Published : 31 May 2025, 02:03 PM
বাংলা ভাষাভাষীর নির্মাতারা তাদের সিনেমায় ইদানিং বাঙালিদের গল্প বলতে চান না, চিত্রনাট্যে ভিনদেশি পরিচালকদের অনুকরণের ছাপ থাকে বলে মন্তব্য করেছেন আদনান আল রাজীব।
এক্ষেত্রে বাংলা সিনেমা তার নিজস্ব শিকড় ভুলে অন্য ধারায় এগিয়ে যেতে চাইলে অস্তিত্বে টান পড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
পরিচালক রাজীবের ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘আলী’ বাংলাদেশের সিনেমাকে পৌঁছে দিয়েছে নতুন উচ্চতায়; ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র শাখার বিচারকদের রায়ে ‘স্পেশাল মেনশন’ পেয়েছে সিনেমাটি।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কোনো সিনেমা প্রথমবারের মত কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে স্বীকৃতি পেল।
কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজীব বলেছেন, তিনি ‘আলী’ সিনেমায় দেশের মানুষ, প্রকৃতি জীবন নিয়ে কথা বলেছেন।
আক্ষেপ করে রাজীব বলেন, “আমরা এখন সিনেমায় আর বাঙালির গল্প বলি না। আমার চারপাশ এবং বিদেশের দিকে তাকিয়ে, তাদের মত করে গল্প বলার চেষ্টা করি। বিদেশিরা কীভাবে সিনেমা বানাচ্ছেন, সেটাকেই যেন নকল করতে চাই।”
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সিনেমাও দেখেন রাজীব। তার উপলব্ধিতে উঠে আসে দুই বাংলার কথা।
রাজীব বলেন, “আমাদের শিকড় রয়েছে। একসময় সেই শিকড়ের গল্প বলত আমাদের সিনেমা। এখন আমরা যে অনুকরণের চেষ্টা করছি, সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। শিকড় ভুলে গেলে আমাদের অস্তিত্বও তো ভুলতে বসব, আমাদের পরিচিতিও নষ্ট হয়ে যাবে।”
রাজীবের কথায়, “বিদেশি সিনেমা দেখলে মনে হয়, এভাবেই তো তৈরি করতে হয়! আমিও তো এ ভাবে পারি। কিন্তু দিনের শেষে নিজের ঘরে ফিরে এলেই মনে হয়, আমি বাঙালি। আমার সিনেমাতে আমি বলব বাঙালির গল্প।”
রাজীবের এ সিনেমায় আলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন আল আমিন। গত বছরের নভেম্বরে সিলেটে ‘আলী’র দৃশ্যধারণ হয়।
সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র আলী উপকূলীয় এলাকার এক কিশোর। যেখানে সে থাকে, সেখানে নারীদের গান গাইতে দেওয়া হয় না।
শহরে যাওয়ার সুযোগ পেতে আলী একটি গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ব্যতিক্রমী বিষয় হল, সে নারীকণ্ঠেও গান গাইতে পারে।
সিলেটের প্রত্যন্ত গ্রামের চরিত্র হয়ে উঠতে আমিনকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজীব।
তিনি বলেন, “আমিনকে আমরা তিন-চার দিন রোদে বসিয়ে গায়ের রঙে একটা কালচে পরত এনেছি। যাতে গ্রাম্য চেহারাটি আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। আমরা রাত দুইটায় ঘুম থেকে উঠে প্রায় তিন ঘণ্টা সফর করে যেতাম শাপলা বিলে। সেখানে ভোর ৪টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে সেরে ফেলতে হত শুটিং।”
সিলেটের রাস্তাঘাট এখনও তেমন ভাল নয়, উন্নত নয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই মোটরবাইকে চড়েই শুটিংয়ের জায়গায় টিমকে যাতায়াত করতে হত বলে জানিয়েছেন রাজীব।
রাজীব বলেছেন তিনি এমন গল্প বলতে চেয়েছেন, যা দেখলে মনে হবে, এ ঘটনা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে ঘটতে পারে। কিন্তু দৃশ্যায়ন, চরিত্র বা তার পোশাক বলে দেবে, এ গল্প বাঙালির গল্প।
‘আলী’ নিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই পরিচালকের।
রাজীব বলেছেন, স্বল্প দৈর্ঘ্য বা তথ্যচিত্রের পাশাপাশি তিনি হাত দিতে চলেছেন পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সিনেমার কাজেও।
“অনেকেই যোগাযোগও করছেন। গল্প লেখার কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে কথাবার্তা চলছে প্রযোজনার জন্য।”
স্ত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও, উপযুক্ত চরিত্র ছাড়া কোনো কাজ তাকে দিতে চান না রাজীব।
তিনি বলেন, “আমাদের রাস্তা আলাদা। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে অবশ্যই এক সঙ্গে কাজ করব। এটা আমার স্বপ্ন।”
আরও পড়ুন
যারা নানা চাপে চুপ থাকেন, কথা বলেন না, 'আলী' তাদের উৎসর্গ করছি: রাজীব