Published : 01 Dec 2024, 01:02 AM
বিজয়ের মাসের প্রথম দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গানসহ নানা আয়োজন নিয়ে আসছে ছায়ানট; যে উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাগরণী’।
শনিবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলন কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনে এ আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাঙালির বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের পয়লা দিন থেকে প্রতি সকালে একযোগে ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স ও ইউটিউব চ্যানেলে ছায়ানট একটি করে কন্টেন্ট প্রকাশ করবে।
“প্রথম কনটেন্ট হিসেবে থাকছে জাতীয় সংগীত। সমমনা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন- নালন্দা, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কণ্ঠশীলন ও ব্রতচারীর সহযোগিতায় হাজারো মানুষ তার দৃশ্যধারণে অংশ নিয়েছে, কণ্ঠ মিলিয়েছেন।”
তিনি বলেন, "প্রতিদিন সকাল ৯টায় নিয়মিত নতুন কন্টেন্ট প্রকাশ হবে। ১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচার করার মত কন্টেন্ট আমরা প্রস্তুত করেছি। পুরো বিজয়ের মাসেই থাকবে দেশের গান।
”পরে জানুয়ারি থেকে অন্যান্য কন্টেন্টও প্রচার হবে। ৩৬৫ দিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকবে ছায়ানট। সঙ্গীত বিষয়ক পাঠদান, গুণি ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কন্টেন্ট প্রচার করবে ছায়ানট।"
সবাইকে জেগে ওঠার আহবান জানিয়ে লিসা বলেন, "ছায়ানট বিশ্বাস করে, মানবজীবনের সকল আঁধার থেকেই জাগরণের প্রয়োজন। আমরা সৎ- সুন্দর আলোর অভিযাত্রী। সকলকে আহ্বান জানাই-জেগে উঠি জেগে থাকি, দেশে টানে জীবনের টানে, প্রাণের গানে। এই ভাবনা থেকে আয়োজনটির নাম 'জাগরণী'।"
বাঙালিকে আপন সংস্কৃতি ও দেশীয় বৈশিষ্ট্যে স্বাধীনসত্তায় বিকশিত হতে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে ছায়ানটের জন্ম।
সঙ্গীত-সংস্কৃতি ও সংস্কৃতি-সমন্বিত সাধারণ শিক্ষা নিয়ে কাজ করে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান। সাধনা ও চর্চার যথোচিত প্রসার ও বিকাশের মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে ছায়ানটের সব কার্যক্রম।
লাইসা আহমদ লিসা বলেন, "ছয় দশকের বেশি সময়ের পথচলায় ছায়ানট হাজার হাজার গানের সম্ভার গড়ে তুলেছে। সেসব গানের অডিও এবং সাম্প্রতিককালের ভিডিও থেকেই মূলত কন্টেন্টগুলো তৈরি হবে।"
তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে করতেই সব অনুষ্ঠান-আয়োজন ফেইসবুকে লাইভ করতে শুরু করেছে ছায়ানট। লাইভ আয়োজনগুলোও একযোগে প্রচার করা হচ্ছে পরিকল্পিত সকল নতুন মাধ্যমে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের বক্তব্য তাদের উৎসাহিত করেছে বলে তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক লিসা।
রমনা বটমূলে বাংলা ১৪২৪ বর্ষবরণের আয়োজনে সনজীদা খাতুন বলেছিলেন, “বিশ্বায়নকে স্বীকার করেই বাঙালির সাংস্কৃতিক অর্জনের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলো আমরা ছড়িয়ে দিই ইন্টারনেটে। এভাবে সব সংস্কৃতির পাঠই পাক আমাদের সন্তানেরা। ওই মাধ্যমকে তো আমরাও ব্যবহার করতে পারি দেশীয় সংস্কৃতির প্রচারের জন্য।"
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "ছায়ানট যেমন বিশ্বসমাজের বিচিত্র সংস্কৃতির সুরভি আস্বাদন করে তার অংশী হতে চায়, তেমনই চায়, আপন সামাজিক গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ুক বাঙালি সংস্কৃতির সুবাতাস। প্রতিটি ক্ষণে অগ্রসরমান অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে, এই বিবর্তনের কালে, আপন মাধুর্য ছড়িয়ে দেবার অন্যতম মাধ্যম-সোশাল মিডিয়া।"
প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে দেশের গান শোনানোর একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে ছায়ানট।
এবার সেই অনুষ্ঠান হবে কি না? জানতে চাইলে ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, "এবার আয়োজনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না করে আমরা ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে করার পরিকল্পনা করেছি। এ বিষয়ে প্রস্তুতিপর্ব চলছে, সব কিছু গুছিয়ে সবাইকে বিস্তারিত জানানো হবে।"
ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, "সর্বজনের কাছে কীভাবে আমাদের ভালো নিদর্শন ছড়িয়ে দেওয়া যায়, দেশে এবং বিদেশে।"
সঙ্গীতই হতে পারে ঐক্যের অবলম্বন' মন্তব্য করে তিনি বলেন, "বিশ্বায়নের যুগে মানুষের রুচি বদলে গেছে। হাজার বছর ধরে বাংলার গান, তার যে বাণী ও সুর তৈরি হয়েছে, এই সঙ্গীতই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে আমাদের অবলম্বন হতে পারে। একটি মানবিক সমাজ গড়তে বাংলা গান নিয়ে ছায়ানট দেশ ও বিদেশে সর্বজনের কাছে পৌঁছাতে চাই।"
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের যুগ্ম সম্পাদক পার্থ তানভীর নভেদ ও জয়ন্ত রায়সহ শিক্ষকরা।