Published : 04 Jun 2025, 10:14 PM
প্রথমে তিনি সংগ্রহ করেন ব্যক্তিগত তথ্য, সেগুলো পর্যালোচনা করে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ফোন করেন ‘টার্গেট’ করা ব্যক্তিকে। ‘মামলায় ভয় দেখিয়ে’ দাবি করেন টাকা। তিনিই পরে ‘মধ্যস্ততাকারী’ হিসেবে ফোন করে প্রস্তাব দেন মীমাংসার।
অবশেষে সেই ‘ভুয়া গোয়েন্দা’ আবুল হোসেন সোহেল ধরা পড়েছেন আসল গোয়েন্দার জালে। পুলিশ বলছে, এভাবে মামলায় ভয় ও মীমাংসার প্রলোভন দেখিয়ে গত এক বছরের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী সোহেলের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়।ভুয়া গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে পরিচয়ে প্রতারণা অভিযোগে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার আবুল হোসেন পেশাদার প্রতারক। এক সময় চুরি করলেও এখন প্রতারণায় তার পেশা। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
“গত একবছরে সে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে আমরা প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি।”
প্রতারণার ফাঁদ
সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মাহবুব বলেন, “সে তার টার্গেট করা বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তির বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই বাছাই করেন। পরে তাদের নম্বরে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ফোন করে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন।
“কিছু সময় পর আরেকটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে চট্টগ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন এবং তার পূর্ব পরিচিত বলে প্রমাণ করে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে মীমাংসার প্রস্তাব দেন। এভাবে গোয়েন্দা পুলিশের নামে টাকা হাতিয়ে নেন।”
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব বলেন, “এভাবে প্রতারণা করে সে এক আইনজীবীর ভাই, ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক, খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।”
তিনি বলেন, যে ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাকে প্রথমে গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরে বাকলিয়া থানা পুলিশের এসআই পরিচয় দিয়ে পুনরায় ফোন করা হয়। কয়েক বছর আগে তার মাকে এই এজেন্সির মাধ্যমে হজে পাঠানোর কথা বলে বিশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে এসআই পরিচয়েই মধ্যস্থতার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
“একইভাবে খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ীকে ফোন করে মসলা ব্যবসায়ী এবং তার গ্রাহক পরিচয় দিয়ে সে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, সে তথ্য আমরা পেয়েছি।”
যেভাবে পড়লেন ধরা
গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মাহবুব জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির এক নেতা অভিযোগ করেন, এক ব্যক্তি গোয়েন্দা পরিচয়ে তার ভাই এবং তার কাছ থেকে দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ওই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এ ধরনের আরও কয়েকটি ঘটনার তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি, খুলশীসহ বিভিন্ন থানায় এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগও জমা পড়েছিল।
মাহবুব বলেন, অভিযোগের তদন্ত করে পুলিশ আবুল হোসেন সোহেলের অবস্থান শনাক্ত করে। বুধবার পটিয়া উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“এসময় পুলিশ তার ব্যবহার করা দুটি সিম ও মোবাইল ফোন জব্দ করে। তার সাথে সম্পৃক্ত আরও কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে।”
মাহবুবব বলেন, “গ্রেপ্তার সোহেল গত এক বছরে এভাবে করে অন্তত ৫০ জনের সাথে প্রতারণা করে। তাদের কাছ থেকে প্রায় প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।”