Published : 21 May 2025, 05:04 PM
বিভ্ক্ত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দুটি পক্ষই অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিলেও এবার একটি পক্ষ তাকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ফেব্রুয়ারির তেইশতম জাতীয় সম্মেলনের ‘অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ কাউন্সিল’ অধিবেশন আগামী ২০ জুন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হয়।
বুধবার উদীচীর একাংশের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “তেইশতম জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগঠনের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, অসাংগঠনিক তৎপরতা, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, উদীচীর মধ্যে বিভ্রান্তি ও অনৈক্য সৃষ্টির অভিযোগে উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে সংগঠনের সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান জামসেদ আনোয়ার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বদিউর রহমান ও মাহমুদ সেলিমসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগের তদন্ত চলমান। তদন্ত কমিটির সুপারিশে তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনের ভিতরে ও বাইরে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এই প্রধান দুই ব্যক্তিকে সংগঠনের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠন।
জামসেদ আনোয়ার বলেন, আগামী ২৩ মে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে অভিযুক্তদের বিষয়ে সে সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সেখানেই তাদের ব্যপারে চূড়ান্ত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হবে।
উদীচীর তেইশতম জাতীয় সম্মেলনের ‘অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ কাউন্সিল’ অধিবেশন আগামী ২০ জুন অনুষ্ঠিত হবে বলে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বেলেছিলেন অধ্যাপক বদিউর।
বদিউর রহমান ওইদিন বলেন, গত ৬- ৮ ফেব্রুয়ারি উদীচীর তেইশতম জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী দিনের নির্বাচনী অধিবেশনে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যার ফলে সম্মেলনের কাজ অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
ওই সম্মেলনে উপস্থিত দেশি-বিদেশি প্রতিনিধির মধ্যে প্রায় আড়াইশ প্রতিনিধি অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ সম্মেলন গণতান্ত্রিকভাবে সমাপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান অধ্যাপক বদিউর।
বদিউরই সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যান।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের অচলাবস্থা নিরসনে আগামী ২০ জুন সকাল ১০টায় ঢাকার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) ষষ্ঠ তলায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ত্রয়োবিংশ জাতীয় সম্মেলনের অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ নির্বাচনি অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা উপস্থিত ছিলেন।
পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামসেদ আনোয়ার তপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে অধ্যাপক বদিউরের ডাকা সংবাদ সম্মেলন প্রত্যাখ্যানের কথা জানান।
এবার বদিউর রহমান ও মাহমুদ সেলিমকে অব্যহতি দেওয়ার কথা জানালো জামসেদ আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন অংশটি।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে অধ্যাপক বদিউর রহমানকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক বদিউর বলেছিলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কোনো বৈধ পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় সংসদ নেই।
আর মাহমুদ সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বদিউর রহমানকে তো উভয় পক্ষই সভাপতি হিসেবে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু বদিউর রহমান কোনো কমিটিতেই যান নাই। কারণ বদিউর রহমান মনে করেছেন, এখন কার্যত উদীচীর কোনো কেন্দ্রীয় সংসদ নাই।
“যারা অব্যাহতি দিয়েছেন, তারা অবৈধ কমিটি। এই অবৈধ কমিটির অব্যাহতিতে কিছু যায় আসে না। কারণ এই এখতিয়ারই তাদের নাই।”
উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের কমিটি করার জন্য অসমাপ্ত সম্মেলন শেষ করতে হবে বলেও করেন মাহমুদ সেলিম।
তিনি বলেন, “যারা সত্যের পক্ষে থাকে, তারা নির্বাচনে ভয় পায় না। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই উদীচীর কমিটি করতে হবে। এজন্য অসমাপ্ত সম্মেলন সমাপ্ত করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এটাই পথ।”
বিভক্ত উদীচী
গত ৬-৮ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপি ২৩তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করেছিল উদীচী। শিশু একাডেমিতে ৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের সমাপনী পর্বে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনাকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
একপক্ষ বর্তমান কমিটিকে রাখার পক্ষপাতি হলেও অপরপক্ষ সাধারণ সম্পাদক বদলে জোরালো অবস্থান নেয়। এতে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে যায় দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এক পক্ষ বর্তমান সভাপতি বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে’কে পরের মেয়াদে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দিতে চাইলেও আরেক পক্ষ সাধারণ সম্পাদক পদে চান জামশেদ আনোয়ার তপনকে।
সম্মেলনের পর দুই পক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আলাদা কমিটির তথ্য জানায়।
সবশেষ কমিটির প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক কংকন নাগের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি এবং অমিত রঞ্জন দে’কে সাধারণ সম্পাদক বহাল রেখে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে সবশেষ কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খানের সই করা আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় সংসদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
উভয় পক্ষই সভাপতি পদে অধ্যাপক বদিউর রহমানকে মেনে নেন এবং তারা দাবি করেন, তারা সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনেই কমিটি ঘোষণা করেছেন।
তবে সম্মেলনের পর থেকে উদীচীর কোনো কর্মসূচিতেই অধ্যাপক বদিউর রহমানকে আর দেখা যায় নি।
ওই ঘটনার পর অধ্যাপক বদিউর একটি লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন, “কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় সংসদ সভায় এমন একটি বিষয় নির্বাচনি কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে উদীচীর কর্মীদের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি বলে আমার বিশ্বাস।”
বিগত তিন মাসে বেশ কিছু কর্মসূচি আলাদা ব্যাণারে আয়োজন করেছে উদীচীর দুই কমিটির লোকজন। এতে উদীচীর বিভক্তি সংস্কৃতি অঙ্গনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি বগুড়ায় উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। দুই কমিটিই আলাদা আয়োজনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
আরও পড়ুন
অধ্যাপক বদিউরের সংবাদ সম্মেলন, উদীচীর অপর অংশ বলল, সম্পৃক্ততা নেই
কমিটি নিয়ে বিভক্তি, উদীচীর সভাপতি বদিউর, সাধারণ সম্পাদক কে?