Published : 10 Jun 2025, 11:58 PM
হলিউডের প্রভাবশালী অভিনয় শিল্পী দম্পতি ব্লেক লাইভলি ও রায়ান রেনল্ডসের বিরুদ্ধে অভিনেতা ও পরিচালক জাস্টিন বলডোনি যে ৪০ কোটি ডলারের মানহানির মামলা ঠুকেছিলেন, সেটি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
সিএনএন লিখেছে, লাইভলি ও তার স্বামী রেনল্ডসের বিরুদ্ধে বলডোনি মামলাটি করেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে। ওই মামলায় বিশাল অংকের ক্ষতিপূরণ দাবি করে বলডোনি অভিযোগ করেছিলেন যে লাইভলি তার ক্যারিয়ার ‘ধ্বংস’ করতে চাইছেন।
হলিউডে ‘ইট এন্ডস উইথ আস’ সিনেমার পরিচালক-অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মামলা ও পাল্টা মামলায় তোলপাড় হয় গেল বছরের শেষ নাগাদ।
গত বছরের ৬ অগাস্টে মুক্তি পাওয়া অল্প বাজেটের ‘ইট এন্ডস উইথ আস’ সিনেমাটি একটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। এই সিনেমাটি বানিয়েছেন জাস্টিন বলডোনি। তবে তিনি কেবল পরিচালনাই করেননি, ওই সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেও অভিনয়ও করেন বলডোনি।
সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন ব্লেক লাইভলি; তিনি এই সিনেমার অন্যতম প্রযোজকও ছিলেন তিনি।
‘ইট এন্ডস উইথ আস’ সিনেমায় বলডোনি ও লাইভলি স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। চিত্রনাট্যে পারিবারিক সহিংসতা তুলে ধরা হয়।
তবে বছরের শেষে বলডোনি এবং লাইভলি সিনেমাটি নিয়ে আলোচনায় আসেন মামলা মোকদ্দমার কারণে। গেল ডিসেম্বরে প্রথমে বলডোনির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন লাইভলি। পরে বলডোনিও পাল্টা মামলা করেন লাইভলির বিরুদ্ধে।
অভিনেত্রী লাইভলির সেই মামলাতেই জয় এসেছে।
রায়ে মামলার গুণাগুন নিয়ে কোনো বিষয় তুলে না ধরে বলা হয়েছে, লাইভলির বিরুদ্ধে বলডোনির অভিযোগের ‘কোনো ভিত্তি নেই’।
এক বিবৃতিতে লাইভলির আইনজীবী এসরা হাডসন এবং মাইক গটলিব মানহানির মামলা খারিজের এই রায়কে ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিবৃতিতে আইনজীবীরা বলেছেন, “আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মামলাটি ছিল জাল। এবং আদালত সঠিকভাবে রায় দিয়েছে।”
রায়ের পর লাইভলি তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একটি বিবৃতি দিয়ে।
সেখানে লাইভলি লিখেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর পুরো আইনি প্রক্রিয়ার সময় তিনি যে সমর্থন পেয়েছেন, তাতে তিনি কৃতজ্ঞ। নারীদের লড়াইয়ে পাশে থাকার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
বিবৃতিতে বলা হয়, "অন্যান্য অনেকের মত, আমিও প্রতিশোধমূলক মামলার যন্ত্রণা অনুভব করেছি। আমার বিরুদ্ধে মামলাটি পরাজিত হয়েছে। কিন্তু অনেকে আছেন যারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য সমর্থবান নন।
"প্রতিটি নারীর নিজেদের সুরক্ষা, তাদের সততা, তাদের মর্যাদা এবং তাদের জীবনের গল্পসহ তাদের কণ্ঠস্বরের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে আমি আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।"
ঘটনার শুরু যেখানে
বলডোনির বিরুদ্ধে লাইভলির অভিযোগের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে গত বছরের ২১ ডিসেম্বরে।
বালডোনির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে অভিযোগ করেন লাইভলি।
অভিযোগে বলা হয়েছিল, ‘ইট এন্ডস উইথ আস’ সিনেমার শুটিংয়ে ওই সিনেমার পরিচালক-অভিনেতা বলডোনি আপত্তিকর কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া চিত্রনাট্যের বাইরে যৌন দৃশ্য যোগ করার পরিকল্পনা করেছেন।
এরপর বিবৃতি দিয়ে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন বলডোনির আইনজীবী। এই ঘটনা কেবল মামলায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। লাইভলির অভিযোগের পর হলিউডে শুটিং সেটে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ঘটনার জেরে প্রযোজনা সংস্থা ‘ট্যালেন্ট এজেন্সি’ বলডোনির সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করে।
ঘটনা নতুন মোড় নেয় বলডোনির একটি পদক্ষেপে। বছরের শেষ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের’ বিরুদ্ধে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করে বসেন বলডোনি।
ওই মামলায় বলডোনি অভিযোগ করেন, সংবাদমাধ্যমটি তার বিরুদ্ধে লাইভলির করা অভিযোগ নিয়ে এক ধরনের মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার সুনাম নষ্টের পাঁয়তারা করছে।
তবে বিবিসিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল, তারা সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিলেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে বলডোনির মামলা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করেন লাইভলি। সেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, শুটিং সেটে তাকে পরিচালক বলডোনি ‘যৌন হয়রানি করেছেন’।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, “বলডোনি তার (লাইভলি) সম্মতি না নিয়ে সিনেমায় অন্তরঙ্গ দৃশ্য যোগ করতে চেয়েছেন। যা চিত্রনাট্যে ছিল না। এ ছাড়া তিনি অন্যায়ভাবে লাইভলির সঙ্গে তার স্বামীর (রায়ান রেনল্ডস) দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতেন।“
এর পর লাইভলি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন বলডোনি।
রায়ে বলা হয়েছে, লাইভলির সঙ্গে সিনেমা নিয়ে বলডোনির যে সিনেমা নিয়ে চুক্তি হয়েছিল, সেটির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে বলডোনি আগামী ২৩ জুনের মধ্যে একটি সংশোধিত অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।
এক বিবৃতিতে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের মুখপাত্র চার্লি স্ট্যাডল্যান্ডার বলেছেন, এই রায়ে তারা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ।
বলডোনির অভিযোগটিকে একটি সৎ প্রতিবেদন দমন করার অযৌক্তিক প্রচেষ্টা বলেও বর্ণনা করেছেন স্ট্যাডল্যান্ডার।
তিনি বলেন, "আমাদের সাংবাদিকরা জনগুরুত্বপূর্ণ একটি খবর সাবধানতার সাথে এবং ন্যায্যভাবে তুলে ধরেছিলেন। আমাদের সাংবাদিকতা এবং আমাদের সাংবাদিকদের কাজ যখন আক্রমণের শিকার হবে তখন আমরা অবশ্যই আদালতের দ্বারস্থ হব।"
রায়ের পর বলডোনির প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তার প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সিএনএন। তবে বলডোনির প্রতিনিধি সাড়া দেননি।