটি হচ্ছে, আমাদের এই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আসলে নতুন করে দেখছি নতুন নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। বিগত ১৬ বছরে যে মানুষটা একটিমাত্র কথা বলার সাহস করেনি, বিগত ৫৩ বছরে যারা এই লুপহোলগুলো নিয়ে রাস্তায় নামার খুব একটা সাহস করেনি। সেই মানুষগুলো একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন হওয়ার সাথে সাথে চাইছে ১৬ দিনের মধ্যে চাচ্ছে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাক।”
সারজিস আলম বলেন, “এই মানুষগুলো তাদের ব্যক্তিগত কিংবা ছোট্ট একটি গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য রাজপথে নামছে। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করছে। আমরা মনে করি তারা যদি এ ধৈর্যটুকু না ধরে, এতবড় ক্ষতপূর্ণ একটা রাষ্ট্রের সংশোধনের জন্য যে সময় প্রয়োজন, সেই সময়টুকু না দিয়ে তারা যদি তাদের জায়গা থেকে এ ব্লকেডগুলো বিভিন্ন জায়গায় করে। তার মানে তারা রাষ্ট্রের স্থিতিশীল হওয়ার জন্য যে ফ্লো দরকার এই ফ্লোতে বাধা দিচ্ছে। এবং তাদের অবশ্যই ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।”
সারজিস বলেন, “আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছি। কোনো সিঙ্গেল বৈষম্য না। পুরো বাংলাদেশের সকল সেক্টরের সকল বৈষম্য। এই ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশকে একটি করাপটেড বাংলাদেশে পরিণত করেছে।
“তার মানে এখন আমরা যদি এগুলোতে কাজ করতে যাই। আমার ওই মাথা থেকে শুরু করে রুট পর্যন্ত যেতে তো সময় লাগবে। এখন মাথাগুলো শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে প্রত্যেক স্টেপে যাবে। কিন্তু আপনি আজকে ২০তম গ্রেডের একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে যদি মনে করেন, আপনার সকল সুবিধা আজকেই আপনাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাহলে বুঝতে হবে, আপনি সরকারকে বাধ্য করছেন, যেটা স্বৈরাচার শাসনে আরেকটি উদাহারণ।”
সা্রজিস বলেন, “স্পষ্ট বলি, আপনি অন্তর্বতী সরকারকে সময় দিন এবং আপনার জায়গা থেকে দাবিটি জানান। আমাদের কাছে আসুন, আমরা বড় বড় গোষ্ঠীগতভাবে অন্তর্বতীকালীন সরকার হোক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক এই প্লাটফর্মগুলোর সঙ্গে বসার ব্যবস্থার করে দেব। তবে পূর্বশত হচ্ছে-রাষ্ট্রকে মিনিমাম একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আসার জন্য অন্তত ৩ থেকে ৬ মাস অবশ্যই সময় দিতে হবে।”
হাসপাতালের চিকিৎসকদের উদ্দেশে এ সমন্বয়ক বলেন, “অধিকাংশ চিকিৎসক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কিছু চিকিৎসক কি উদ্দেশ্যে এ পেশায় এসেছে জানি না। কিন্তু প্রত্যেক হাসপাতালে গত ১৬ বছরে সিন্ডিকেট নামধারী কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কিছু রক্তচোষা মানুষ তৈরি হয়েছে।
“এ মানুষগুলোকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে রোগীদের নিয়ে যে ব্যবসা শুরু করেছেন, এগুলো বন্ধ করতে হবে। টাকা খাওয়ার, মানুষকে জিম্মি করার এই ব্যবসা যদি বন্ধ না করেন তাহলে আপনার সিন্ডিকেট কিভাবে উৎখাত করতে হয় সেটা ছাত্র সমাজ খুব ভালো করে জানে। একটা জিনিস মাথায় ঢুকায় রাখবেন, যে ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারকে দেশ থেকে হটাতে পারে। সেই সিন্ডিকেটকে হটাতে তাদের কয়েক মিনিটও লাগবে না।”