Published : 02 Jun 2025, 12:05 AM
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট দিতে যাচ্ছে সোমবার।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ১১ মাসের মাথায় অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে প্রথম বাজেট দেওয়ার আগে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচন বিবেচনায় রেখে করা এবারের বাজেট আগের অর্থবছরের চেয়ে আকারে ‘ছোট’ হবে, তবে বড় কোনো ‘পরিবর্তন’ নেই।
তিনি বলেছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের পুরো পরিকল্পনা করা হয়েছে বাস্তবমুখী, ব্যবসাবান্ধব ও কর ব্যবস্থা ‘সহজ’ করার ভিত্তিতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতক সালেহউদ্দিন আহমেদ পিএইচডি করেছেন কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক সময় ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর।
অর্থনীতির পাঠ ও অভিজ্ঞতার নিরিখে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্য তুলে ধরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করপোরেট কর হার কমানো ও করছাড় ‘যৌক্তিক’ করার পাশাপাশি ‘অহেতুক’ ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ থাকছে এবারের বাজাটে, ভ্যাট কাঠামোতেও আসবে ‘পরিবর্তন’। ঘাটতি ৪ শতাংশে আটকে রাখতে সাধ্যমত চেষ্টা করা হবে। ঘাটতি অর্থায়নে নির্ভর করতে হবে বিদেশি সহায়তার ওপর।
আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যে নতুন বাজেট দিতে যাওয়া অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষকে ‘স্বস্তি’ দেওয়ার চেষ্টা থাকছে আগামী বাজেটে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ ভাতা, প্রতিবন্ধীদের ভাতার মত অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু থাকছে; অল্প হলেও ‘বাড়বে’ ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা। ‘জুলাই আন্দোলনে’ সম্পৃক্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বড় আকারে ব্যবস্থা থাকা ‘দরকার’ মনে করছে সরকার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, অর্ন্তবর্তী সরকার কীভাবে বাজেট উপস্থাপন করছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: এবারের বাজেট বক্তৃতা অনেক সংক্ষিপ্ত হবে—প্রায় ১৩০–১৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে থাকবে। বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত হলেও সব বিস্তারিত থাকবে। বাজেট উপস্থাপনের পরে আমরা দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় দেব, আলোচনার জন্য।
৩০ জুন রাষ্ট্রপতি বাজেট অধ্যাদেশে সই করবেন। সেটিই হবে আনুষ্ঠানিক বাজেট অনুমোদন। তবে বাজেটের অনেক অংশ, বিশেষ করে শুল্ক-কর সংক্রান্ত বিষয়গুলো ২ জুন থেকেই কার্যকর হবে। অন্য বরাদ্দগুলো ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
আমরা চেষ্টা করেছি বাজেটে যতটা সম্ভব বাস্তবতা আনতে, কারও প্রশংসা বা বিরুদ্ধাচরণ না করে নিরপেক্ষভাবে প্রস্তাব করতে। বাজেট এমন কিছু না যে একেবারে মৌলিক পরিবর্তন এনে এক বছরে বাস্তবায়ন করে ফেলব। ধাপে ধাপে পরিবর্তন করতে হবে। এবারের বাজেট বাস্তবতার ভিত্তিতে যতটা সম্ভব যুক্তিযুক্ত ও সরল রাখার চেষ্টা করেছি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: সবার আগে সুসংবাদ জানতে চাই। বাজেটে সাধারণের জন্য স্বস্তির খবর কেমন দেবেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: ‘সুসংবাদ’ আছে বা ‘দুঃসংবাদ’ আছে—এভাবে বলা ঠিক হবে না। এটা যার যার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। আমরা মূলত ব্যবসাবান্ধব বাজেটের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেছি। তবে সবাই সমানভাবে উপকৃত হবেন—তা নয়। যেসব খাত এতদিন কম সুবিধা পেয়েছে বা যাদের জন্য সুযোগ কম ছিল, তাদের প্রতি আলাদাভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। ভোক্তা বা সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষ করে যাদের আয় সীমিত, তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আমরা অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করে আসছি যে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ভার যেন সহনীয় থাকে। এবারের বাজেটেও সেই লক্ষ্যেই কাজ করা হয়েছে।
ভ্যাট কাঠামো সহজ করার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর যেমন ১%, ১.৫%, ২.৫%, ৩% ইত্যাদি অনেক সময় বাস্তবায়ন ও হিসাব-নিকাশে জটিলতা তৈরি করে। এবার সেসব স্তর কমিয়ে নির্দিষ্ট হারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে, যাতে এটা বাস্তবায়নযোগ্য ও সহজ হয়। আয়করের ক্ষেত্রে ব্যক্তি শ্রেণির আয়করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্তবিহীন কোম্পানির কর হারে পার্থক্য বাড়ানো হবে, যাতে আরও প্রতিষ্ঠান বাজারে আসতে উৎসাহিত হয়। ব্রোকারদের ওপর আরোপিত কর কিছুটা কমানো হবে।
যাদের কর দেওয়ার সক্ষমতা কম, যেমন নিম্ন আয়ের ভোক্তা, তাদের পণ্যে কিছুটা ছাড় বা সহায়তা দিতে চেষ্টা করেছি। অন্যদিকে যাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে, তাদের জন্য করছাড় সীমিত থাকবে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন, আগে ট্রেড লাইসেন্স দুই বছর পর নবায়নের জন্য আবেদন করতে হতো এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা না দিলে তা দেওয়া হতো না। এবার থেকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যদি কেউ আবেদন করেন, তবে নিরীক্ষা প্রতিবেদন ছাড়াই প্রাথমিকভাবে লাইসেন্স নবায়ন হয়ে যাবে এবং পরে তা জমা দেওয়া যাবে। বর্তমানে প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে হয়—এটা ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা তিন বা ছয় মাস অন্তর রিটার্ন দেওয়ার সুযোগ রাখার কথা ভাবছি। কর অব্যাহতি ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হচ্ছে। শুধু প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতেই নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক করছাড় থাকবে। পুরো বাজেট পরিকল্পনাই হচ্ছে বাস্তবমুখী, ব্যবসাবান্ধব ও করব্যবস্থাকে সহজ করার ভিত্তিতে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাস্তবতার আলোকে কী বাজেট হবে এবার?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: এবারের বাজেট আগের বাজেটের চেয়ে কিছুটা ছোট হবে। আকার সংশোধিত বাজেটের কাছাকাছি থাকবে। কারণ, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর—এই সময়টায় কার্যত ব্যবসা চলেনি। রাজস্ব সহায়তা বলতে কিছু ছিল না। জানুয়ারির পর থেকে ব্যবসা একটু উন্নতি করেছে। কিন্তু আগের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কর-জিডিপি অনুপাতও ছিল মাত্র ৭.৫ শতাংশ। সেটি হঠাৎ করে বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই আমরা চেষ্টা করছি কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে। ১ শতাংশ বাড়াতে পারলেও সেটিকে ভালো বলা যাবে।
সে কারণে বাজেট প্রণয়নে দেশি সম্পদের উপর একটু বেশি জোর দেওয়া হবে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণ নিতে হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপিও যৌক্তিকভাবে প্রণয়ন করা হবে। আগে ৮-১০ বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্প নেওয়া হতো—সেগুলোর সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। এখন মেগা প্রজেক্ট বলতে আমরা বুঝি ২-৩ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প, যেমন মেট্রোরেল, কিন্তু এগুলো মেগা নয়। সেগুলো চলবে, কারণ এগুলো চলমান প্রকল্প।
অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু থাকবে—যেমন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ ভাতা, প্রতিবন্ধীদের ভাতা—ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হবে, তবে খুব বেশি নয়, অল্প বাড়ানো হবে। ‘জুলাই আন্দোলনে’ সম্পৃক্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বড় আকারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা ইতোমধ্যেই কিছু অর্থ অনুমোদন দিয়েছি, তবে পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কারণ অনেকেই গ্রামে ফিরে টিকতে পারবেন না।
জ্বালানির দাম আমরা বাড়াব না। চেষ্টা করব, যেখানে খরচ বেশি, সেগুলোতে যেন সাশ্রয় করা যায়। যেমন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বড় ভর্তুকি যাচ্ছে। কৃষি খাতের অবস্থা তুলনামূলক ভালো—সেখানে আমরা মূলত সার, কীটনাশক ও সেচের জন্য ডিজেলে ভর্তুকি দিই। তবে কৃষিতে ভর্তুকি কমানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কিছুটা বাজেট কমতে পারে, তবে সেটিও হবে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। আগের বাজেটে অনেক টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এমন সব প্রকল্পে, যেগুলোতে ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বাস্তব চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ চাওয়া হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কিছু প্রকল্পে দেখা গেছে ৫০০-৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ানো হয়েছিল ঠিকাদারদের সুবিধার জন্য। আমরা এখন এই বিষয়গুলো দ্বিতীয়বার যাচাই করছি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: এবার করমুক্ত আয়সীমা বাড়বে কী?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ, একটু বাড়াতে হবে, কিন্তু খুব বেশি বাড়ানো যাবে না। এ বছরে প্রায় ১৮ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ‘শূন্য কর’। চিন্তা করেন! সাড়ে তিন লাখ টাকার উপরে আয় হলে করযোগ্য; কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগই ‘শূন্য কর’ দেখাচ্ছে।
যারা কর দেওয়ার কথা, তাদের অনেকেই দেয় না—বেঁচে যায় না দিয়ে। যার মাসিক আয় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা, সেও ‘শূন্য কর’ দেখাচ্ছে। তবে হুট করে সব বন্ধ করা যাবে না। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে কর ফাঁকি দেন, তাদের জন্য ‘ন্যূনতম কর’ চালু করব। অর্থাৎ, রিটার্ন জমা দিলে একটা ন্যূনতম কর অবশ্যই দিতে হবে—আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: এবারও বাজেটে ঘাটতি থাকবে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করবেন কীভাবে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: প্রথমত, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ। আর এজন্য প্রথমেই আমরা কর ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। কর ব্যয় কমানো বলতে বুঝায় বিভিন্ন ছাড় সীমিত করা। এতে আদায়যোগ্য রাজস্ব বাড়বে।
আরেকটা বড় বিষয় হলো—কর ফাঁকি কমানো। আমরা আগামী বছর থেকে ব্যক্তি শ্রেণির আয় কর পুরোপুরি ডিজিটাইজ করব।
ব্যবসায়ীদের কর্পোরেট কর হার কমাতে চাই, যাতে মোট কর আদায় বাড়ে। আমরা মনে করি নীতি সুদহার এখন তুলনামূলক উঁচু আছে, তবে একেবারে নামিয়ে দিতে পারব না। কারণ এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। আমরা চাই ব্যবসা-বাণিজ্যকে একটু উৎসাহিত করতে, কারণ মূল রাজস্ব কিন্তু ব্যক্তি আয়ের চেয়ে কর্পোরেট আয় থেকেই আসে।
অনেক খুচরা ব্যবসায়ী ভ্যাট আদায় করেন কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দেন না, সেটি বন্ধ করা হবে।
বাজেট ঘাটতির একটা অংশ আমরা বৈদেশিক সহায়তার মাধ্যমে পূরণ করব। তবে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে দেব না—চেষ্টা থাকবে ৪ শতাংশের মধ্যে রাখতে। ব্যয় কমানোর দিকেও আমাদের মনোযোগ রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় যেমন—গাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণ—এগুলো আমরা আগেই কমিয়ে দিয়েছি।
আমরা অহেতুক নতুন নির্মাণ যাচ্ছি না। যেমন—বড় বড় হাসপাতাল বানানো হচ্ছে, অথচ ডাক্তার নেই, যন্ত্রপাতি নেই। তখন সেগুলো চালু করাও যাচ্ছে না। তাই আমরা বলছি—আগে যেগুলো আছে, সেগুলোর সক্ষমতা ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে ডাক্তার নিয়োগ দিন, যন্ত্রপাতি আনুন।
আমাদের অগ্রাধিকার স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা। এমপিওভুক্ত স্কুল-মাদ্রাসার সংখ্যা অনেক বেড়েছে—এগুলোতে বড় অঙ্কের ব্যয় হয়। সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষকরা বেতন বৃদ্ধির দাবি করেছেন। আমরা কিছুটা রাজি হয়েছি, এটা বিরাট অঙ্ক। অপরদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষক ও কারিগরি শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাতা আছে—সেগুলো থাকবে।
অনেকে বলছেন, এবার সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি (৩.৯৭%) হয়েছে। আমরাও বলেছি, এটা ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এখনও আছে—সেই সময় ব্যবসা গতিশীল হয়। আমরা আশা করছি, প্রবৃদ্ধি ৪.৫% হবে। তথ্য-উপাত্ত-পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো কারসাজি করা হবে না। মাথাপিছু আয় বেড়েছে—আমরা সেটা নিয়ে বড়াই করছি না। বেড়েছে, কারণ টাকার মান কমেছে, ডলারের দাম বেড়েছে।
আমরা বলছি না যে অবস্থা একেবারে ভালো। তবে এতটা খারাপও নয় যে ‘আইসিইউতে’ বাংলাদেশ। এই সরকার যদি দায়িত্ব না নিত, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতো’।
আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করে ২.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছি, আর বিশ্বব্যাংক থেকেও বড় সহায়তা এসেছে। অনেকে বলে, বিদেশি ঋণ কেন নিচ্ছেন? আমরা বলি—বিদেশি ঋণ ছাড়া হয়তো চলত না- আমরা এখনও ঋণসীমা অতিক্রম করিনি এবং যারা বোঝেন, তারা জানেন—এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটে কী থাকছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: ওখানে অনেক সমস্যা। চেয়ারম্যান বা প্রেসিডেন্ট পাল্টালেও ১৫ বছর ধরে একই অবস্থা। ‘ফ্লোর প্রাইস’ দিয়ে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারকে রক্ষা করা হয়। সুকুক বন্ডে আইসিবি থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নিলেন, এগুলো ঠিক না। অনেকে ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’ করে দাম বাড়ায়, তারপর বিক্রি করে চলে যায়। অনেক কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, অথচ শেয়ারের দাম বাড়ছে।
পুঁজিবাজারের নিয়ে জরিমানা হচ্ছে, বিখ্যাত, বিখ্যাত লোকের জরিমানা হচ্ছে, দিচ্ছে না কিন্তু সেগুলো তো পাওনা ছিল। একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়ের জরিমানা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আরও মামলা হবে।
পুঁজিবাজারের পতন থামানোর জন্য এখন আমরা চাচ্ছি নতুন কিছু প্রাথমিক গণপ্রস্তাব আনার জন্য—সরকারি প্রতিষ্ঠা, ইউনিলিভার, পিজিসিএলসহ কিছু বড় কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা ভাবছি। নতুনদের সঙ্গে আলোচনা করছি তারা যেন আসে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: জুলাই গণঅভুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছু থাকবে কী বাজেটে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: তাদের আমরা ইতোমধ্যে তিন ধরনের সহায়তা দিচ্ছি। একটা—যারা মারা গেছে তাদের জন্য, আরেকটা—যারা পঙ্গু হয়েছে, তাদের জন্য, আরেকটা—চিকিৎসার জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আর যারা আহত হয়েছে এবং যারা মারা গেছে, তাদের পরিবারের একজনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এটা আপাতত আমরা বাস্তবায়ন করেছি।
পুনর্বাসন বিষয়ে আমরা বলেছি—এই কাজটা সাধারণত দুইটা মন্ত্রণালয় করে। একটা হলো মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, আরেকটা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এখন আমরা বলেছি, এটা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় দেখবে, তবে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও কিছু অংশ করবে। এবছরের বাজেটে এই খাতের জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকবে। ভবিষ্যতে পুরো পুনর্বাসন পরিকল্পনাও আসবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সম্পর্কে বাজেটে কি সুখবর রয়েছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা হল—বাপেক্সকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরেকটা হল—আমাদের ‘সিস্টেম লস’ কমানো। এটা একটা বিশাল কাজ। কারণ এটা উৎপাদন ব্যয় বাড়ায়।
আমরা আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট)-এর সাথে যেসব চুক্তি আছে সেগুলো পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করছি। তবে এসব চুক্তি চট করে পুনর্বিবেচনা করা যায় না। আমরা যেমন রামপাল প্রকল্পে আছি, ওদের সাথে আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে। তাই দ্রুত কোনো কিছু ইস্যু করাও কঠিন।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—আমরা নিজেদের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো অনুসন্ধান করিনি। রক্ষণাবেক্ষণ করিনি, অফশোরে কিছুই করিনি। মিয়ানমারও এখন অফশোর ড্রিলিং করছে। ভারত অনেক আগেই এগিয়ে গেছে। আমরা অনেক আগেই জাতিসংঘের মাধ্যমে ব্লক পেয়েছি, কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।
সম্প্রতি একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, কিন্তু সাড়া কম হওয়ায় আবার দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। কারণ এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার। একটা কূপে দুই–তিনশ কোটি টাকা খরচ হয়, তাও গ্যাস পাওয়া না-ও যেতে পারে। দশটা কূপেও বিলিয়ন ডলার খরচ হবে—একটা পেলেই কয়েক বিলিয়ন লাভ, না পেলে লোকসান। এগুলো তাই বড় কোম্পানির কাজ। আমি আমেরিকার জ্বালানি বিভাগের সাথে আলাপ করেছি, তারা বলেছে—ওরা সাতটা কোম্পানি আছে যারা আগ্রহী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাজেটে প্রতিবারই কালো টাকার বিষয়টি সামনে আসে। এবার এ বিষয় নিয়ে কি বার্তা থাকছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: কালো টাকার বিষয়ে ঢালাও যে সুযোগ ছিল, সেটা এমনি এমনি চলতে দেওয়া হবে না। অনেকের কালো টাকা তৈরি হয় মূলত জমি বিক্রি করে, কারণ সেখানে মূল্যটা অস্বাভাবিক থাকে।
যেমন ধরুন—গুলশানের এক কাঠা জমির সরকারি দাম ১৫ লাখ, অথচ বাস্তবে সেটা এক কোটি বা ৫০ লাখেও বিক্রি হয়। কেউ যদি একটা বাড়ি কেনে ৬০ লাখে, আসলে তো তিন-চার কোটি টাকায় কেনে। এ সমস্যার কারণ, ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই প্রকৃত লেনদেন দেখাতে পারে না। অনেকে এই কারণে জমি কিনে ফেলে রাখেন, নিবন্ধন করেন না—কারণ ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ করবে কেন?
আমরা চেষ্টা করছি একটা সমাধান খুঁজে বের করতে। যদি কর হার কমিয়ে দিই, আর জমির যে নির্ধারিত মূল্য আছে তা বাড়িয়ে দিই, তাহলে প্রকৃত কর আয় ঠিক থাকবে। তখন হবে কী—প্রকৃত লেনদেনকারী মানুষগুলো জমি নিবন্ধনে আগ্রহী হবে।
আমি একটি কমিটি গঠন করেছি ভূমি সচিব, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও প্রতিরক্ষা সচিবকে নিয়ে। তারা জমির নির্ধারিত মূল্য পুনর্বিবেচনা করবেন।
বাংলাদেশে দুই বছর পরপর জমির দাম নির্ধারণ হওয়ার কথা—কিন্তু তা হয় না। সব মৌজায় খুব জটিল অবস্থা। যেমন গ্রামের একটা হাট আছে—তার জমি আর সাধারণ কৃষি জমি এক দামে হয় না। এখন যদি হাটের দামেই নির্ধারণ করা হয়, তাহলে কৃষক নিবন্ধন করতে গিয়ে বিপদে পড়বেন। আবার যদি কৃষি জমির দামে হাটের জমি নিবন্ধন হয়, তাহলে সরকারি আয় কমে যাবে। এই কারণে আমরা ভূমি সচিবকে বলেছি কীভাবে মূল্য নির্ধারণ করা যায়, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে।
তখন হয়তো নিবন্ধন ফি কমানো হবে, কিন্তু স্থানীয় সরকার ফি (যেমন পৌরসভার ফি) হয়তো কমানো যাবে না—কারণ পৌরসভা আইনে বাধা আছে।
এই বাজেটেই হয়তো আমরা পুরোটা পারব না, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য এটি খুব জরুরি। না করলে সারাদেশে এক ধরনের অস্বচ্ছতা থেকে যাবে। ভূমি রাজস্ব বাড়বে না, বরং কমে যাবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: সবাই দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে বাজেট দিতে গিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন কী?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: চাপ তো আছেই। দাবির চাপ তো থাকবেই। আমি বলছি না যে কোনো চাপ নেই। অনেক রকম দাবি আছে—কিছু আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি, কিছু পালন করছি।
এনবিআরের ব্যাপারটা দুর্ভাগ্যজনক। বিশ্বের সব দেশেই নিয়ম হল—কর নীতি আলাদা বিভাগ, কর আদায় আলাদা বিভাগ। এখন আমরা চাইছি নীতি বিভাগ আলাদা হোক। নীতি যারা করবেন, তারা একটা মানদণ্ড দেখে করবেন।
আর এখন একটা নতুন নিয়ম হচ্ছে—এসআরও কেবল অর্থ বিভাগ করতে পারবে, তাও যদি অর্থমন্ত্রী অনুমোদন দেন এবং সংসদে পাশ হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বা কমিশনার নিজে থেকে এসআরও জারি করে প্রকাশ করতে পারবেন না। এখন ওরা হইচই করছে—কেন আমাদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে। আমি বলি—এটা তো এখন আইনে চলে এসেছে। এখন ওদের কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে।
এনবিআরে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার (২৫০০০–৩০০০০) কর্মকর্তা থাকবে, নীতি বিভাগ হবে ১০০–২০০ জনের, তারা হবেন পেশাদার অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, যারা হিসাব করবেন- কর বাড়ালে কোথায় চাপ পড়বে না।
আমি বলি, এতে তো তাদের লাভই হবে—আগে একজন সচিব ছিল, এখন দুজন হবে। এমনকি হয়তো একজন সচিব তাদের লাইন থেকে আসবে না, তবে আরেকজন তো আসবে। পৃথিবীর কোথাও শুধু ক্যাডার থেকে সচিব হয় না। এখন তো আরও ভালো হয়েছে—বাণিজ্য সচিব, অর্থ সচিব কর আরোপের দায়িত্বে থাকছেন। তাহলে তোমরা এনবিআরের সচিব নিয়ে পড়ে থাকো কেন? তোমরা বলো—‘আমাদের কেউ সচিব হয় না’। তবে ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাবে—গত ৩৩ বছরে ৩–৪ জন সচিব হয়েছেন এনবিআর থেকে। আমি ওদের বলেছি—এসো, কথা বলো, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে নিই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: সংস্কার, নির্বাচন, বাজেট-সব কিছু নিয়ে মানুষ জানতে চায়। আপনারা তো গত সরকারের একটি বাজেট পেয়েছেন, এখন একটি নতুন বাজেট দিচ্ছেন—যেটি সম্ভবত নতুন সরকার বাস্তবায়ন করবে। সে বিষয়ে কিছু বলুন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমরা যেটা করছি, সেটা কিন্তু খুব বেশি ভিন্ন কিছু না—বড় কোনো পরিবর্তন না। অনেকেই বলছেন, কেন করছেন এই বাজেট? ছয় মাসের জন্য তো একটা ‘পলিসি’ হতে পারে—তবে বুঝতে হবে, সংবিধান অনুযায়ী, এক বছরের জন্য আর্থিক বিবৃতি দিতে হয়। আমরা মূল কিছু বিষয় বাস্তবায়ন করব। পরে কেউ যদি মনে করে কর কমিয়ে দেবে- ভাল, সেটা করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে সাধারণত তা হয় না। আমাদের মূল বার্তাটা হল—আমরা সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট করছি এবং ভবিষ্যতের সরকার যেন এটাকে অনুসরণ করে। যদি ভবিষ্যতের সরকার মনে করে, জনসাধারণ এটাকে চাচ্ছে না বা প্রচণ্ড বিরোধিতা আসছে—তাহলে সেটা তারা পরিবর্তন করতে পারবে।
এখন জনগণ অনেক সচেতন। তারা তুলনা করবে—আমরা কী করেছি, তারা কী করছে। আগের মত আর মুখ বুজে সহ্য করবে না। এখন তো জনগণ আরও সরব এবং স্পষ্টভাষী হয়েছে।
আমরা বলছি, কিছুটা সংস্কারভিত্তিক বাজেট দিচ্ছি—একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই। আগে উন্নয়নের সুফল ছিল সীমিত কিছু লোকের জন্য—যেমন ব্যাংকার, এমপি, ব্যবসায়ী, তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) খাতের মালিক। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই ছিল। বাকিরা তো ধারে কাছেও আসতে পারেনি। এত বৈষম্য হয়েছে—তাই আমাদের বাস্তবায়ন করতেও সমস্যা হচ্ছে। যেকোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে গেলেই দেখি এখানে বাধা, সেখানে জটিলতা।
আদানি উৎপাদন করবে, অথচ কোনো কর দেবে না—এটা কোনো দেশে হয়? আমরা যখন ধরতে যাই, তখন বলা হয়—বন্ধই করে দিই। এখন ব্যবসায়ীরা বলছেন—আপনি তাকে দিয়েছেন, আমাকে কেন দেবেন না? আপনি বলছেন চাপ নেই? এনবিআর চেয়ারম্যান প্রতিদিন কারও না কারও জন্য সুবিধা দিতেন, এখন সবাই আমাকে এসে বলছেন—আমাকেও দিন। আমি বলছি—না, আমি কাউকে দেব না। জিরো!
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: শোনা যাচ্ছে, ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে সাময়িকভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এবারকার বাজেটে ব্যাংক খাত, অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি, পুঁজিবাজারের কারসাজির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: পুঁজিবাজারের বিষয়টি আমরা প্রথমেই ধরেছি। দেখবেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অনিয়ম করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। একটু সময় লেগেছে। অনেকে সমালোচনা করেন, কেন ছয় মাস, নয় মাস লাগে। কিন্তু এসব সহজে বের করা যায় না। কিন্তু আমরা সেটা বের করেছি—অনেকের হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে যারা কারসাজি করেছিল, তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু শুধু নিয়ম করে লাভ হবে না, উৎসাহ দেওয়া দরকার।
ব্যাংকের বিষয়ে যেটা করছি, সেটা হল-একটা সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা অল্প অঙ্কের আমানত রেখেছেন, তাদের টাকাটা কীভাবে ফেরত দেওয়া হবে তা ঠিক করা হয়েছে। আর যারা বড় অঙ্ক রেখেছেন, তাদের বন্ড বা শেয়ার আকারে ফেরত দেওয়ার পদ্ধতি তৈরি করা হচ্ছে।
ছয়টি ব্যাংকের সম্পদ মান নিরীক্ষা হয়েছে। এখন এই ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে কত টাকা লাগবে পুনর্গঠনের জন্য। বাংলাদেশ ব্যাংক হিসাব করছে। আইএমএফও বলেছে, যে টাকার অংক বলেছে, নাই বললাম।
তাদের ভাষায়, ‘উদ্ধার’ করতে হবে—মানে যাদের ক্ষতি হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলো যাদের কিছুই উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই, তাদের হয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা ২২ হাজার কোটি টাকা দিলাম—এই ব্যাংকগুলোর জন্য।
কিছু ব্যাংক পুরোপুরি উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। একে বলা যায়, পরিত্যক্ত জাহাজ-টাইটানিকের মতো। ওরা নিজেরাই ঘোষণা করে যে আর কিছুই করা যাবে না, তখন ক্যাপ্টেনও আত্মহত্যা করেন। ঠিক সেরকম অবস্থা। তবে একটা পুনর্গঠন আইন পাশ হয়েছে। বোর্ড ইতোমধ্যে বদলানো হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
অর্থ পাচার নিয়েও কাজ হচ্ছে—১২টা ঘটনা ইতোমধ্যে শনাক্ত হয়েছে, আরও অনেকটা চিহ্নিত হয়েছে, কিন্তু সময় লাগবে।
অনেকে বলেন, সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করবো। তবে বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য আমরা নির্বাচনের অপেক্ষা করবো না। আমরা বলছি, নির্বাচন ছাড়াও সংস্কার করা দরকার এবং সেটা আমরা শুরু করেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া, হুট করে শেষ হবে না।
রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না—এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশ আবার ৯০-এর দশকের অবস্থায় ফিরে যাবে। নির্বাচন আরেকটা সরকার নিয়ে আসবে, একটার পর একটা। কিন্তু যদি জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হয়, সব কঠিন হবে।