Published : 02 Jul 2025, 07:51 PM
পটিয়া থানার ওসির অপসারণ দাবিতে বাইপাস এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সাবাজার মহাসড়ক অবরোধের আট ঘণ্টা পর সেখান থেকে সরে গেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) কর্মীরা।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশের সঙ্গে কথা বলে বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে নগরীর জাকির হোসেন সড়ক থেকে আন্দোলনকারীরা সরে দাঁড়ালে কিছু সময় পর বাইপাসে অবস্থানকারীরাও মহাসড়ক ছাড়েন।
এরপর চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পটিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন নেতাকর্মীরা। ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবান ও কক্সবাজার এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারি, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার সঙ্গে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। অনেককেই যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা ছাত্রলীগের এক নেতাকে ধরে মঙ্গলবার রাতে পটিয়া থানায় নেওয়ার পর সেখানে হুলস্থুল কাণ্ড ঘটে যায়।
থানা চত্বরে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ‘মারধরের চেষ্টা করলে’ পুলিশ বাধা দেয় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন।
এরপরই পটিয়া থানার ওসিকে আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরের অপসারণের দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
জাকির হোসেন সড়ক অচল ৩ ঘণ্টা
ওসির অপসারণ চেয়ে সকালে পটিয়া থানা ঘেরাও করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা বাইপাস এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন এবং চট্টগ্রাম-কক্সাবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন।
সেখানে অবস্থানের মধ্যেই বিকাল ৩টার দিকে এনসিপি ও বৈছাআ কর্মী দাবি করে একদল যুবক নগরীর খুলশী ৪ নম্বর সড়কে ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেসময় তারা ডিআইজিকে তার কার্যালয় থেকে নেমে এসে তাদের দাবি শোনার আহ্বান জানান।
ডিআইজি তার কার্যালয় থেকে না আসায় বিক্ষোভকারীরা বিকাল ৪টার দিকে সেখানকার জাকির হোসেন সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। ফলে লম্বা সময় দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি তৈরি হয়। খুলশী এলাকায় অনেক বিদেশি লোকজন থাকেন। অবরোধের কারণে তাদের অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে দেখা যায়।
ডিআইজিকে তার কার্যালয় থেকে নেমে এসে দাবিদাওয়া শোনার আহ্বান করেন বিক্ষোভকারীরা। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে সড়কে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন আন্দোলনকারীরা পটিয়া থানার ওসির পাশাপাশি, সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা এসপিরও অপসারণ দাবি করেন।
ডিআইজির সঙ্গে কথা বলার পর সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে নগরীর জাকির হোসেন সড়ক ছাড়েন বিক্ষোভকারীরা। এরপর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সন্ধ্যায় অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার সাংবাদিকদের বলেন, “তারা আগামীকাল (দুপুর) ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব।”
পটিয়া থানায় মঙ্গলবার রাতের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত সঞ্জয় সরকার সন্ধ্যায় বলেন, দায়ীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পটিয়া থানার ওসিকে অপসারণের জন্য তারা বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। এরপর তারা সন্ধ্যা ৭টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান।”
ঘটনার শুরু যেখান থেকে
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পটিয়া শহীদ মিনার এলাকা থেকে এক ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে থানায় নিয়ে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। থানায় গিয়ে ওই নেতাকে গ্রেপ্তার দেখাতে বলেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা থানা চত্বরে ওই নেতাকে ‘মারধরের চেষ্টা করলে’ পুলিশ বাধা দেয় এবং ‘উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে’ এবং বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে থানা ঘেরাওয়ের কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা।
বুধবার সকালে আন্দোলনকারীরা থানা ঘেরাও করেন, এর পরে তারা বাইপাস এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে ডিআইজি কার্যালয়ের সামনের জাকির হোসেন সড়কও আটকান।
আরও পড়ুন-
চট্টগ্রাম নগরীতে বৈছাআ-এনসিপির সড়ক অবরোধ, পটিয়ার ওসির অপসারণ দাবি