Published : 15 Dec 2024, 11:40 PM
ভারতের কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সঙ্কটনাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
এই সংগীত গুরুর ‘মৃত্যুর খবর’ ছড়িয়ে পড়লেও তার বোন খুরশিদ আউলিয়া পিটিআইকে বলেছেন, “আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ। ভারত আর বিশ্বের সবখানে তার যত ভক্ত আছে, আমরা তাদের প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাই। দয়া করে তাকে এখনই শেষ করে দেবেন না।”
তিনি বলেন, “সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে আমি অনুরোধ জানাই, জাকির হোসেনের মৃত্যুর ভুল তথ্যের পেছনে ছুটবেন না। তিনি এখনও শ্বাস নিচ্ছেন। তার অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। কিন্তু তিনি এখনো আমাদের সঙ্গে আছেন। আমি অনুরোধ জানাব, তার মৃত্যুর কথা লিখে গুজব ছড়াবেন না।”
জাকির হোসেনের ম্যানেজার নির্মলা বাচানিকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি লিখেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন ৭৩ বছর বয়সী এই তবলাবাদক।
রোববার রাতে ভারতের প্রথম সারির অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম জাকির হোসেনের ‘মৃত্যুর’ খবর প্রকাশ করলে সংগীতপ্রেমী মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই ফেইসবুকে সেই শোকের প্রকাশ ঘটান বিভিন্ন বার্তা দিয়ে।
ভারতের যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন সোশাল মিডিয়ায়। শোক প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
মমতা এক্সে লেখেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তবলাবাদক উস্তাদ জাকির হুসেনের মৃত্যুতে গভীরভাবে মর্মাহত। দেশের এবং তার লক্ষ লক্ষ ভক্তদের জন্য চরম ক্ষতি। জাকির হুসেনের পরিবার এবং তার ভক্তদের আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।”
কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লা রাখার জ্যেষ্ঠ সন্তান জাকির হোসেন ভারতের পাশপাশি বিশ্ব সংগীতেও সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৫১ সালে মুম্বাইয়ে তা জন্ম; তবলায় হাতেখড়ি মাত্র সাত বছর বয়সে। ১২ বছর বয়সেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পেশাদার বাদক হিসেবে পরিচিত পেতে শুরু করেন তিনি।
ভারতীয় ধ্রুপদীর সংগীতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সংগীতেও দখল ছিল তার। তিনি ভারতসহ অন্যান্য দেশের বহু চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন।
প্রায় চার দশক আগে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোতে পাড়ি জমান জাকির হোসেন। সেখানেও তিনি সংগীত নিয়েই ছিলেন। বিভিন্ন দেশে অসংখ্য অনুষ্ঠান ও কনসার্টে শ্রোতাদের মাতিয়েছেন তবলার বোলে।
সংগীতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশ-বিদেশে বহু সম্মাননা পেয়েছেন জাকির হোসেন। ১৯৮৮ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’খেতাবে ভূষিত করে। ২০০২ সালে পান ‘পদ্ম ভূষণ’, ২০২৩ সালে ‘পদ্ম বিভূষণ’ সম্মাননা।
জাকির হোসেন ১৯৯০ সালে পান ‘সংগীত নাটক একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’, যা সংগীত জগতে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা হিসেবে বিবেচিত। আর বিশ্ব সংগীতের সবচেয়ে মর্যাদাকর গ্রামি পুরস্কারও জিতেছেন এই সংগীত মায়েস্ত্রো।