Published : 23 May 2025, 08:34 PM
নাম বদলের হিড়িকে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ‘সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের’ নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই-৩৬ ছাত্রীনিবাস’ করার ঘটনায় সোশাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এ ঘটনায় খেদ প্রকাশ করেছেন গীতিকার সুরকার প্রিন্স মাহমুদ।
তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম না কি এখন ‘জুলাই-৩৬ ছাত্রীনিবাস’। বোঝেন অবস্থা! সুচিত্রা সেন শুধু পাবনার না বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। তিনি কোনোদিন আওয়ামী লীগ করেছেন বলে খবর পাওয়া যায় নাই। লজ্জা...।“
এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল মিয়া নাম পরিবর্তন করা তিনটি ছাত্র ও ছাত্রীনিবাসের নতুন নামফলক উদ্বোধন করেন গত মঙ্গলবার।
বাকি দুইটি নিবাসের মধ্যে শেখ রাসেল ছাত্রাবাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিজয়-২৪’ ছাত্রবাস; বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়শা সিদ্দিকা (রা.)’ ছাত্রীনিস।
শতবর্ষ পেরুনো এই বিদ্যাপিঠে ওই ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন করার খবর তুলে ধরে সমালোচনা করা হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি গণমাধ্যমেও।
সরকার পতনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ছাত্র বা ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন করেছে সরকার। এবার পরিবর্তন আসলো মহানায়িকার নামে নামকরণ করা ছাত্রীনিবাসেরও।
১৯৩১ সালে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে করুনাময় দাশগুপ্ত আর ইন্দিরা দাশগুপ্তের পরিবারে জন্ম হয় রমা দাশগুপ্তের। শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময় পাবনার আলো-হাওয়াতেই কেটেছে রমার। রমা পাবনার মহাখালী পাঠশালার পাঠ শেষ করে পা দেন পাবনা গার্লস স্কুলে; দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই।
এরপর দেশভাগ আর দাঙ্গার শিকার হয়ে আরো অনেক হিন্দু পরিবারের মতো রমার পরিবারও পাড়ি জমায় কলকাতায়। সেটা ১৯৪৭ সালের কথা। ওই বছরেই কলকাতায় থিতু হওয়া ঢাকার আরেক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রমার।
শ্বশুরের আগ্রহ আর স্বামীর উৎসাহে রূপালী জগতে নাম লেখানো রমা হয়ে যান সুচিত্রা সেন।
দেশভাগের পর সুচিত্রার পরিবার পাবনা ছাড়ার পর সে সময় জেলা প্রশাসন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য বাড়িটি রিক্যুইজিশন করেন। এরপর বাড়িটি দখল হয়ে যায়।
১৯৮৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমান বাড়িটি বাৎসরিক চুক্তি ভিত্তিতে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে ইজারা দেন। এ ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধী আব্দুস সুবহান।
পাবনাবাসী বাড়িটি দখলমুক্ত করতে আন্দোলনে নামেন ২০০৯ সালে। ২০১৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাড়িটি দখলমুক্ত হয়।
বর্তমানে পাবনা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন...
যে দীপ জ্বেলেছিলেন সুচিত্রা সেন
যে কারণে রাজ কাপুরকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন
দীপ জ্বেলে যাওয়া রমা যেভাবে সুচিত্রা
'আঁধি' সিনেমার অর্ধশতক: সুচিত্রাকে কেন 'স্যার' ডাকতেন গুলজার?