Published : 02 Nov 2023, 06:16 PM
গাইবান্ধাকে ‘মডেল শহর’ হিসাবে গড়ে তুলতে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও গাইবান্ধা পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে এক মহাপরিকল্পনা।
‘বিশ্ব শহর দিবস’ উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়নে অর্থায়ন’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনা সভা ও প্রদর্শনীতে এই মহাপরিকল্পনার মোড়ক উন্মোচন করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ব্র্যাক।
সেখানে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাইবান্ধা পৌরসভা বর্তমানে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। এই পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রম এতদিন কোনো মহাপরিকল্পনা (মাস্টার প্ল্যান) ছাড়াই বাস্তবায়িত হয়ে এসেছে। ফলে এতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের চাহিদার প্রতিফলন সেভাবে লক্ষ্য করা যায়নি।
গাইবান্ধা শহর যেন একটি পরিকল্পিত ও স্মার্ট নগরী হিসেবে সারাদেশে রোল মডেল হয়ে দাঁড়াতে পারে, এবং সরকারের ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে এই মহাপরিকল্পনার কাজ হাতে নেয় ব্র্যাক, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও গাইবান্ধা পৌরসভা।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, “সরকার এখন সারা দেশে পরিকল্পিত নগর গড়তে কাজ করছে। গ্রামেই শহরের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। সারা দেশে পরিকল্পিত নগর গড়তে যা করা দরকার, আমরা সেটা করছি। আমরা এমন উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে গ্রামেও কেউ ঘরবাড়ি বানাতে গেলে পরিকল্পনা করে সেটা করে।”
তিনি বলেন, “গাইবান্ধার পরিকল্পনা চমৎকার একটি উদাহরণ। ব্র্যাককে উদাহরণ হিসাবে দেখাব। বাকিদেরকেও আমরা ডাকব। সবাই মিলে কাজ করলে দেশ এখানে থাকবে না।”
নগর উন্নয়ন অধিপ্তরের পরিচালক ড. খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক বলেন, “এবারের বিশ্ব শহর দিবস উদযাপনের স্বার্থকতা হচ্ছে, সরকারিভাবে পরিকল্পনা হয়, সেটা আমরা দেখে আসছি। এবার গাইবান্ধায় দেখলাম, সরকার ও এনজিওর সমন্বয় হয়, সেটার স্বার্থক রূপায়ন দেখলাম গাইবান্ধা পৌরসভার পরিকল্পনায়।”
আসিফ সালেহ বলেন, “গাইবান্ধা শহরের জনসংখ্যা ৩ হাজার থেকে বেড়ে প্রায় ২ লাখ হয়ে গেছে। এটি কেবল গাইবান্ধা শহরের নয়, দেশজুড়েই এই চিত্র। আমাদের এখন নগরকেন্দ্রিক উন্নয়ন চিন্তাকে নতুন করে সাজানো প্রয়োজন। কারণ জলবায়ু অভিযোজন আর নানা স্বপ্নপূরণে মানুষ এখন নগরমুখী হচ্ছে। গাইবান্ধা শহরের পরিকল্পনা সেই লক্ষ্য অর্জনে একটি পদক্ষেপ।
“কিন্তু প্রকৃত সাফল্য তখনই আসবে, যখন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে এবং এই শহরের সাফল্য দেখে অন্যরা আরো পরিকল্পিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ কবরে। যখন একটি ভালো নগর পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা একত্রিত হবে, আমরা তখন দেখব অনেক বড় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজশাহী একটি বড় দৃষ্টান্ত। এখন দ্বিতীয় টায়ারে থাকা শহরগুলোর কথা ভাবার সময় এসেছে এবং পরিবেশবান্ধব এমন মডেল শহর গড়া প্রয়োজন, যেটা প্রতিটি নাগরিকের সুযোগ-সুবিধার দিকে খেয়াল রাখবে।”
তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, নগর প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র হিসাবে এক্ষেত্রে সরকারের সাথে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে পারব, যেটা অর্থনৈতিক উন্নয়নে চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে।”
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান মো. ইমামুল আজম শাহী বলেন, “নগরায়নের ফলে বিশ্ব পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং তারই সাথে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, পরিকল্পনাকে আরও অন্তর্ভূক্তিমূলক এবং টেকসই করা।”
অনুষ্ঠানে ‘গাইবান্ধা পৌরসভা মহাপরিকল্পনা’ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. সাইফ ইকবাল এবং গাইবান্ধা পৌরসভা মাস্টার প্ল্যান তৈরি প্রকল্পের পরামর্শক মো. কাওসার উদ্দিন ।
মূলত বাংলাদেশের শহরগুলোকে নিরাপদ, টেকসই, এবং সহনশীল করার লক্ষ্যে ব্র্যাক ২০১৬ সাল থেকে ‘আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ শুরু করে। ব্র্যাক মনে করে, শহরের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর অধিকার, সুরক্ষা ও সহনশীলতা উন্নত করতে পারলে তা দারিদ্র্য ও বঞ্চনা কমাতে সহায়তা করবে।
২০১৪ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর ‘বিশ্ব শহর দিবস’ পালিত হয়।