Published : 21 Sep 2022, 12:28 AM
ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরের গোলাম নবী নামের যে নির্মাণ শ্রমিক রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে প্রেক্ষাগৃহটি একটু একটু করে গড়ে তোলায় শ্রম দিয়েছেন, তিনি আজ ভীষণ খুশি। কারণ ৩ দশক পর আবারও খুলছে এই রাজ্যের সিনেমা হলের দরজা।
জম্মু ও কাশ্মিরের লেফটেন্যান্ট গর্ভনর মনোজ সিনহা রোববার রাজধানী শ্রীনগরে দুটি মাল্টিপ্লেক্স উদ্বোধন করেছেন। মঙ্গলবার থেকেই দুটি হলের একটিতে সিনেমা দেখানো শুরু হল।
শ্রীনগরের মাল্টিপ্লেক্স দুটির একটি ‘আইনক্স কমপ্লেক্স’র নির্মাণ কাজে যুক্ত ছিলেন শ্রমিক গোলাম নবী। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি জানান, চার বছর সময় লেগেছে মাল্টিপ্লেক্সটি বানাতে।
তিন দশক পর নিজের শহরে বসে সিনেমা দেখা যাবে, ভাবতেই দারুণ উত্তেজিত নবী। বললেন, “আমি আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সিনেমা দেখতে আসব।”
প্রথম দিন দেখান হবে বলিউড তারকা আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’। এই সিনেমার কিছু অংশের শুটিং ‘ভূ স্বর্গ’ কাশ্মিরেই হয়েছে। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর এই মাল্টিপ্লেক্সের সাইফ-হৃত্বিকের বিক্রম বেদার প্রিমিয়ার শো হবে।
এছাড়া শ্রীনগরের শিববোয়া এলাকায় উদ্বোধন হওয়া দ্বিতীয় মাল্টিপ্লেক্সেটি খুলে দেওয়া হবে আগামী সপ্তাহে।
আর শিগগিরি কাশ্মিরের ডোডা, রাজৌরি, পুঞ্চ, কিশতওয়ার, অনন্তনাগ এলাকাতেও এমন মাল্টিপ্লেক্স চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
আশির দশকের শেষ নাগাদ জম্মু ও কাশ্মিরে চালু ছিল ১২টি সিনেমা হল। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলে যায়।
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিতে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেওয়ায় একে একে বন্ধ হয়ে যায় হলগুলো। এর পর অনেকসময় হল খোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দৌরত্ম্যে সেটি আর হয়ে ওঠেনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানাচ্ছে, জম্মু ও কাশ্মীরের মাটিতে যার হাত ধরে সংস্কৃতির এই মাধ্যমটির পুনর্জাগরণ হতে চলেছে তার নাম বিজয় ধর। মাল্টিপ্লেক্স প্রকল্পটির প্রধান ব্যবসায়ী বিজয় ধরের জমিতেই ‘আইনক্স কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়। কাশ্মিরে ‘ব্রডওয়ে’ নামের সবচেয়ে পুরাতন সিনেমা হলটির মালিকানাও ছিল বিজয় ধরের পরিবারের।
তিনি জানান, এই শহরে সিনেমা হল ফিরিয়ে আনা তার ‘স্বপ্ন’ ছিল, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ নিতে দেখায় পরম স্বস্তিতে আছেন তিনি।
“আমার লক্ষ্য হলো মানুষের জীবনে বিনোদন ফিরিয়ে আনা। এই উদ্যোগটি মুলত কাশ্মিরের তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করে করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি আমার মনের মতো একটি কাজ।”
ইতোমধ্যে পরবর্তী হলগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন বিজয় ধর।
‘সিনেমা আমার রক্তে মিশে আছে। আমার মনে আছে আমাদের পারিবারিক হল ‘ব্রডওয়েতে’ শেষ চলেছে নায়ক সানি দেওলের ‘এতিম’ সিনেমাটি। যখন পারিপার্শ্বিক কারণে হলটি বন্ধ করে দিতে হয়, কর্মচারীদের মধ্যে হাহাকার নেমে আসে। তারা আমাকে এসে বলে, আমরাই তো এতিম হয়ে পড়লাম।“
বিজয় জানান, মঙ্গলবার সিনেমা দেখানোর পর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে হলের ৫২০ জন দর্শক ধারণ ক্ষমতার তিনটি বড় পর্দার মধ্যে দুটিতে সিনেমা দেখান হবে এবং পরবর্তীতেই তিনটি পর্দাই চলবে পুরোদমে।
তাদের পরিকল্পনা হল, দিনে তিনটি শো চলবে। সকাল ৯টা, দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টায়। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে পরে শো আরও বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মুক্তির পর থেকেই ‘লাল সিং চাড্ডা’ নিয়ে আমির খান যখন দেশটির রাজ্যে রাজ্যে তোপের মুখে পড়েছেন, তখন সেই বাস্তবতায় এই সিনেমাটি প্রথম দেখানোর জন্য বেছে নেওয়ার কারণ কী- জানতে চাইলে বিজয় বলেন, আমির তার খুব ভালো বন্ধু।
“আমাদের প্রত্যাশা ছিল এই হলে ‘লাল সিং চাড্ডা’র প্রিমিয়ারের ব্যবস্থা করব, কিন্তু সেটি করে উঠতে পারিনি। সিনেমাটির প্রতি আমার ভালোবাসার আরেকটি কারণ এর কিছু অংশ শুটিং হয় আমাদের পরিবার পরিচালিত একটি স্কুলে।”
আইনক্সের প্রধান নির্বাহী অলোক ট্যান্ডনও জানান, সিনেমা হল চালু করতে পেরে এই কাজে জড়িতরা সবাই ব্যাপক আনন্দিত।
“আমরা ৩২ বছর পর কাশ্মিরের মানুষের কাছে বিনোদন ফিরিতে আনতে পারছি,” বলেন অলোক।
অলোক জানান, সিনেমার টিকেট আপাতত কাউন্টারে এসেই কাটতে হবে। শিগগিরই তারা অনলাইনে টিকেট কাটার ব্যবস্থা চালু করবেন।
জন নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। মাল্টিকমপ্লেক্সের বাইরে একটি ভ্রাম্যমাণ পুলিশ বাঙ্কারও রাখা হয়েছে।