Published : 11 Jun 2025, 03:01 PM
গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বেসরকারি খাতের ব্যাংক ঋণের নিম্নমুখী প্রবণতা থামার পরের মাসেই আবার আগের চিত্রই দেখা গেছে।
মাঝে মার্চে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়লেও পরের মাস এপ্রিলে তা আবার কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে, এপ্রিলে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এতে টানা ছয় মাস ধরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে।
এর আগের মাস মার্চে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা জুলাই-অগাস্টের পট পরিবর্তনের পর টানা আট মাস ধরে নিম্নমুখী প্রবণতায় ছেদ টেনেছিল। আগের মাসে ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। তার আগের মাস জানুয়ারিতে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
ব্যবসায়ী নেতা বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, কলকারখানায় পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অর্থনীতির সার্বিক অবস্থার এখনো উন্নতি না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী কম। তারা ওয়েট অ্যান্ড সি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।”
তাছাড়া ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেশি হওয়ায় ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
ব্যাংকাররা বলছেন, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণে না যাওয়ার বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। এ কারণে কারখানা স্থাপনের মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে মূলধনি যন্ত্র আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৪১ কোটি ৯১ লাখ ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৯৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। শতকরা হিসাবে কমেছে ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
ব্যাংকের উচ্চ সুদহারও বেসরকারি ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ৯ শতাংশের ওপর থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণেই ঋণের সুদহার বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে রাখার যে নীতি ঠিক করেছে, ঋণ প্রবৃদ্ধি এরইমধ্যে সেটির চেয়ে নিচে নেমে গেছে।
সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি কমা না পর্যন্ত নীতি সুদহার ১০ শতাংশে রাখা হবে। মূল্যস্ফীতি কমলে নীতিসুদহার কমানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই মাসে অস্থিরতা শুরুর পর ৫ অগাস্ট সরকার পতন ঘটে। ওই মাস থেকেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে।
আন্দোলন শুরুর মাস জুলাইয়ে এ খাতে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও পরের মাস অগাস্টে তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। সেই থেকে শুরু নিম্নমুখী প্রবণতায় সেপ্টেম্বরে তা কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
নিম্নমুখী এ হার পরের মাসে কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে। পরের মাস নভেম্বরে তা নেমে যায় ৮ শতাংশের নিচে– ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে এবং ডিসেম্বরে এ হার ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির তথ্য আছে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে। সেই তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারীর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশের উপরে