Published : 08 May 2025, 04:09 PM
কোরবানির ঈদে সংবাদপত্র কর্মীদের অন্তত চার দিন ছুটি হওয়া দরকার বলে মনে করেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আর পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের কর্মীদের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘গণমাধ্যম সংস্কার: সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “ঈদের ছুটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু আমরা এখন ডিজিটাল যুগে বাস করছি, সেজন্য অনলাইনটা চালাতেই হয়। এটার কোনো বিকল্প নাই। এটার বিকল্প হচ্ছে অনলাইনে যারা কাজ করছে, তাদের আর্থিকভাবে পুষিয়ে দিতে হবে। এটা বন্ধ করা যেহেতু সম্ভব না।
“আমার হাতে তো ক্ষমতা নাই, কিন্তু আমার যদি ক্ষমতা থাকত, আগামী ঈদে ১০ দিন ছুটি থাকবে সরকারি। আমি অন্ততপক্ষে সাংবাদিকদের জন্য ৪ দিন করে দিতাম। আর অনলাইনের ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে পুষিয়ে দেওয়া উচিত।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনারা এই সরকারের কাছে দাবি করছেন কী কী সংস্কার করতে হবে। আগামী রাজনৈতিক সরকার এসে যদি বলে, ‘এই সংস্কার আমরা মানি না, আমরা আমাদের মতো করে রাষ্ট্র চালাব’। সেক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন, সেটা নিয়ে মনে হয় একটু আগাম পরিকল্পনা করে রাখা দরকার।”
দেশের মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর একটি অংশের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ এবং সংবাদপত্রগুলোর মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সমালোচনা করেন আমার দেশ সম্পাদক।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “এই দুটি সংগঠন হল এলিটদের সংগঠন। আর আমরা হলাম অচ্ছুত। আমাদেরকে ইসলামপন্থি পত্রিকা হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে ইসলামপন্থি হওয়া তো অপরাধ। অন্তত মিডিয়াতে তো বড় অপরাধ।
“এবং সারা বাংলাদেশের মিডিয়া ইসলাম বিদ্বেষীদের দখলে। বিজ্ঞাপন যারা দেয়, সেই সংগঠনগুলো প্রধানত ইসলামবিদ্বেষী।”
জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সদস্য সচিব মিয়া হোসেন।
তিনি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কাছে ১৬ দফা দাবি পেশ করেন, যার মধ্যে রয়েছে-
>> গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা।
>> তথ্য জানার অধিকার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে সংবিধানের মৌলিক অধিকার হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা।
>> সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
>> সব গণমাধ্যমকে একটি বেতন কাঠামোতে অর্ন্তভুক্ত করা।
>> সব গণমাধ্যমকে মিডিয়া তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা।
>>সাংবাদিকদের এনরোলমেন্ট নিশ্চিত করে একটি প্রেস আইডি নম্বর প্রদান করা।
>> স্থায়ীভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিশ্চিত করা।
>> চলচ্চিত্রের মতো জাতীয় গণমাধ্যম ও সাংবাদিক পুরস্কার প্রদান করা।
>> রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পরিচালনা বোর্ড গঠন করা।
>> গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাধীন প্রেস কমিশন গঠন করা।
>> স্যাটেলাইট টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন গণমাধ্যম ডিক্লারেশনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা।
>> পেশাগত মান উন্নয়নে সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
>> সরকারিভাবে সাংবাদিকদের জন্য পেনশন ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।
>> সব সাংবাদিকের আবাসন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
>> বিদেশি গণমাধ্যমকে বিশেষভাবে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য নীতিমালা করা।
>> সোশাল মিডিয়াকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা।
ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার ও সাংবাদিক আসিফ শওকত কল্লোল।