Published : 19 Oct 2023, 12:49 PM
দেহের সার্বিক পুষ্টি সাধারণত খাবারের মাধ্যমেই পূরণ হয়। তবে ভিটামিন ও খনিজের অভাব দেখা দিলে ‘সাপ্লিমেন্টস’ বা সম্পূরকের প্রয়োজন পড়ে।
তবে এক্ষেত্রেও দরকার সতর্কতা।
কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস’য়ে অবস্থিত ‘টাফ্টস ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়- খাবার থেকে পাওয়া পুষ্টি উপাদান গ্রহণের সঙ্গে দীর্ঘায়ুর সম্পর্ক থাকলেও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টস’য়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা এক না।
প্রায় ২৭ হাজারের ওপর প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিকদের ওপর করা এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় বলা হয়- প্রতিদিন ‘সাপ্লিমেন্টেস’ গ্রহণের পরিবর্তে পূর্ণ শষ্য, ফল ও সবজি থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণই শ্রেয় হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ২০১৯ সালের এই গবেষণার প্রধান ‘টাফ্টস ইউনিভার্সিটি’র ক্যান্সার মহামারী বিশেষজ্ঞ ড. ফ্যাং ঝ্যাং বলেন, “আমাদের গবেষণার ফলাফল এই সিদ্ধান্ত দেয় যে- দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে সাপ্লিমেন্টস ভূমিকা রাখলেও খাবার থেকে পাওয়া পুষ্টি উপাদানের মতো উপকারী নয়।”
যেমন- খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে এবং ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করতে পারলে শারীরিকভাবে অকাল মৃত্যু ঝুঁকি কমে, তবে সাপ্লিমেন্টস গ্রহণে এই ফল পাওয়া যায় না।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে সুষম খাদ্যাভ্যাস থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন কে, এ এবং জিংক গ্রহণ করতে পারলে হৃদ-সংক্রান্ত রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে। অন্যদিকে সাপ্লিমেন্টেস’য়ের মাধ্যমে গ্রহণ করলে একই প্রভাব পড়ে না।
তবে এটাও ঠিক বিভিন্ন যুক্তিযুক্ত কারণে সাপ্লিমেন্টস গ্রহণ করা লাগতে পারে। যেমন- প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ থেকে রক্ষা পেতে জিঙ্ক, কপার ও বি ভিটামিন গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। ‘অস্টেওপোরোসিস’ বা হাড় ভঙ্গুর রোগের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম গ্রহণের দরকার পড়ে।
আবার কেউ যদি শুধু উদ্ভিজ্জ বা ‘ভেগান’ খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হন তার উপকার মিলবে বি-টুয়েল্ভ সাপ্লিমেন্টস গ্রহণের মাধ্যমে।
আর সব ক্ষেত্রে চিকিৎসক পরামর্শ দিলে তবেই গ্রহণ করতে হবে।
সাপ্লিমেন্টেস ও ক্যান্সার
এই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে সাপ্লিমেন্টেস’য়ের মাধ্যমে বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম (দৈনিক ১ হাজার মিলিগ্রামস) গ্রহণ করার ফলে ক্যান্সারে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে। তবে খাবার থেকে এই পারিমাণ গ্রহণে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না।
আবার ভিটামিন ডি’র অভাব না থাকলেও এই ভিটামিন সাপ্লিমেন্টস’য়ের মাধ্যমে গ্রহণ করলেও ক্যান্সারে মৃত্যু হতে পারে।
ড. ঝ্যাং বলেন, “কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান গ্রহণে উপকারের চাইতে অপকার বেশি, সেই সাথে নির্দিষ্ট কোনো ক্যান্সারও হতে পারে। তাই সাপ্লিমেন্টস গ্রহণের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।”
‘সাপ্লিমেন্টস’ সংগ্রহের বিবেচ্য বিষয়
ওষুধের দোকান থেকে যে কোনো ধরনের ভিটামিন বা খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্টস বা ট্যাবলেট-ক্যাপ্সুল কেনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় এই গবেষণায়।
চায়না থেকে প্রস্তুতকৃত সাপ্লিমেন্টস এড়ানোর উচিত। কারণ এদের তৈরি পণ্যে উচ্চমাত্রায় মার্কারি ও অ্যালুমিনিয়াম থাকতে পারে যা বিষাক্ত।
মূল্যছাড় দেওয়া ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টস কেনা যাবে না। সস্তা ওষুধের মান কখনও ঠিক থাকে না।
‘কাভা-কাভা’ আছে এরকম সাপ্লিমেন্টস গ্রহণে বিরত থাকতে হবে। কারণ এটা যকৃতের ক্ষতি করে।
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় ‘বিটার অরেঞ্জ’।
প্রতিষ্ঠিত ও নামি প্রতিষ্ঠানের সাপ্লিমেন্টস কিনতে হবে। মার্কারি, ক্যাডমিয়াম, লেড, আর্সেনিক ও অ্যালুমিনিয়াম থাকে কিছু সাপ্লিমেন্টস’য়ে। এসবের দিকে নজর দিতে হবে।
ওষুধ, ভিটামিন যেটাই হোক- সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন