Published : 22 Oct 2024, 08:44 PM
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা দিলে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে বলে ফেইসবুকে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার বিকেলে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে এই টিকাদান কর্মসূচি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম জেলায় অনুষ্ঠিত হবে মাসব্যাপী জাতীয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৪।
সম্প্রতি এ বিষয়ে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই টিকা দিলে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন প্রচারণার বিষয়ে সিভিল সার্জনের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
উত্তরে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “বন্ধ্যাত্ব হতে পারে বলে যা ফেইসবুকে ছড়ানো হচ্ছে সেটা অপপ্রচার। এইচপিভি টিকার এ ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
“দেশে যখনই কোনো টিকা প্রোগ্রাম নেওয়া হয় একটা পক্ষ ভুল তথ্য দিয়ে মিডিয়াকে উত্তেজিত করে। এ ধরনের তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। এটা নতুন কোনো টিকা না। দেশে এ টিকা আগে থেকেই দেয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আজকেও ফেইসবুকে একটা নেগেটিভ স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। সেখানকার ওসি এবং ইউএনও মহোদয় নিশ্চিত করেছেন ওই মাদ্রাসায় সবাই টিকা দেবেন। এটা বাঁশখালীতে।
“কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েও বিরাট আতঙ্ক ছিল শুরুতে। আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এটা প্রথম না, আগে থেকে প্রাইভেটলি চালু আছে। ঢাকা বিভাগে পুরোপুরি এই টিকা চালু হয়েছে ২০২৩ সালে। এবার চট্টগ্রামসহ ৭টি বিভাগে ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হবে।”
বেলজিয়াম থেকে এ টিকা আনা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, “বাংলাদেশে ক্যান্সারে মৃত্যুর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় জরায়ুমুখ ক্যান্সারে৷ একটি টিকা দিলেই এর ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এটা আগামী বছর থেকে রুটিন টিকার অংশ হয়ে যাবে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এইচপিভি প্রোগ্রাম বিষয়ে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।
শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া চার সপ্তাহে মোট ১৮ দিনে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রীদের (১০-১৪ বছর বয়সী) এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কমিউনিটির ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলার ৪ হাজার ৩৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম-নবম শ্রেণির ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩০ জন কিশোরী এবং স্কুল বহির্ভূত কমিউনিটির ১০ হাজার ২১৯জন কিশোরীকে এইচপিভি দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
পাশাপাশি সিটি করপোরেশন এলাকায়ও প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কিশোরীকে এইচপিভি দেওয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশশে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দেয়ার সুযোগ পাবে। স্কুল বহির্ভূত কমিউনিটির কিশোরীরাও রেজিস্ট্রেশন করে স্থায়ী ইপিআই টিকা দান কেন্দ্রে টিকা দিতে পারবে।
এইচপিভি ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ নারীদের মধ্যে ১১ জন জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং প্রতি বছর এই রোগে প্রায় ৪৯৭১ জন মৃত্যুবরণ করে।