Published : 15 Jun 2025, 12:28 PM
‘কার্বোহাইড্রেইটস’ বা ‘কার্বস’ বা শর্করা দেহে ভালো পরিমাণেই প্রয়োজন হয়। শরীর এই পুষ্টি উপাদান শক্তিতে রূপান্তরিত করে মস্তিষ্ক ও দেহের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে।
ওজন কমাতে শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমানো কার্যকর পদ্ধতি। তবে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
কার্ব নিয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া আছে
হেল্থডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি ভিত্তিক পুষ্টিবিদ লিন্ডসে ডিসোটো বলেন, “সার্বিক ক্যালোরির ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ আসা উচিত কার্ব বা শর্করা থেকে। বাকিটুকুর মধ্যে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে আর ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফ্যাট বা চর্বি থেকে আসতে হবে।”
কার্বোহাইড্রেইটস প্রতি গ্রামে চার ক্যালরি প্রদান করে। মানে কেউ যদি দৈনিক ২ হাজার ক্যালরি গ্রহণ করে তবে প্রতিদিন তার কার্বস বা শর্করা গ্রহণের পরিমাণ হবে ২২৫ থেকে ৩২৫ গ্রাম।
“তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কারও জন্যই শর্করা গ্রহণের মাত্রা নির্দিষ্ট করা নেই। এই উপাদানের গ্রহণের পরিমাণ নির্ভর করবে একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত পছন্দ, দৈনিক কাজের মাত্রার ওপর”- বলেন লিন্ডসে।
কার্ব গ্রহণের মাত্রা কমালে কি ওজন কমে?
‘লো কার্ব ডায়েট’ থেকে সাধারণত প্রতিদিন ১৫০ গ্রাম কম শর্করা গ্রহণ করা যায়। এই খাদ্যাভ্যাস পরিতৃপ্তি অনুভূতি দেয়, খাওয়া কমায়, ইন্সুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়- যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
‘ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স’ বা প্রতিরোধী অবস্থা তখনই ঘটে যখন এই হরমোন শরীরে কার্যকর ভাবে শর্করা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সাড়া দিতে পারে না। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়ে, যা থেকে দেহে জমে চর্বি।
ইন্সুলিন হরমোন রক্তের শর্করার মাত্রা স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করে।
‘লো কাব ডায়েট’ প্রথম অবস্থায় দ্রুত ওজন কমাতে পারে। তবে এই খাদ্যাভ্যাস প্রথমেই চর্বি কমায় না, বরং কমায়ে দেহের পানির পরিমাণ। ফলে ওজন দ্রুত কমে বলে মনে হয়।
দেহ শর্করা জমা রাখে গ্লাইকোজেন হিসেবে। এটাও এক ধরনের চিনি, যা দেহে পানি ধরে রাখে।
যখন সব গ্লাইকোজেন খরচ হয়ে যায় তখন জমে থাকা পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।
লিন্ডসে বলেন, “গবেষণাতেও দেখা গেছে, ‘লো ফ্যাট ডায়েট’য়ের চাইতে ‘লো কার্ব ডায়েট’ দ্রুত ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। তবে এই খাদ্যাভ্যাস পালন করতে চাইলে সার্বিকভাবে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাপের দিকে নজর রাখতে হবে।”
কার্বস বা শর্করা কমানো খাদ্যাভ্যাস কারও কারও ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। অনেকের আবার সমস্যা হয় এই অভ্যাসে থাকতে।
আবার শর্করা ধর্মী খাবার অনেক কম গ্রহণ করাও ক্ষতিকর। কারণ এর ফলে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও পুষ্টি উপাদান যেমন- ক্যালসিয়াম, আঁশ এবং কিছু বি ভিটামিনের ঘাটতি হতে পারে।
তাই ওজন কমাতে কেউ ‘লো কার্ব ডায়েট’ শুরু করতে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেতে হবে।
সঠিক কার্বস বেছে নেওয়ার পন্থা
পরিমাণের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হল কোন ধরনের কার্বস বা শর্করা গ্রহণ করা হচ্ছে।
যেমন- চিপস, চিনিযুক্ত খাবার এবং সাদা চাল, ময়দা বা আটা ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে, কারণ এগুলো সরল শর্করা।
অন্যদিকে জটিল শর্করার মধ্যে আছে- পূর্ণ শষ্য, ফল এবং সবজি। এগুলো ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।
কারণ জটিল শর্করা যুক্ত খাবারে উচ্চ মাত্রায় আঁশ থাকে। ফলে হজম ধীর হয়, যে কারণে পেটভরা-ভাব অনুভূত হয় অনেকক্ষণ ধরে।
স্বাস্থ্যকর শর্করার উৎসের মধ্যে আছে- মটর, শুঁটি, ফল, পূর্ণ শষ্য যেমন- সম্পূর্ণ গম থেকে তৈরি পাস্তা, কিওনা, লাল বা বাদামি চাল, স্টার্চি সবজি যেমন- মিষ্টি আলু এবং ভুট্টা।
সরল শর্করা যুক্ত খাবারের মধ্যে আছে- নানান ধরনের মিষ্টি, ক্যান্ডি, চিনি, কেক, কোমল পানীয়, সাদা পাস্তা ও রুটি, চিপস, বিস্কুট, পেস্ট্রি ইত্যাদি।
শর্করা কমানোর পন্থা
খাদ্যাভ্যাসে কার্বস বা শর্করা কমাতে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
• শুরু করতে হবে সরল শর্করাধর্মী খাবার বাদ দিয়ে। যেমন- চকলেট, ক্যান্ডি, কেক, মিষ্টি। এগুলোতে পুষ্টি উপাদানও কম।
• সাদা ভাতের মতো উচ্চ শর্করা যুক্ত খাবারের পরিবর্তে বেছে নিতে হবে বাদামি চালের ভাত বা লাল আটার রুটি।
• মিষ্টি কোমল পানীয় বাদ দিয়ে ফলের রস গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে চিনিযুক্ত ফলের রস পান করলে হবে না। এছাড়া চা, কফিও পান করতে হবে চিনি ছাড়া।
• নাস্তা হিসেবে কম শর্করা যুক্ত খাবার বেছে নিতে হবে। যেমন- বাদাম।
• বাইরে খেতে গেলে, সবজির পরিমাণ দ্বিগুন রাখতে হবে। বাকি অর্ধেক থাকতে পারে আলু, পাস্তা কিংবা ভাত।
• সাদা ময়দার পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে কাঠবাদামের ময়দা।
• প্রোটিন গ্রহণে গুরুত্ব দিতে হবে। মুরগির মাংস, ডিম, সামুদ্রিক খাবার বেছে নিতে হবে।
আরও পড়ুন
যে কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার