Published : 24 Dec 2013, 01:32 PM
বর্তমানে বিএনপি যে আন্দোলন চালাচ্ছে, এই আন্দোলনের গন্তব্য কী? এর শেষ কোথায়– এ প্রশ্ন এখন নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, চলমান আন্দোলন হঠকারী। দেশবিরোধী। জনস্বার্থবিরোধী। দেশের কল্যাণে এ ধরনের আন্দোলন কোনো ভূমিকা রাখবে না। বরং দেশটার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কী হল আন্দোলন করে? সরকার তো টলেনি। ঠিকমতোই আছে। দিন দিন সরকার শক্তিপ্রয়োগ বাড়াচ্ছে। পুলিশ পাহারায় যান চলাচলও শুরু হয়েছে। দিনের বেলায় রাজধানীর অনেক রাস্তা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দেশে অবরোধ চলছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে নির্বাচনও হচ্ছে। মাঝখান দিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হল। ক্ষতি হল রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের। দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হল।
এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ভয়ানক আস্থার সংকটে আছে। দশম জাতীয় নির্বাচনটা আরেকটা '১৫ ফেব্রুয়ারি' নির্বাচনের তকমা পেতে যাচ্ছে, যা আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের জন্য একটা কলঙ্কের দাগ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তবে একতরফা নির্বাচন বন্ধের জন্য বিরোধী দল যে আন্দোলন করছে বা আন্দোলনের নামে যা করছে, সেটাও আরেক কলঙ্ক। আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে চলছে, নাশকতা, সন্ত্রাসী তৎপরতা। এই আন্দোলন এখন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসায় রূপ নিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটছে।
গত কয়েক সপ্তাহে শিবগঞ্জ উপজেলার টিকরি গ্রামের ২৫ টি বাড়ি ও ৩০-৩৫ টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ দল আওয়ামী লীগ করে বা তাদের ভোট দেয়, এই অপরাধে বেছে বেছে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের এক নেতা পারিবারিক কবরে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাননি, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নীলফামারীতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। সেখানে খুন হয়েছেন পাঁচজন।
বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের ওপরও চলছে হামলা। তাদের ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
গত শনিবার শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ছাত্র মৈত্রীর সভাপতিকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুঁড়ে মারা হয়। তিনিসহ মোট তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। মৌলবাদী চক্র এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ রকম হত্যা-আক্রমণ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে। অনেক জায়গায় পাল্টা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরাও। টাঙ্গাইল, লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। ইতোমধ্যে গণপরিবহণে বোমা, গান পাউডার ও আগুন-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মারা গেছেন প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ঝলসানো পোড়া শরীর নিয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছেন অসংখ্য মানুষ।
গণ-অংশগ্রহণ ছাড়া গণআন্দোলন হয় না, এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটির প্রতি নেতৃত্বকে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে আক্রোশ চরিতার্থ করার জন্য যেন হামলা চালানো না হয়, তা নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির 'ঘোষণা'য় পরিচালিত আন্দোলনে কোথাও কোনো নিয়মতান্ত্রিকতা নেই। আন্দোলনের নামে চলছে জুলুম, সন্ত্রাস আর আক্রোশ।
তিব্বতের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সেখানে চীন সরকারের উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে নিজেদের গায়ে আগুন দিয়ে, আর আমাদের বিএনপির নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবিরের সহায়তায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের গায়ে জোর করে আগুন দিয়ে! তাদের বোমা মেরে হত্যা করে!
এ বিষয়ে এখন আর কোনো সংশয় নেই যে, বিএনপির আন্দোলন শুধু তত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে নেই, তাদের প্রধান লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা। তা না হলে বিএনপি সারাদেশে জামায়াত-শিবির পরিচালিত সন্ত্রাসী ও দেশবিরোধী শক্তির অপকর্মের নিন্দা করত। মানুষ হত্যাকারী সন্ত্রাসী চক্রের দোসর না হয়ে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করত। যে দলের নেতারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত, যে দল নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়েছে, সেই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির রাজনীতি, নর্তন-দুর্দন এখন রুচির সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টি এখন রীতিমতো নোংরা এবং অশ্লীলতায় পর্যবসিত হয়েছে।
একদলীয় নির্বাচন অবশ্যই খারাপ। কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নামে জামায়াত-বিএনপি যা করছে তা কি সমর্থনযোগ্য? সরকারি দল আওয়ামী লীগ যা করেছে, যা করছে তার অনেক কিছুই মেনে নেওয়ার মতো নয়। কিন্তু তাই বলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে সন্ত্রাসের ভাষায়? এটা কি কোনো নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের পথ হতে পারে? অনেকেই বলেন, বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হয় না বলেই তারা এমন নৈরাজ্যমুখী। যারা এমন কথা বলেন তাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের কোনো অভিজ্ঞতা আছে বলে মনে হয় না। তারা কখনও আন্দোলন করেননি, হয়তো দেখেনওনি। আন্দোলন যদি সত্যিকারেই জনসমর্থনপুষ্ট হয়, তাহলে সেই আন্দোলন দমন করতে পারে– এমন সাধ্য কার আছে?
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কথা এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে। তখন কি নেতাদের জামাই-আদরে রাখা হয়েছিল? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দমন করতে অস্ত্র হাতে দিয়ে সন্ত্রাসীদের পুলিশ প্রটেকশনে পাঠানো হয়েছিল। তারপরও কি আন্দোলন স্তিমিত করা গেছে? নব্বইয়ের গণআন্দোলনের একজন কর্মী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে মনে পড়ছে ৩ ডিসেম্বরের কথা। সেদিন ছিল রাজধানীজুড়ে কারফিউ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেনাসদস্য, বিডিআরের সদস্যরা। দেখামাত্র গুলি হবে– এমন একটা ভয়াল পরিস্থিতি।
এমন পরিস্থিতিতেও কারফিউ ও বন্দুকের নল অগ্রাহ্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের হয়। তখন মোবাইল ফোন ছিল না। বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো টিভি চ্যানেল ছিল না। এমনকি সেদিন সংবাদপত্রও বন্ধ ছিল। তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বের হওয়া ছাত্রদের মিছিলের খবর মুখে মুখেই রাষ্ট্র হয়ে যায়। দুপুর ১২টা নাগাদ ঢাকা শহর পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। বন্দুকের নল, কারফিউ অকার্যকর হয়ে যায় জনতার তীব্র লড়াকু অভিব্যক্তির কাছে।
আরেকটি কথা, কোনো রাজনৈতিক দল রাজপথে নেমেছে, আর সরকারপক্ষ তাদের ফুল-চন্দন দিয়ে বরণ করেছে, এমন পরিস্থিতি আমাদের দেশে কবে কে দেখেছে? আন্দোলনের শক্তি যদি দুর্বল হয়, তাহলে নিপীড়ন করে তা থামিয়ে দেওয়া হয়– এটাই ইতিহাস। কাজেই সরকার শক্তি প্রয়োগ করছে, বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার করছে, এই অজুহাত দিয়ে লাভ নেই। এগুলো সব সরকারের আমলে বিরোধী দলের প্রতি করা হয়। বিএনপির গত শাসনামলে বিরোধী দলের অনেক নেতাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতারাও তখন আন্দোলন করেছেন দলীয় অফিসে না গিয়েই।
তুলনায় বর্তমান সময়ে বিএনপি নেতারা অন্তত জান হারানোর ভয়ে ভীত নন। আসলে বিএনপি নেতাদের কারাগারভীতি এবং জনবিচ্ছিন্নতা এখন সর্ববিদিত। বিরোধী দলের এই দুর্বলতা জানে বলেই সরকার এমন বেপরোয়া। শুধু সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, বিরোধী দলের গণআন্দোলন করার ক্ষমতা নেই, এটা কবুল করাই ভালো!
আদালতের রায়ের কারণে জামায়াতে ইসলামী এখন একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল। সেই দলের অনেক বড় বড় নেতা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মামলায় ফাঁসির দণ্ড নিয়ে কারাগারে বন্দী। বর্তমান ব্যবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিএনপি তো দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। জামায়াতের খপ্পরে পরে দলটি কি নিজেদের কলঙ্কের বোঝা এভাবে বাড়িয়েই যাবে?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপি এতদিন প্রকাশ্যে কোনো বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তারা আবার ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কী হবে, তা নিয়েও বিএনপি এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। জনগণের উপর বিএনপির আস্থা আছে বলেও মনে হয় না। দলটি জামায়াতের তোষামোদ করতে করতে নিজেরাই জনবিচ্ছিন্ন একটি সন্ত্রাসী দলের দিকে ভিড়ে যাচ্ছে। তা না হলে অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে কেন?
চলমান আন্দোলনের নামে বিএনপি এখন যে বিচ্ছিন্ন সহিংস হামলার রাজনীতি করে যাচ্ছে, তা জনগণের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছে। হরতাল অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নিরীহ সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি তো সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষেই শোভা পায়। আর যদি এখন তারা অজ্ঞাত স্থান থেকে এভাবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে রাজনীতি করতে চায়, তাহলে বিএনপিকে আর রাজনৈতিক দল বলা যাবে না। যদি তারা সত্যিই সেদিকে চলে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে বিএনপির রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। সেখান থেকে একটি সন্ত্রাসী দলে রূপ নিয়ে তারা জনবিচ্ছিন্ন সহিংস আন্দোলন করছে। যা মোটেও জনগণের নামে রাজনীতি করা বোঝায় না। যা সরাসরি সন্ত্রাসী গোপন বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গেই মানানসই।
যারা এখন বিএনপি-জামাতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন সমর্থন করছেন তাদের কাছে কাছে সবিনয়ে প্রশ্ন– বিএনপি-জামায়াত গত পাঁচ বছরে বিরোধী দল হিসেবে সাধারণ মানুষ ও দেশের স্বার্থে একদিনের জন্যও কি আন্দোলন করেছে? আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের অনেক কর্মকাণ্ড দেশের মানুষকে হতাশ করেছে, দেশের সাধারণ মানুষ বিরোধী দলের কাছে আশা করেছে তাদের পাশে এ দলকে পাবে; অথচ দলটি গত পাঁচ বছরের প্রথম তিন বছর আন্দোলন করেছে শুধু খালেদা জিয়ার পরিবারের স্বার্থজনিত ইস্যুতে। আর গত দুই বছর আন্দোলন করছে তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য, যা মূলত তাদের ক্ষমতায় যাবার আন্দোলন। এমন বিরোধী দলের 'নিজ স্বার্থের' জন্য সাধারণ মানুষ কেন বলির পাঁঠা হবে?
প্রশ্ন আরও আছে। আওয়ামী লীগ গত পাঁচ বছরে অনেক খারাপ কাজ করেছে, অনেক ভালো কাজ করতে পারেনি। কিন্তু বিএনপি নিকট অতীতে যে দু'বার ক্ষমতায় ছিল, তখন দেশ ও জনগণের স্বার্থে কী কী কাজ করেছিল বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল? তেমন মাত্র পাঁচটি ইতিবাচক উদ্যোগের কথা কি গর্ব করে বলা যাবে?
বিএনপি নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের পার্থক্য স্পষ্ট করতে পারেনি। বিএনপির পতাকাতলে মানুষ কেন সমবেত হবে? তাদের আহবানে কেন সাড়া দেবে? কেবল আওয়ামী লীগ খারাপ বলে? আপনারা কোথায়, কীভাবে ভালো? 'দেশ বাঁচানো', 'গণতন্ত্র বাঁচানো', 'ভোটের অধিকার বাঁচানো'– এ জাতীয় বায়বীয় কথা না বলে, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী করবে তা কখনও পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে না। রাজাকারদের কী হবে, দেশের উন্নয়নে বিএনপির ভূমিকা কী হবে তাও স্পষ্ট নয়।
আওয়ামী লীগ গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি করেছে, তা বন্ধ করে নতুনভাবে কোনো দুর্নীতি করা হবে না, তেমন ওয়াদার কথা শোনা যায় না। জামায়াত-শিবির প্রশ্নে বিএনপির ভূমিকা কী হবে, তাও বলা হয় না। এই বাস্তবতায় মানুষ বিএনপির ফাঁপা বুলিতে নাচবে কেন?
জামায়াতের অংশগ্রহণে বিএনপির বর্তমান আন্দোলন সন্ত্রাস এবং আক্রোশে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন আক্রোশে পরিণত হলে তার পাল্টাপাল্টি জের চলতে থাকে। আজ কোথাও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হলে, কাল হয়তো বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরও নেমে আসবে পালটা হামলা। কারণ পরিস্থিতি সব সময় একই রকম থাকে না। আজ যেখানে এক দলের আধিপত্য, কাল সেখানে শক্তির ভারসাম্য একেবারে উল্টে যাওয়া বিচিত্র নয়।
রাজনীতিতে নৈরাজ্যের কোনো স্থান নেই। গণতন্ত্রের জন্য এ দেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে। সেখানে ব্যক্তি-হত্যার বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আক্রোশ মেটানোর জন্য হামলা চালানোর অপকৌশল শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়েছে। কারণ ওই পথে আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে অতীতের আন্দোলনের অভিজ্ঞতার আলোকে সুস্থধারার আন্দোলনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে; হত্যা বা আগুন দিয়ে নয়। আন্দোলনকে রাজনীতির প্রথাগত পথ থেকে বিচ্যুত হতে দেওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে দুই পক্ষের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে। কোনো দলের নেতা বা ব্যক্তিকে হত্যা, তাদের ওপর হামলা বা বাসায়-দোকানে আগুন দেওয়ার মতো হিংসাত্মক তৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে তার ফল সবাইকেই ভোগ করতে হবে।
চিররঞ্জন সরকার: কলামিস্ট।