Published : 02 Jun 2025, 05:25 PM
নতুন অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবার ব্যাংক ঋণ প্রায় ২৪ শতাংশ কমতে যাচ্ছে।
অবশ্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক ঋণ সংশোধনের পর কমে হয় ৯৯ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংক ঋণ কমানোর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ বলেন, “ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেওয়া কমাবে, এটা একদিক থেকে বেসরকারি খাতের জন্য ভালো। কারণ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ বেশি পাবেন।”
ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারের বন্ড মার্কেট থেকেও ঋণ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
“আমরা ভেবেছিলাম, সরকার বন্ড মার্কেট থেকে ঋণ নেবে। তাহলে এই মার্কেট আরও বেশি চাঙ্গা হত। ঋণের জন্য ব্যাংক খাতের ওপর ভরসা কমাতে হবে।”
এবার বাজেটের আকার ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে।
অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে সাধারণত ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয় সরকার। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার এবার ঋণ নিতে চায় জিডিপির ২ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে এবার এ ঋণ ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম হতে যাচ্ছে।
নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) থেকেও ঋণ নেওয়া কমাতে চায় সরকার।
নতুন অর্থবছরে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা, যা আগেরবার ছিল ২৩ হাজার ৪০০ কোটি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনা ও সরকারি অর্থ খরচ কমিয়ে আনতে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
ব্যাংক সাধারণত ট্রেজারি বিল-বন্ডের মাধ্যমে সরকারকে ঋণ দেয়। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকেই ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার বাড়ছে। তাতে ব্যাংকগুলো আগ্রহ হয়ে এ খাতে বিনিয়োগ বেশি করছে।
বর্তমানে ট্রেজারি বিল বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ১২ শতাংশ থেকে প্রায় ১৩ শতাংশের কাছাকাছি সুদ পাওয়া যায়।
অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন, ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ বেশি নিলে বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ঋণ কম পান। তাতে দেশের উৎপাদন কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, টানা পাঁচ মাস ধরেই ৮ শতাংশের নিচে রয়ে গেছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির যে নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হয়, তা ওঠানামা করলেও সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসা যায়নি।
মার্চে ঋণ প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়ে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশে উঠেছে। আগের মাসে তা ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।
আগের মাস জানুয়ারিতে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আন্দোলন শুরুর মাস জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকার পতনের মাস অগাস্টে তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে।
পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনা ও সরকারি অর্থ খরচ কমিয়ে আনতে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
এতে গত জানুয়ারি থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমে যেতে শুরু করে। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ৪২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ শতাংশ।