Published : 27 Jun 2025, 08:55 PM
চট্টগ্রামে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে হল জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রথপরিক্রমার উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
মদনমোহন নরসিংহ গোপাল জীউ’র মন্দির থেকে ঢোল, মঙ্গল শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবকে রথে আরোহন করানো হয়।
পরে বেলুন উড়িয়ে ও রথের রশি টেনে রথপরিক্রমা শুরু করেন তুলসীধামের মোহন্ত ও ঋষিধাম অধিপতি শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “চট্টগ্রাম সাম্যের শহর, সম্প্রীতির শহর। এই শহর সমস্ত ধর্মের, সমস্ত বর্ণের, সমস্ত জাতির। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে শহরের উন্নয়নে। এই ঐক্যই আমাদের শক্তি।
“পরিচ্ছন্ন নগর গঠনে রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন, এনজিও, স্বেচ্ছাসেবক, এমনকি সাধারণ নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।”
রথযাত্রা মানুষের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে মন্তব্য করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমি চাই, রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে সবাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে অবদান রাখুক। কারণ চট্টগ্রাম আমাদের সবার।
“বর্তমান করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট আগের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। এখন অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসম্পৃক্ততা জরুরি।”
অনুষ্ঠানে শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজ বলেন, “রথের চাকা আমাদের জীবনে ভক্তির গতি এনে দেয়। রথ যেমন সম্মিলিতভাবে টানতে হয়, তেমনই জীবনের ভার ভাগ করে নিতে হয় সবাইকে। রথযাত্রা শেখায়, জীবনের যাত্রা চলতে থাকবে বিশ্বাস আর সাহসে।
“জীবনের রথ টানতে গেলে ভরসা লাগে, সেই ভরসা দেন গুরু। যেভাবে রথ এগিয়ে চলে, সেভাবেই সবার জীবন এগিয়ে যাক আলোর পথে। রথে চড়ে জগন্নাথদেব আসুক সবার হৃদয়ে, দূর হোক সমস্ত অন্ধকার।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার রাজীব রঞ্জন। উৎসবে আশীর্বাদক ছিলেন শীতলপুর লোকনাথ সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ গোবিন্দ ব্রহ্মচারী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান ধর ও অর্থ সম্পাদক সুজিত হাজারী।
অ্যাডভোকেট সুজন কান্তি দের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী, স্থপতি প্রণত মিত্র চৌধুরী, যোগেশ্বর চৌধুরী, উত্তম কুমার চক্রবর্তী, অভয়মিত্র মহাশ্মশান পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ প্রিয় পাল, ডা. মনোজ চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে রথযাত্রা শুরু হয়। এতে কেন্দ্রীয় রথের সাথে অংশ নেয় হাজারী লেইন শ্রীকৃষ্ণায়ন রথ, পাথরঘাটা জগন্নাথ মন্দিরের রথ, গঙ্গাবাড়ির রথ, গৌর গিরিধারী মন্দিরের রথ, সদরঘাট পার্বতী ফকিরপাড়ার রথ, মাইজপাড়ার রথ, ফিরিঙ্গীবাজার শাহাজীপাড়ার রথ, টেকপাড়ার রথ, এনায়েত বাজার কেদারনাথ তেওয়ারী কলোনির রথ, টাইগারপাস জগন্নাথ সংঘের রথ, পুরাতন কাস্টমস এলাকার রথ, ইপিজেড শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের রথসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের রথ।
হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে ঢোলের বাজনা ও গানের সুরে রথ তুলসীধাম থেকে যাত্রা শুরু করে নিউ মার্কেট ও লালদীঘির পাড় ঘুরে আন্দরকিল্লা এলাকায় আসে।
সেখান থেকে চেরাগী পাহাড় হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে লাভলেইন সড়ক দিয়ে পুনরায় নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এসে শেষ হয় পরিক্রমা।
এদিকে নন্দনকানন রাধামাধব মন্দিরের (ইসকন মন্দির) রথযাত্রাটি শুরু হয় বিকেলে ডিসি হিল এলাকা থেকে।
এটি চেরাগী পাহাড়, আন্দরকিল্লা, লালদীঘির পাড়, কোতোয়ালী ঘোড়, নিউ মার্কেট, আমতল, বোস ব্রাদার্স মোড় হয়ে নন্দনকাননে গিয়ে শেষ হয়।
অন্যদিকে প্রবর্তক মোড় থেকে প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের রথযাত্রাটি শুরু হয়। এটির উদ্বোধন করে সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা কেউ হয়ত হিন্দু ধর্মে, কেউ বৌদ্ধ ধর্মে, কেউ ইসলাম ধর্মে আর কেউ খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। আমরা সমস্ত ধর্ম-বর্ণের-জাতির মানুষ মিলে চট্টগ্রামকে নিরাপদ শহরে পরিণত করব।
“এই শহর হবে সাম্যের শান্তির ও সকলের শহর। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই রথযাত্রা উৎসব বাঙালির অনেক প্রাচীন একটি উৎসব। এতে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত।”
এখানে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবর্তক ইসকন শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাশ ব্রহ্মচারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি মৃত্যুঞ্জয় কুমার সিং।
এই রথযাত্রাটি গোলপাহাড় মোড়, মেহেদীবাগ, চট্টেশ্বরী মোড়, কাজীর দেউরি মোড়, জামালখান মোড়, চেরাগী পাহাড়, আন্দরকিল্লা, বক্সীর বিট, লালদিঘীর পাড়, কোতোয়ালী মোড় হয়ে কে সি দে রোডে গিয়ে শেষ হয়।
এছাড়া নগরীর গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালী মন্দির থেকেও এবার রথযাত্রা হয়েছে।
একাধিক রথযাত্রার কারণে বিকেল থেকে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।