Published : 26 Jun 2025, 06:16 PM
মাদকাসক্তি একটি রোগ। রোগ বলার কারণ এটি মস্তিষ্কের কাঠামো ও কার্যকারিতায় দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ঘটায়, যা ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটায়। এটি সাধারণ ইচ্ছাশক্তির দুর্বলতা নয়, বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্বীকৃত একটি ক্রনিক ব্রেইন ডিজঅর্ডার। অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো, মাদকাসক্তিও নিয়ন্ত্রণযোগ্য তবে পুনরায় আসক্তি ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে।
তাই মাদকাসক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য বলে মনে করা হয় না—কেন মনে করা হয় না, এ প্রশ্নটি চিকিৎসা, সমাজ এবং নৈতিকতার জগতে বহুদিন ধরে বিতর্কের বিষয় হয়ে আছে। একদিকে, এটিকে একটি ‘রোগ’ হিসেবে দেখার প্রবণতা বাড়ছে; অন্যদিকে, বহু মানুষ মনে করেন, মাদকাসক্তি ইচ্ছাশক্তি ও নৈতিক দুর্বলতার ফল। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে মাদকাসক্তি এখন একটি জটিল, দীর্ঘস্থায়ী, মস্তিষ্কভিত্তিক রোগ হিসেবে স্বীকৃত, যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য হলেও সাধারণত সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। অথচ মাদক গ্রহণ সাধারণত কৌতূহল থেকে শুরু হয়।
মাদক গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের ‘ডোপামিন রিওয়ার্ড সার্কিট’ ব্যাহত হয়, যা আনন্দ, তৃপ্তি এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি ধীরে ধীরে একটি অন্যরকম আনন্দ-অনুভব চক্রে আটকে পড়ে এবং চাইলেও মাদক থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারে না। তাই মাদকাসক্তির কারণ কেবল নেশা নয়, মস্তিষ্কের কাঠামোগত ও কার্যকরী পরিবর্তনও দায়ী। এই পরিবর্তন কোনো ওষুধ বা সার্জারির মাধ্যমে সহজে ফেরানো সম্ভব নয়।
তবে এটাও ঠিক, যেভাবে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, ঠিক তেমনি মাদকাসক্তিও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, পারিবারিক সহায়তা ও সামাজিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অনেকেই বছরের পর বছর ধরে পরিপূর্ণ ‘রেমিশন’-এ থাকেন, অর্থাৎ মাদক ছাড়াই জীবন কাটান। কিন্তু সেই ‘মুক্তি’কে ‘নিরাময়’ বলা কঠিন, কারণ কোনো তীব্র মানসিক চাপ, হতাশা বা পরিবেশগত প্ররোচনায় ‘পুনরায় আসক্তি’ ফিরে আসার ঝুঁকি সবসময় থাকে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘নিরাময়যোগ্য’ শব্দটি নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। মাদকাসক্তি এমন এক রোগ, যা চিকিৎসাযোগ্য এবং অনেকক্ষেত্রেই লক্ষণমুক্ত জীবন সম্ভব হলেও, এটি কখনোই শতভাগ গ্যারান্টিযুক্তভাবে সারানো যায় না। এই রোগের চিকিৎসা কেবল ওষুধ বা ডিটক্স নয়, বরং একটি সমন্বিত জীবনব্যবস্থা পরিবর্তন—যার মধ্যে রয়েছে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, সামাজিক সংহতি, কর্মমুখী পুনর্বাসন, এবং আত্মউপলব্ধির চর্চা।
তবে আশার কথা হলো, বহু মানুষই মাদকমুক্ত জীবন ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। তাদের উদাহরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মাদকাসক্তি কোনো শেষ কথা নয়। এটি একটি যুদ্ধ—যার শত্রু শুধুমাত্র নেশাদ্রব্য নয়, বরং অজ্ঞানতা, সমাজের অবহেলা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব।
অতএব, মাদকাসক্তিকে ‘নিরাময়যোগ্য’ না বলে ‘নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য’ রোগ বলা অধিকতর সঠিক বলে মনে করে কলম্বো প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার, যা সংক্ষেপে কলম্বো প্ল্যান নামে পরিচিত।
মানবসম্পদ উন্নয়নে কর্মরত এই কলম্বো প্ল্যান এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে মাদকদ্রব্য নিরোধ, প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করে। কলম্বো প্ল্যানের সনদ ও শিক্ষা প্রশিক্ষণ সিরিজের পাঠ্যক্রম ১-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে মাদকাসক্তি রোগটি নিরাময় যোগ্য নয়, নির্মূল করা যায় না কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সমাজ সাধারণত ভালো চোখে দেখে না। এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে—মাদকাসক্ত ব্যক্তির নানা অপকর্ম, সহিংসতা ও অনৈতিক আচরণের গল্প সমাজে প্রচুর। এমনকি কারও কারও ক্ষেত্রে নিজের মা-বাবাকে খুন করার মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারণে চরম পর্যায়ের আসক্ত ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ থেকে একপ্রকার নির্বাসিত হয়ে পড়ে, অনেকে পড়ে থাকে রাস্তাঘাট বা নর্দমার ধারে—জীবন তাদের আর স্বাভাবিক পথে ফেরে না।
কিন্তু সময় বদলেছে, আর এখন মাদকাসক্তিকে শুধুমাত্র ঘৃণার চোখে দেখলে সমাধান আসবে না। কারণ, আজ মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের সর্বস্তরে। শহর কিংবা গ্রাম—দুই-চার বাড়ি পরপরই দেখা যায় একজন না একজন শিশু, কিশোর, তরুণ কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে এই আসক্তির শিকার। ছোট পরিবারে সন্তান সাধারণত একটি বা দুটি হয়। সেই সন্তানই যদি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তার বাবা-মায়ের অসহায়তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
এই বাস্তবতায় মাদকাসক্তদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো জরুরি। ঘৃণার বদলে প্রয়োজন সহানুভূতি, অবজ্ঞার জায়গায় প্রয়োজন চিকিৎসা ও পুনর্বাসন। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে একজন রোগী হিসেবে বিবেচনা করে, তার সুস্থতা ও ফিরে আসার সুযোগ তৈরি করতে হবে—এটাই এখন সময়ের দাবি।
শুরুতেই বলেছি—মাদকাসক্তি একটি রোগ। তবে এই রোগ অনেক সময় আরও কিছু জটিল রোগকে সঙ্গে নিয়ে আসে। একে বলা হয় সহ-ঘটমান রোগ, ইংরেজিতেকো-অকারিং ডিজ়িজ। মাদকাসক্তির পাশাপাশি স্কিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের মতো মনোরোগ যোগ হয়ে গেলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির অবস্থা হয়ে ওঠে ভয়াবহ জটিল।
এই ধরনের মানসিক ভারসাম্যহীন, হিতাহিত জ্ঞান হারানো একজন মানুষ একটি পরিবারে এককভাবে চরম অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যদি আসক্তি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তাহলে তার সঙ্গে জুড়ে থাকা মানসিক রোগটিও ধীরে ধীরে উপশম হয়। তবে সবসময় এমন হয় না। কখনও কখনও মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণের পরেও ওই মানসিক রোগটি থেকে যায় এবং একসময় তা স্থায়ী রূপ ধারণ করে।
মাদকাসক্তিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় দ্রব্য-ব্যবহারজনিত রোগ, ইংরেজিতে Substance Use Disorder (SUD)। এ রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও বহুস্তরীয় পদ্ধতির। সাধারণত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই রোগের মূল চিকিৎসা করেন। পাশাপাশি একজন মনোবিজ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ সাধারণ চিকিৎসকেরও ভূমিকা থাকে।
তবে প্রায় সবক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুধু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলেই রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে না। কারণ, অনেকেই চিকিৎসার মাঝেও মাদক সেবন বন্ধ করতে পারেন না। ফলে ওষুধ এবং মাদকের যৌথ ব্যবহার তাদের অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে। এই রোগের কার্যকর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় এক ধরনের বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র, যেগুলো নিরাময় কেন্দ্র, রি-হ্যাবিলিটেশন সেন্টার বা সংক্ষেপে রিহ্যাব সেন্টার নামে পরিচিত।
বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে মাত্র চারটি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে ৩২৪টি। উল্লেখযোগ্য যে, এসব কেন্দ্রের অনেকগুলোই পরিচালনা করেন পূর্বে মাদকাসক্ত ছিলেন এমন ব্যক্তিরা, যারা চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়েছেন—তারা পরিচিত রিকভারিং অ্যাডিক্ট হিসেবে।
এসব কেন্দ্র নিয়ে মাঝে মাঝে সংবাদমাধ্যমে অনিয়ম, অবহেলা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। তবু মাদকাসক্ত সন্তান বা স্বজনকে নিয়ে অধিকাংশ পরিবারকেই শেষ পর্যন্ত এসব কেন্দ্রের দ্বারস্থ হতে হয়। অবশ্যই এমন অনেক নিরাময় কেন্দ্রও রয়েছে, যারা আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
দ্রব্য-ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন অবিরাম, দীর্ঘমেয়াদি এবং বিস্তৃত সেবার ব্যবস্থা—যেখানে শুধু ওষুধ নয়, মনোসামাজিক সহায়তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৪ সালে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ড্রাগ রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বে কমপক্ষে ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ সমস্যা সৃষ্টিকারী মাদকসেবী (Problem Drug Users) হিসেবে চিহ্নিত। ২০১২ সালে প্রায় ২ কোটি ২৪ লাখ মানুষ ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করেছে। এই ইনজেকশন ব্যবহারের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীদের ১৩.০১ শতাংশ এইচআইভি (HIV) আক্রান্ত এবং ৫১ শতাংশ হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C) রোগে সংক্রমিত।
বাংলাদেশে গত এক দশক আগের তুলনায় ইনজেকশনের মাধ্যমে এখন মাদক গ্রহণকারীর হার কমেছে বলে অনুমান করা হয়। তবে মাদকাসক্তের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ চিহ্নিত আসক্তদের বাইরে রয়েছে অসংখ্য অচিহ্নিত মাদকাসক্ত।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের বক্তব্য অনুযায়ী, রাস্তাঘাট ও ক্যাম্পাসে যে তরুণদের দেখা যায়, প্রতি চারজনের মধ্যে অন্তত একজন মাদকাসক্ত। সে নিজেও এ বিষয়ে দুধে ধোয়া তুলসীপাতা নয় বলে স্বীকারোক্তি দেয়।
বাংলাদেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি রীতিমতো উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী মাদকাসক্তির বৃদ্ধির হার শতকরা মাত্র ২ শতাংশ, কিন্তু বাংলাদেশে এই হার দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে প্রায় দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১.৩ শতাংশ, কিন্তু মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে ৩.৮ শতাংশ হারে।
আরও ভয়াবহ বিষয় হলো শিশুদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা এবং দেশের বড় বড় শহরের পথশিশুদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তারা সাধারণত আঠাজাতীয় দ্রব্যের উদ্বায়ী অংশ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নেশা করে থাকে, যাকে ‘ড্যান্ডি’ নামে ডাকা হয়। এই ‘ড্যান্ডি’ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করে এবং মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
২০১৯ সালে মানিকগঞ্জের ‘আপন’ (আসক্তি পুনর্বাসন নিবাস) নিরাময় কেন্দ্রে দেখা হয় এক ৯-১০ বছর বয়সী শিশুর সঙ্গে। জানালার কাছে বসে সে উদাসীন চোখে দূরের দিগন্তের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার সরল, মায়াময় মুখে এক অদ্ভুত কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। জানা যায়, ‘আপন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ব্রাদার রোনাল্ড দ্রাহজাল তাকে ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করে এনেছেন। মহৎপ্রাণ এই ব্রাদারের কারণে অসংখ্য আসক্ত পথশিশুকে পুনর্বাসনের সুযোগ পাওয়া গেছে, কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি শিশু রয়ে গেছে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বাইরে।
২০২৫ সালে দিনাজপুরের একটি নিরাময় কেন্দ্রে দেখা মেলে নামের ১০-১১ বছর বয়সী আরেক শিশুর। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলা শহরের পূর্ব দিকের উপজেলা চিড়ির বন্দরে। এটি তার দ্বিতীয়বার নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া। চিড়ির বন্দরের ওই অঞ্চলে একাধিক নামকরা আবাসিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই ছেলেটি ছিল তার একজন ছাত্র। সে কোনো রকমে চতুর্থ শ্রেণি পেরিয়েছিল, কিন্তু বারবার স্কুল থেকে পালিয়ে যেত এবং অপেক্ষাকৃত বড়দের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠেছিল। একপর্যায়ে সে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে।
চার মাস চিকিৎসার পর তাকে আবার দিনাজপুর শহরের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়, কিন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে পাশ করতে পারেনি। পুনরায় আসক্ত হয়ে পড়ার কারণে তার লেখাপড়া মোটেই মাথায় ঢোকেনি, যদিও দুষ্টুমি করার কৌশলগুলো সে সুচারুভাবে আয়ত্ত করেছিল। গত তিন মাস ধরে সে দিনাজপুরের একই নিরাময় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। শিশুটির নিম্ন আয়ের বাবা ভীত হয়ে উঠেছেন তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে।
দুই বছর আগেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, মাদকের কারণে বছরে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়। দেশের ফৌজদারী আদালতগুলোতে মাদক সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কারাগারে আটক বন্দীর সিংহভাগই মাদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। কিন্তু সাজা প্রাপ্তির হার অত্যন্ত কম।
এই দ্রুত বর্ধমান মাদকাসক্তির পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে বা রয়েছে। তবে কোনো কারণই মাদকাসক্তির পক্ষে গ্রহণযোগ্য যুক্তি হতে পারে না। কারণ, মাদক গ্রহণ কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টির জন্মদাতা হলো মাদক।
২৬ জুন পালন করা হয় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘The evidence is clear: invest in prevention, Break the cycle. #Stop organised crime’। এই প্রতিপাদ্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মাদক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধের পথ।