Published : 04 Apr 2023, 09:23 PM
শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মত সংকটের মুখে বাংলাদেশকে পড়তে না হলেও টেকসই প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরার পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হানস টিমার মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশকে আর্থিক খাতের অস্থিরতা দূর করার পাশাপাশি লেনদেন ভারসাম্য স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে অর্থনীতিতে যেসব অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে, সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের ‘অর্থনৈতিক আপডেট’ প্রকাশ উপলক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলনে আসেন এই অর্থনীতিবিদ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সরকারের চুক্তিকে ইতিবাচক হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসন্ন কোনো সংকটের মুখে নেই, বিশেষ করে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর পর। সেই অর্থে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলনীয় নয়।
“তবে একই সময়ে বাংলাদেশের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং সেগুলো লেনদেন ভারসাম্য (ব্যালেন্স অব পেমেন্টস) ও আর্থিক খাতে কেন্দ্রীভূত।”
হানস টিমার বলেন, ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে ডলার বাজারে অস্থিরতার সময় যে চাপ তৈরি হয়েছিল, তাতে টাকার বিনিময় হার ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম বিনিময় চালু হয়েছে, যা অর্থনীতিতে তৈরি করেছে অসামঞ্জস্য।
“আইএমএফের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ বহুবিধ বিনিময় হার থেকে বেরিয়ে আসছে, সেটা ইতিবাচক। কিন্তু একই সময়ে আপনি দেখবেন, ওই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে অনানুষ্ঠানিক বিনিময় বাজারও গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের আর্থিক বাজারে এখনো টেনশন আছে, আর সম্ভবত সেটা বাড়ছে।”
কোভিড মহামারীর সময়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোকে সরকারের দেওয়া সহায়তার উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবার শেষে ওঠানোর প্রসঙ্গ টেনে বিশ্ব ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, “এর ফলে, ঋণ মানের বাস্তব প্রকৃতি আর সম্পদের গুণগত মান ঢাকা পড়ে গেছে।
“এবং খুব সম্ভবত খেলাপি ঋণের পরিমাণ সরকারের স্বীকার করা পরিমাণের চেয়ে বেশি। এখন আমরা দেখছি, ধীরে হলেও ওই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।”
আরেক প্রশ্নে হানস টিমার বলেন, আপৎকালিন ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেখান থেকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসার জন্য অর্থনীতির সেইসব অসামঞ্জস্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, পরিস্থিত সামাল দিতে নেওয়া নানা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের ফলে যা তৈরি হয়েছিল।
তার মতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংককে সহায়তা দেওয়া, আমদানিতে বিধিনিষেধ ও মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণের মত পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতিতে এই অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে, যা দেশকে প্রবৃদ্ধির টেকসই গতিতে ফেরানোর কাজকে কঠিন করে তুলেছে।
বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারে যদি ১ শতাংশ পার্থক্য থাকে, তাহলে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ রেমিট্যান্স আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের বদলে অন্য অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে চলে যায়।
সেই প্রসঙ্গ ধরে হানস টিমার বলেন, “আপনি যখন বলবেন যে রেমিট্যান্স প্রবাহ দুর্বল, তার পেছনে অর্থনীতির ওইসব অসামঞ্জস্যও অংশত দায়ী, যা অর্থপ্রবাহকে অনানুষ্ঠানিক খাতে ঠেলে দিচ্ছে।”
টেকসই প্রবৃদ্ধি ও আরও মানুষকে উৎপাদনে সম্পৃক্ত করার জন্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ নীতি গ্রহণ পরামর্শ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, অনেক বছর ধরে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ ‘খুবই সফল’। যা চাকরির সুযোগ তৈরি করেছ, বিশেষ করে নারীদের।
“কিন্তু, বছরের পর বছর রপ্তানির ধরনে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তেমন কোনো নতুন উদ্যোগ দেখা যায়নি, যা একটি গতিশীল অর্থনীতির কাছ থেকে আশা করা হয়।”