Published : 13 Jun 2025, 11:15 AM
সঙ্গীর সঙ্গে শুধু আবেগ নয় বরং মানসিক সমস্যাও ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে।
সেখানে বলা হয়েছে যেসব দম্পতির একজন উদ্বেগ বা বিষণ্ণতায় ভোগেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরজনও একই ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
এটি কি কেবল সহমর্মিতার ফল, না-কি এর পেছনে রয়েছে শারীরবৃত্তীয় কোনো যোগসূত্র?
কথায় বলে- একজন বিষণ্ণ মানুষের আশপাশে থাকলে মন খারাপ হয়ে যায়। তবে এটি কি শুধু কথার কথা, না-কি বাস্তবেও ঘটে?
নতুন দম্পতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘এক্সপ্লোরাটরি রিসার্চ অ্যান্ড হাইপোথিসিস ইন মেডিসিন’ সাময়িকীতে।
সেখানে অংশ নিয়েছেন ২৬৮ জন দম্পতি, যাদের বিয়ের বয়স গড়িয়েছে ছয় মাস। আর একসঙ্গে বসবাস করছিলেন।
তাদের মধ্যে একজন মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন, যাকে বলা হয়েছে ‘কন্ট্রোল পার্টনার’; অন্যজন উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং অনিদ্রায় আক্রান্ত ছিলেন।
গবেষকরা এই দম্পতিদের মুখের জীবাণু, লালায় ‘স্ট্রেস হরমোন’ কর্টিসলের মাত্রা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রশ্নমালার মাধ্যমে মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন করেছেন।
গবেষণাটি চালানো হয়েছে প্রথম দিন এবং ছয় মাস পর অর্থাৎ ১৮০ তম দিনে।
কী দেখা গেছে গবেষণায়?
গবেষণার সবচেয়ে চমকপ্রদ ফলাফল হল- যেসব ‘কন্ট্রোল পার্টনার’ শুরুর দিকে মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন, ছয় মাস পর তাদের মধ্যেও বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং ঘুমের সমস্যা দেখা গেছে।
বিশেষভাবে দেখা গেছে, এই পরিবর্তন নারীদের মধ্যেই বেশি। মানে, নারীরা পুরুষ সঙ্গীর মানসিক সমস্যার প্রভাব বেশি অনুভব করছেন।
শুধু মানসিক সমস্যা নয়, শারীরিকভাবেও পরিবর্তন দেখা গেছে।
অনিদ্রায় আক্রান্ত অংশীদারের কর্টিসল (মানসিক চাপের হরমোন) মাত্রা যেমন বেশি ছিল, তেমনি কিছুদিন পর সুস্থ সঙ্গীর কর্টিসলের মাত্রাও বেড়ে গেছে। যা ইঙ্গিত করে তারাও মানসিক চাপ অনুভব করছেন।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় এই দম্পতিদের মুখের জীবাণুর গঠন একসময় একে অপরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। অর্থাৎ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুখগহ্বরের ব্যাক্টেরিয়া একে অপরের মতো হয়ে যাচ্ছে।
গবেষকরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক অবস্থার সম্পর্ক থাকতে পারে।
তবে, মানসিক সমস্যা কি সত্যিই জীবাণুর মাধ্যমে ছড়ায়?
এই প্রশ্নের উত্তর জটিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিউ ইয়র্ক প্রেসবাইটেরিয়ান’ হাসপাতালের ‘উইল কর্নেল স্কুল অব মেডিসিন’য়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গেইল সাল্টজ ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলছেন, “এটা সম্ভব যে মুখের জীবাণুর পরিবর্তন মেজাজের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “তবে এটি নিশ্চিত যে, যদি একজন বিষণ্ণ বা উদ্বিগ্ন মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ সময় থাকেন, তাহলে সেটি নিজের মেজাজ ও মানসিক অবস্থাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।”
এই বক্তব্যকে সমর্থন করছেন ‘নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি’র ‘ল্যাংগোন হেলথ’-এর সহকারী অধ্যাপক থিয়া গালাঘার।
তিনি বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই জানি, মানসিক সমস্যা ‘সংক্রামক’ হতে পারে। চারপাশের আবেগ আপনার নিজের আবেগেও প্রভাব ফেলতে পারে।”
কেন এমন হয়?
একজন বিষণ্ণ মানুষের সঙ্গীর ওপর প্রভাব ফেলার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে।
সহানুভূতির ভার: আপনি যত বেশি ভালোবাসেন, তত বেশি তার কষ্ট আপনাকেও কষ্ট দেয়।
আচরণগত প্রভাব: বিষণ্ণ মানুষ কম কথা বলে, উদাসীন হয়, যা অন্য ব্যক্তির সামাজিক ও আবেগীয় বন্ধনে প্রভাব ফেলে।
রুটিন ও পরিবেশের পরিবর্তন: একজন সঙ্গীর মানসিক অবস্থা দাম্পত্য জীবনের দৈনন্দিন রুটিনেও পরিবর্তন আনতে পারে, যা প্রভাব ফেলে অপরজনের ঘুম, খাওয়া-দাওয়া এমনকি কর্মক্ষমতার ওপর।
নিজের মন সামলিয়ে সঙ্গীকে ভরসা দেওয়ার পন্থা
ডা. সাল্টজ পরামর্শ দেন, “সহানুভূতির সঙ্গে সঙ্গীকে ভরসা দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত আবেগে জড়ানো যাবে না। সঙ্গীকে সমর্থন করতে তাকে পরিত্যাগ না করেই সহানুভূতি প্রকাশ করতে হবে।”
এছাড়া নিজের মানসিক চাপের দিকেও নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সীমারেখা তৈরি করা জরুরি। যদি দেখা যায় সঙ্গীর মানসিক অবস্থা নিজের ওপরেও প্রভাব বিস্তার করছে, তবে জানাতে হবে তার জন্য কতটুকু করা সম্ভব।
ডা. গালাঘার পরামর্শ দেন, “নিজের মানসিক স্বাস্থ্যেরও যত্ন নিতে হবে। অনেকটা নিজেকেই ‘থেরাপি’ দেওয়ার মতো। তাই সঙ্গীকে বলা যেতে পারে- ‘দেখ আমি নিজেকে সামলাচ্ছি, তুমি তো এরকম করতে পার’।”
এছাড়াও মানসিকভাবে উন্নত থাকতে অন্যান্য কৌশলগুলো অনুসরণ করতে হবে। যেমন- নিয়মিত ব্যায়াম করা, নিজেকে ভালো বোধ দেওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং বন্ধু আত্মিয়দের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করা।
এসব অভ্যাস যেমন নিজেকে ভালো রাখতে সাহায্য করে তেমনি সঙ্গীর মাঝেও এসব করতে উৎসাহ বোধ জাগিয়ে তোলা সম্ভব হতে পারে। জীবনযাত্রার পরিবর্তনে মন-মেজাজও উন্নত হয়।
যখন দেখা যাবে একজন ভালো থাকার চেষ্টা করছে, তখন সেটাও সঙ্গীর মাঝে ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন
যেসব গোপন বিষয় সঙ্গীকে জানানো ঠিক না
সম্পর্ক গভীর করতে সঙ্গীকে যে প্রশ্নগুলো করা ভালো