Published : 31 May 2025, 09:39 PM
বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানি যুক্ত করা ও মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের অবস্থানের পরিবর্তন না হলে বাম জোট কোরবানি ঈদের পর লং মার্চ কর্মসূচি দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর একটি কমিউনিটি হলে ‘চট্টগ্রাম বন্দর, রাখাইনে করিডোরের নামে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন রুখো’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা এ সংবাদ সম্মেলন ডাকে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ছয় দলের বাম গণতান্ত্রিক জোটের সদস্য সিপিবির সভাপতি বলেন, “এটা (বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানি যুক্ত করা এবং মিয়ানমারে মানবিক করিডোর) যদি বাতিল না করে, আমাদের বাম জোট এবং তেল-গ্যাস, বন্দর রক্ষা কমিটি ঢাকা থেকে করিডোর এবং বন্দর নিয়ে লং মার্চ আসবে কোরবানের (ঈদের) পর। একটা লং মার্চের প্রোগ্রাম আমরা দেব।
“ইতিমধ্যে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ প্রোগ্রাম করেছে। বিএনপিও বিরোধীতা করছে। তারা বলেছে এটা রেগুলার গর্ভমেন্টের বিষয়। আন্দোলনের প্রয়োজনে যদি পরিস্থিতি সেখানে নিয়ে যায়, হয়ত আন্দোলনের একক প্ল্যাটফর্ম দাঁড়িয়ে যাবে।”
বন্দর নিয়ে আবার দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে অভিযোগ করে শাহ আলম বলেন, “শেখ হাসিনার আমলে চট্টগ্রাম বন্দরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এসএসএ এর হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তখন আমরা এবং শ্রমিকরা মিলে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলাম।
“তখন ১৯২ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। আমরা দুইভাবে সেটার মোকাবেলা করেছি। তেল-গ্যাস, বন্দর-বিদ্যুৎ রক্ষা কমিটি ঢাকা থেকে লং মার্চ করে চট্টগ্রামে এসেছিল। আমরা চট্টগ্রামের চারজন বাদী হয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলাম। তাতে আমরা জিতেছি। চট্টগ্রাম বন্দর সেদিন রক্ষিত হয়েছে।”
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন যেটা হচ্ছে ডিপি ওয়ার্ল্ড। তাদেরকে দেওয়ার কথা ছিল বে টার্মিনাল। সেটার তৎপরতা শুরু করেছিল হাসিনা। এই সরকার সেটা আবার কনটিনিউ করতে চাইছে। সেটা এখন বে টার্মিনালের ওখান থেকে এনসিটিতে এসেছে।
“২০০৭ সাল থেকে এনসিটি চালু আছে। সেখানে ১২টি গ্যান্ট্রি ক্রেন বসানোর কথা, ১৪টি আছে। সেখানে সক্ষমতার চেয়েও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে গত অর্থবছরে। এটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানে নতুন করে বিনিয়োগ বা উন্নয়নের কিছু নেই।”
সিপিবি সভাপতি বলেন, “ডিপি ওয়ার্ল্ড আমিরাতের একটা কোম্পানি। কিন্তু তাদের আমেরিকার সাথে একটা সম্পর্ক আছে। এই মুহূর্তে কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আওতার মধ্যে এটা পড়ে না। কাজের বাইরে এই কাজগুলোর মধ্যে তারা হাত দিচ্ছে।
“এনসিটির পাশে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। সব মিলে এটা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর। এটার কোনো প্রয়োজন নাই।”
বন্দরকে বেসরকারিকরণ করা দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এটা দেশ জাতির জন্য মঙ্গলজনক না। এটা গণবিরোধী প্রস্তাব। এটা থেকে অবিলম্বে সরকারের ফিরে আসার দরকার।
“বামজোট এর প্রতিবাদে সোচ্চার। দেশবাসী, বন্দর ব্যবহারকারী এবং বন্দরের শ্রমিক কর্মচারীরাও এর বিরুদ্ধে। এখানে কোনো মধ্যস্বত্ত্বভোগীর দরকার নেই, দেশি-বিদেশি যেই হোক। বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এটা পরিচালিত হোক। যদি কোন ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে সেটার ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে।”
করিডোরের বিষয়ে তিনি বলেন, “করিডোরের বিষয়টি খুবই সেনসিটিভি। বিশেষ করে এটা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত। রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন থেকে মুক্ত হোক, এটা আমরা চাই। কিন্তু এখানে করিডোর দিতে হবে কেন?
“করিডোরের বিরোধিতা যখন এসেছে, এখন বলছে ত্রাণ চ্যানেল। দুইটার মধ্যে তফাৎ কী, এটা এদেশের মানুষ বুঝতে পারছে না। করিডোর দিলে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপদগ্রস্ত হবে। কেননা মিয়ানমারে এখনো জান্তা সরকার ক্ষমতায়। তাদের পাশ কাটিয়ে করিডোর দিতে গেলে দেশে একটা যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হবে।”
শাহ আলম বলেন, “ওখানে ভারতের কালাদান প্রজেক্ট আছে। চীনের সেখানে বিনিয়োগ আছে। চীনের আকিয়াবে সামরিক উপস্থিতি আছে। তাদের গ্যাস পাইপলাইন আছে। চীন এবং ভারতের অস্তিত্বের সাথে এই করিডোর সম্পর্কিত। এবং রাশিয়ার সাথে বার্মা সম্পর্কিত।
“তাহলে এসব দেশকে পাশ কাটিয়ে কেন আমাদের কাঁধে ভর করে করিডোর সেখানে দিতে হবে আমেরিকান ডিজাইনে? আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক লাইনের ভূরাজনৈতিক বিষয় আছে। সেখানে আমরা কেন বাংলাদেশকে আমেরিকার ভূরাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছি? এটা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি হবে। এটা খুবই ভয়ঙ্কর একটা বিষয় হবে।”
চীন ও ভারত মিয়ানমার করিডোরের বিরুদ্ধে তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের যদি পাশ কাটিয়ে করা হয় তাহলে সেখানে ব্লাডশেড শুরু হবে। সেখানে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বও থাকবে না।
“এজন্য আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এটার বিরুদ্ধে তীব্রভাবে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে এটা দেশের জন্য হুমকির সৃষ্টি করবে এবং বিপদজনক। আমরা মনে করি, এই করিডোর, ত্রাণ চ্যানেল- এসবের কোনো প্রয়োজন নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক উত্তম চৌধুরী, মোহাম্মদ মছিউদৌলা, ফরিদুল ইসলাম।