Published : 01 Jun 2025, 01:47 AM
বিদেশি ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বড় ধরনের স্থবিরতা চলছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান। তার মতে, বর্তমান অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশি তো বটেই, বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করাও কঠিন হবে।
সেজন্য তিনি চলমান অস্থিরতা নিরসনের পাশাপাশি বাজেটে বিনিয়োগবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত যেসব তথ্য মিলেছে, তাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে খুব বেশি বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না সাউথ এশিয়ান নেটয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
তিনি বলেছেন, এবার বাজেট হচ্ছে অরাজনৈতিক সময়ে, ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। সে কারণে বাজেট নিয়ে প্রত্যাশাও বেশি থাকবে।
“এটা আমরা বুঝি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সময়টা অগাস্টের পরে পেয়েছে, প্রায় নয় মাসের মত সময় তারা পেয়েছে। কিন্তু তারপরও যে বাজেটটা প্রস্তাবিত হতে যাচ্ছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে, সেখানে পুরনো যে বাজেট কাঠামো তার বাইরে গিয়ে আমরা যতটুকু খবর পাচ্ছি, খুব বেশি নতুন কিছু করার বিষয় নেই।
“একটা তো প্রত্যাশা আছেই যে, এই বাজেটে ভিন্ন কিছু দেখানো যাবে কি না; আমার ধারণা, খুব বেশি বড় পরিবর্তন আমরা হয়ত দেখতে পাব না।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড আউটে’ অতিথি হয়ে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক। বাজেট, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাতের সংস্কারসহ নানা বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়।
নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে মূল্যস্ফীতি
দারিদ্র্য বিমোচনে মূল্যস্ফীতির টেকসই নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলে মনে করেন সেলিম রায়হান। তার মতে, এজন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতেও পরবর্তন দরকার।
তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এটা দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করার আমি মনে করি সবচেয়ে বড় একটা পদক্ষেপ। কারণ, মূল্যস্ফীতি দরিদ্র মানুষকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করে। আমরা দেখেছি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাফল্য এসেছে। গত দু-তিন মাসে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। কিন্তু, সেটা কতটা স্থায়ী, সেটা একটা প্রশ্নের বিষয়।
“দ্বিতীয় যে জায়গাটা আমার কাছে মনে হয় খুব গুরুত্বপূর্ণ- সরকারের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে। বিশ্ব ব্যাংকের একটা প্রতিবেদনেও তারা দেখেছে যে, ২৮ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে এই সময়ে। আমাদের বিভিন্ন গবেষণাও দেখাচ্ছে যে, আসলে এরকম মূল্যস্ফীতি একটা বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে হঠাৎ করে দারিদ্র্যের মধ্যে ফেলে দিতে পারে।”
সেই জায়গায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির গুরুত্ব যে অনেক বেশি, সে বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি যে, এই সময় এগুলোতে কিছু কাটছাঁট হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় বরাদ্দও কম হচ্ছে।”
সামাজিক সুরক্ষা খাতগুলোকে আরও সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনায় জোর দিয়ে সেলিম বলেন, “এখানে একটা বড় সমস্যা আছে। গত প্রায় দু’দশক ধরে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিয়ে বাংলাদেশের যে গবেষণাগুলো হয়েছে, সেখানে কিন্তু আমরা এই সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি- যারা পাওয়ার কথা তারা পায় না, যারা পাচ্ছে তারা পাওয়ার যোগ্য না।”
বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে ‘জোর দেওয়া উচিত’
চাপের মধ্যেও সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা খাত থাকা উচিত বলে মনে করেন সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে যে জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে তাদের প্রায়োরিটির মধ্যে এই মুহূর্তে আসলে কী আছে। অর্থনীতির যে সমস্যাগুলো এবং জনগণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার যেগুলো পাওয়া উচিত, শুধু আমি কিন্তু সামাজিক সুরক্ষার কথা বলব না। আমি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এই বিষয়টাকে খুব গুরুত্ব দিতে চাই। এই খাতগুলো আসলে সঠিকভাবে অগ্রাধিকার পাচ্ছে কি না।
“গত দু’দশক ধরে অথবা তারও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা কিন্তু এই খাতগুলো যে সবচেয়ে অবহেলিত খাত এবং বাজেটে অবহলিত হয়ে থাকে, এগুলো আমরা বারবার বলে এসেছি।”
বিনিয়োগে বড় স্থবিরতা
ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার জন্য বাজেটে কী কী থাকছে, সেদিকে নজর থাকবে বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, “একদম সম্প্রতি যে হিসাবটা বের হয়েছে, গত পাঁচ বছরে কিন্তু ক্রমান্বয়ে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ জিডিপির অনুপাতে কমছে এবং গত দেড় দশকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ এক ধরনের স্থবির হয়ে আছে জিডিপির অনুপাতে।”
অর্থনীতির এই শিক্ষক বলেন, “বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যদি বড় ধরনের কর্মচাঞ্চল্য আনা না যায়, তাহলে কিন্তু কর্মসংস্থান ওরকম ব্যাপকহারে সৃষ্টি হবে না। দারিদ্র্য বিমোচনও আগাবে না। কিন্তু সে বিনিয়োগটা কীভাবে হবে?
“এখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নানা ধরনের যে অনিশ্চয়তা, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নির্বাচনকেন্দ্রিক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতানৈক্য দেখছি সংস্কারকে সামনে রেখে, সেই জায়গায় বিনিয়োগকারীরা কিন্তু খুব স্বস্তিবোধ করছেন না বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে। দেশি বিনিয়োগের কথা যদি বলি, ইভেন বিদেশি বিনিয়োগ, বড় ধরনের বিনিয়োগ আসলে প্রত্যাশা করাটা কঠিন হয়ে যাবে।”
বাজেটে এই সমস্যার সমাধানে নির্দেশনা থাকা উচিত বলে মনে করেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহার, করনীতিতে পরিবর্তন আনা উচিত।
“কস্ট অব ক্যাপিটাল কিন্তু এখন অনেক হাই। ইন্টারেস্ট রেট এখন অনেক হাই। এত হাই ইন্টারেস্ট রেটে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী কতটুকু হবেন সে ব্যাপারে প্রশ্ন থাকে। সুতরাং এই কস্ট অব ক্যাপিটাল অথবা সুদের হার কীভাবে কমাবে সামনের দিকে, বাজেটে তার একটা রিফ্লেকশন থাকা উচিত।”
“হাই কস্ট অব ডুইং বিজনেসের কিন্তু একটা বড় ধরনের সমস্যা। এই জায়গাগুলো কীভাবে করা যায়? কর খাতের বিষয়ে আমরা দেখছি, এই ধরনের জটিলতা সামগ্রিক একটা দিকে পৌঁছাতে হবে।”
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা নিয়ে ‘এক ধরনের ভীতি রয়েছে’ বলে তিনি মনে করেন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “এনবিআর মনে করে, তাদের যে নীতিগুলো, একটা হচ্ছে কাগজে-কলমে নীতি আছে আরেকটা হচ্ছে বাস্তবে- ইন প্র্যাকটিস। সেটাতে তারা যে চর্চাটা করে, এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
নির্বাচনের রূপরেখা এলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কমতে পারে বলে সেলিম রায়হানের ধারণা।
তিনি বলেন, “এটা আমি মনে করি সামগ্রিকভাবে, শুধুতো বাজেট না। বাজেট তো একটা এক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব সরকারের। সামগ্রিকভাবে সরকারের সামনে নিয়ে আসা উচিত তার নির্বাচন, আমি মনে করি ক্লিয়ার রোডম্যাপ। কারণ রাজনৈতিক যে একটা অনিশ্চয়তার পরিমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে, সেই জায়গা থেকে সরে আসতে হবে।”
যে কারণে এনবিআর ভাগে জটিলতা
সম্প্রতি এনবিআর বিভক্ত করা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, আলোচনার ঘাটতি এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি বা ডিজাইনের কারণেই তা হয়েছে বলে মনে করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক।
এনবিআর বিভক্ত করা নিয়ে যে জটিলতা, তাতে আলোচনার ঘাটতি দেখেন সেলিম রায়হান।
সেলিম রায়হান বলেন, “যখন এনবিআরকে দু’ভাগ..একটা পলিসি, একটা ইমপ্লিমেন্টেশন নেওয়া হয়, আমরা কিন্তু সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু যেটা আমরা দেখলাম পরে যে রেজিস্টেন্স, এখানে দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এক হচ্ছে, এ ধরনের সংস্কারের ক্ষেত্রে যে ডিজাইনটা, মানে উদ্দেশ্যটা তো ঠিক আছে। কিন্তু ডিজাইনটা আমার কাছে মনে হয় পরিপূর্ণ না। যে কারণে আমরা নানা ধরনের লুপহোলস দেখতে পাচ্ছি। নানা ধরনের সমালোচনা দেখতে পাচ্ছি।
“আর দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে, এ ধরনের একটা বড় সংস্কার করতে গেলে অবশ্যই কিন্তু ইম্পর্টেন্ট যারা স্টেকহোল্ডার, তাদের সাপোর্ট।
“...অবশ্যই মতামত নেওয়াটা দরকার ছিল। যে অভিযোগগুলো অলরেডি আমরা শুনছি, সেগুলোকে কীভাবে অ্যাড্রেস করা হবে, সেই জিনিসগুলো দরকার আছে। আমার ভয় হচ্ছে যে, এই ঘটনাতে এনবিআরের সংস্কারটা পিছিয়ে পড়ে কি না এবং অতীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে পিছিয়ে হয়ত পড়তেও পারে। কিন্তু সেটা দেশি বিনিয়োগ বলেন বা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য কোনোভাবে সহায়ক না।”
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে ‘দুর্ভাগ্যজনক’
বাজেটে এবারো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হবে বলে মনে করেন সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, “যদি এটা সত্যিই হয়ে থাকে, আশা করব যে নীতিনির্ধারকরা তাদের বুদ্ধি, তাদের জ্ঞানকে অ্যাপ্লাই করবেন। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এটার প্রতিবাদ করেছি। যেটা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য না এবং এটা কার্যকরও না।
“অতীতের বাজেটগুলো যদি আপনি দেখেন, যখন এগুলো দিয়েছে সাফল্য কিন্তু খুবই দুর্বল, খুবই কম। সুতরাং এটাকে আমার কাছে মনে হয় একদম শেষ করে দেওয়া উচিত। মানে এটা কোনোভাবেই অ্যালাও করা উচিত না।”
পাচারের টাকা ফিরিয়ে আনা ‘কঠিন’
দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ‘কঠিন’ হবে বলে মনে করেন সেলিম রায়হান। তার মতে, যেহেতু এই সরকারের সময় অল্প, সেজন্য পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের কর্মকাণ্ডের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করি উদ্যোগটাকে এবং আমরা এটাও শুনেছি যে ফিরিয়ে আনা এতটা সোজা না। কারণ, অনেক প্রক্রিয়ার ব্যাপার আছে। দুটো দেশের মধ্যে কিছু চুক্তির ব্যাপার আছে। নানা ধরনের আইনি জটিলতা আছে এবং এটা একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপারও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা হয়ত শুনছি, কিছু হয়ত সাফল্য দেখাও যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের হয়ত অপেক্ষা করতে হবে।”
শুধু ফেরত আনা নয়, টাকা পাচার ঠেকাতে অংশীজনদের সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার।
পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা অনেকটাই নির্বাচিত সরকারের ওপর নির্ভর করবে বলে মনে করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, “সামনে নির্বাচনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কতটুকু আগ্রহী থাকবে, এই প্রক্রিয়াটাকে চালু রাখতে সেটা কিন্তু দেখার ব্যাপার হবে। সুতরাং এটার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে সামনের নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক সরকার আসবে তাদের ওপর।”
শুধু ফেরত আনা নয়, টাকা পাচার ঠেকাতে অংশীজনদের সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার বলে মত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও অর্থনীতি বিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্য সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, “আমরা শ্বেতপত্রের মধ্যে বলেছিলাম যে, টাকা পাচারের একটা বড় উপায় হচ্ছে ওভার অ্যান্ড আন্ডার ইনভয়েসিং। সেখানে কিন্তু অনেক ব্যবসায়ীরাও যুক্ত আছেন। টাকা পাচারের একটা বড় জায়গা হচ্ছে হুন্ডি। হুন্ডিটা হয়ত এই সময়ে কিছুটা হলেও কমেছে। কারণ হুন্ডি ব্যবসায়ীরা যারা অতীতে সরকারের সাথে যোগসাজশে ছিল, তারা হয়ত এই মুহূর্তে দুর্বল। যে কারণে হয়ত আমরা দেখছি ফরমাল চ্যানেলে রেমিটেন্সের একটা বড় প্রবাহ, যেহেতু ইনফরমাল চ্যানেল অথবা হুন্ডির কিছুটা হলেও সংকুচিত হয়েছে।”
সেলিম বলেন, “সামগ্রিকভাবে টাকা পাচার কমছে কি না, কিছু কিছু তথ্য তো এখনো আমরা দেখছি যে, এই সময়েও কিছু টাকা পাচার হয়েছে, যেগুলো মিডিয়াতে এসেছে। সুতরাং আমার কাছে মনে হয় এটা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার এবং শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে না। আরও অনেক যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সরকারের, ইনক্লুডিং এনবিআর, তাদের সবার একটা সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
“আমরা কিন্তু এখনো সেরকম একটা কমন প্ল্যাটফর্ম দেখছি না। এই বিষয়গুলোর জন্য কিন্তু তথ্য, উপাত্ত, আইন, প্রতিষ্ঠান সবগুলোর একসাথে কাজ করা দরকার। সেই জায়গায় আমরা মনে হয় এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।”
আগের ‘ভুল তথ্য’ ধরেই বাজেট হচ্ছে
বাজেটের কাঠামো নিয়েও আপত্তি রয়েছে সেলিম রায়হানের।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যাশাটা অনেক বড় ছিল এই সরকারের কাছে। আমি বারবারই বলেছিলাম যে বাজেট ফ্রেমওয়ার্কটা, যেটা নিয়ে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার, সেটা হচ্ছে পূর্ববর্তী সরকারের বাজেটের। সেটার একটা কুইক রিভিউ দরকার ছিল বাই ডিসেম্বর, কিন্তু সেটা হয়নি।
“আমরা দেখছি সেই বাজেটের ওপর বেইজ করে, সেই যে তথ্য-উপাত্তগুলো, যেগুলো নিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম শ্বেতপত্র কমিটিতে, বাজেট হচ্ছে। আমরা জিডিপির ফিগার নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছি, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টসের যে তথ্যগুলো, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য ডেটাগুলো নিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। বলেছি, অনেক ক্ষেত্রে ম্যানিপুলেশন আছে; তথ্যগত ভুল আছে। কোনো কোনো জায়গায় বানিয়ে বলা হত। সেগুলো কিন্তু কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি এবং সেগুলোর ওপর বেইজ করে কিন্তু নতুন আবার এই বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।”
এজন্য ডেটা কমিশন করার দাবি জানানো হলেও সেটা হয়নি বলে জানান সেলিম।
কেন সরকার কাজটা করল না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা (উপদেষ্টা) মাত্র কয়েকজন আছেন। রাজনৈতিক প্রেশারগুলো যখন আসে তখন অর্থনৈতিক এবং বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের প্রক্রিয়াগুলোতে দেখা যায় তাদের প্রায়োরিটি শিফট হয়ে যায়। এটা একটা বড় কারণ। আমি তাদেরকে ওই বেনিফিট অব ডাউটটাই দিতে চাই।
“কিন্তু এক্ষেত্রে প্রায়োরিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা একজাম্পল সেট করে যেতে পারত এই সরকার। এরপরে যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা যদি সেই পুরনো পথেই হাঁটে এবং তাদের সামনে যদি কোনো একটা একজাম্পল না থাকে, তাহলে তো আমরা সেই পুরনো দুষ্টচক্রেই ঘুরপাক খাব। আমি মনে করি, ইটস আ কাইন্ড অব লস্ট অপরচুনিটি। এই বাজেট যদি সেই পুরনো গতানুতিক বাজেট হয়, ইটস আ লস্ট অপরচুনিটি।”